এবড়োখেবড়ো: খিদিরপুরে ট্রামলাইনের বেহাল দশা। ছবি: রণজিৎ নন্দী
কোথাও বেশ কয়েক বছর ধরে ট্রাম চলে না, তবু অব্যবহৃত ট্রামলাইন জেগে থাকে ‘মৃত্যুফাঁদ’ হয়ে। কোথাও পড়ে থাকা ট্রামলাইনের দোসর হয়ে ওঠে সংস্কার না হওয়া রাস্তার গর্ত! একাধিক জায়গায় আবার পিচের ম্যাস্টিক উঠে গিয়ে এমন অবস্থা হয় যে, অন্ধকারে বোঝার উপায় থাকে না, লাইন কোন দিকে আর রাস্তা কোন দিকে! অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে শহরের রাস্তায় অব্যবহৃত ট্রামলাইনের এই বিপদ কাটে না। কখনও মোটরবাইক অথবা সাইকেলের চাকা পিছলে পড়ে চালক বা আরোহীর কোমর ভাঙে, কখনও বেঘোরে প্রাণ যায়।
শুক্রবারই যেমন মানিকতলা মেন রোডে মৃত্যু হয়েছে সুমন রানা (২৯) নামে এক বাইকচালকের। ওই বাইকের অপর আরোহী এক তরুণী ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সুমন একটি অ্যাপ-বাইক চালাচ্ছিলেন। মানিকতলা মোড়ের দিক থেকে কাঁকুড়গাছি যাওয়ার পথে বাগমারি সেতুর উপরে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে বাইকের চাকা ট্রামলাইনে পড়ে পিছলে যায়। সুমন ও তাঁর সহযাত্রী রাস্তায় ছিটকে পড়েন। সেই সময়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি
জেসিবি-র পিছনের চাকা সুমনকে পিষে দেয়। ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শনিবার বাগমারি সেতুর উপরে বাইক দুর্ঘটনায় পড়েন আর এক মোটরবাইকের দুই সওয়ারি। ওই বাইকটির চাকাও ট্রামলাইনে পড়ে পিছলে যায়। তাঁদের আঘাত গুরুতর না হলেও শুক্রবারের মতো এ দিনও ট্রামলাইন তুলে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় লোকজন।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, এ দু’টি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, গত কয়েক বছরে অব্যবহৃত ট্রামলাইনে চাকা পড়ে এমন একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ মাসে এমন ১৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মানুষ। আহতের সংখ্যা বহু। ৩২টি এমন ঘটনা রয়েছে, যেখানে গুরুতর জখম হয়ে মোটরবাইক বা সাইকেল-আরোহীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এমনই এক জনের কথায়, ‘‘ট্রামলাইনের উপরে যথেষ্ট সাবধানেই চালাই। স্কুটার নিয়ে এক দিন বাড়ির দিকে ফিরছিলাম। গতি খুব কম ছিল। কিন্তু ওই অবস্থাতেই পিছলে ট্রামলাইনের উপরে পড়ি। বাঁ হাতের হাড় ভেঙে যায়। ভিতরে প্লেট বসাতে হয়। আমি একটি হোটেলে সাঁতার শেখানোর কাজ করি। ‘লাইফ সেভার’ হয়েও ভাল চাকরি জোটেনি। এখন ওই দুর্ঘটনার পরে চিকিৎসক বলে দিয়েছেন, আমি আর কখনও সাঁতার কাটতে পারব না।’’ গাড়িচালকদের অভিযোগ, শুধু মোটরবাইক নয়, লাইনের উপরে চাকা থাকাকালীন জোরে ব্রেক কষলে গাড়িও অনেক সময়ে থামে না। গাড়ির চাকা লাইনের মসৃণ অংশে থাকায় অনেকটা পিছলে যায়।
কিন্তু এই বিপদের পাকাপাকি সমাধান হয় না কেন? কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছরের অগস্টে এমন অব্যবহৃত ট্রামলাইন তুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে পরিবহণ দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বেলগাছিয়া সেতু, আর জি কর রোড, ক্যানাল ওয়েস্ট রোড, অরবিন্দ সরণি, বিধান সরণি, রবীন্দ্র সরণি, গ্যালিফ স্ট্রিট, এ পি সি রোড, এ জে সি বসু রোড, শিয়ালদহ উড়ালপুল, এম জি রোড, এ পি সি রায় রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, লেনিন সরণি, ডায়মন্ড হারবার রোড, জাজেস কোর্ট রোড, সেন্ট্রাল গার্ডেনরিচ রোড, কংগ্রেস এক্সিবিশন রোড, উল্টোডাঙা-মানিকতলা মেন রোড-সহ ২৪টি রাস্তার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে কোন রাস্তা থেকে কী কারণে পুরনো ট্রামলাইন তুলে দেওয়া প্রয়োজন, তা-ও জানানো হয়েছে। ওই তালিকায় থাকা কিছু জায়গায় কাজ হলেও বেশির ভাগই এখনও আগের অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে জানতে পরিবহণ দফতরে বার বার যোগাযোগ করা হলেও কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম শুধু বলেছেন, ‘‘কয়েক দিনের মধ্যেই সব হয়ে যাবে।’’ কিন্তু এতগুলি দুর্ঘটনার পরেও এত দিনে কেন হয়নি, সে প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মেলেনি কারও কাছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy