দেবাঞ্জন দেব
গত ছ’দিন ধরে জমতে থাকা জঞ্জালের দুর্গন্ধে বাড়িতে টেকা দায়। কিন্তু বাড়ির দরজা-জানলা খোলার উপায় নেই। সর্বক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে প্রতিবেশীদের রোষের মুখে পড়ার আতঙ্ক। আর সেই ভয়ে বাজার যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ ক’দিন ধরে। বন্ধ জরুরি ওষুধ আনতে যাওয়াও।
ভুয়ো প্রতিষেধক-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের পরিবারের, অর্থাৎ আনন্দপুরের হোসেনপুর এলাকার ২১৮ নম্বর বাড়ির বাসিন্দাদের এখন দিন কাটছে এমন ভাবেই। পাড়ায় কার্যত ‘একঘরে’ হয়ে। এর মধ্যে এক দুপুরে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, তিনতলা ওই বাড়িটির পুরোটাই সিসি ক্যামেরায় ঘেরা। দেওয়ালে ঝুলছে বাড়ির সদস্যদের নাম। বাড়ির একমাত্র ছেলে দেবাঞ্জন প্রতিষেধক-দুর্নীতির দায়ে জেলে যাওয়ার পরে এখন ওই বাড়িতে রয়েছেন দেবাঞ্জনের বাবা মনোরঞ্জন দেব, তাঁর স্ত্রী বন্দনা দেব, তাঁদের বছর পঁচিশের মেয়ে দেবস্মিতা ও একটি গ্রেট ডেন কুকুর। গত কয়েক দিনে এঁদের কাউকেই বাড়ির বাইরে বেরোতে দেখা যায়নি বলে দাবি প্রতিবেশীদের। অত্যুৎসাহীদের কেউ কেউ ওই বাড়ির দরজায় গিয়ে দাঁড়ালেও স্রেফ কুকুরের আগ্রাসী চিৎকারটুকুই শুনতে পেয়েছেন।
কেমন আছেন তাঁরা? দেবাঞ্জনের মা, মধ্যবয়সি বন্দনাদেবী বলছেন, ‘‘ছেলে ঠিক কী করেছে জানি না। কিন্তু ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে দেখছি, সকলেরই নজর আমাদের বাড়ির দিকে। বাড়ি থেকে যে বেরোব, তারও উপায় নেই।’’ তিনি আরও জানালেন, দেবাঞ্জন গ্রেফতার হওয়ার পরে কসবা থানা থেকে তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এ ছাড়া শুধু ছেলের হাজিরার দিন আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে যখনই বাড়ির বাইরে পা দিয়েছেন, পড়শিদের বিদ্রূপ শুনতে হয়েছে। এক দিকে তাঁদের ছেলেকে নিয়ে উৎসাহী জনতার প্রশ্ন, অন্য দিকে পাড়াছাড়া করা হতে পারে বলে হুমকি। বন্দনাদেবী বলেন, ‘‘ছেলেকে যে দিন ধরে নিয়ে গেল, তার পরের দিনও বাড়ির পরিচারিকারা কাজে এসেছিল। কিন্তু তার পর থেকে আর তাদেরও দেখা নেই। হয়তো ওরা আসতে চাইছিল, কিন্তু পারিপার্শ্বিক চাপে পিছিয়ে গিয়েছে। বাড়িতে যেটুকু চাল-ডাল ছিল, গত কয়েক দিন সেই দিয়েই চলেছে। এর পর থেকে যে কী হবে, জানি না।’’
দেবাঞ্জন গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বিছানা নিয়েছেন তার বাবা, এক্সাইজ় ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার মনোরঞ্জনবাবু। রক্তচাপ এবং ডায়াবিটিসের সমস্যায় ভোগা ওই প্রৌঢ় এখন কথা বলার মতো অবস্থাতেও নেই। গত কয়েক দিনে তাঁর জন্য জরুরি ওষুধটুকু কিনতেও বাড়ির বাইরে বেরোনো যায়নি বলে দাবি ওই পরিবারের। অভিযোগ, বার বার ডাকলেও তাঁকে দেখতে বাড়িতে আসেননি এলাকার কোনও চিকিৎসক। দেবাঞ্জনের বোন দেবস্মিতা বলছেন, ‘‘নিজের চেষ্টায় তিন বার পরীক্ষা দিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পেয়েছি। এ সবের জন্য যদি সেই চাকরি হারাতে হয়, তা হলে কী করব জানি না। দাদার জন্য যতটা না খারাপ লাগছে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি খারাপ লাগছে পরিবারের এখনকার এই অবস্থার জন্য।’’
দেবাঞ্জনের পারিবারিক আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ‘‘কোর্টে আইনের লড়াই চলবে, কিন্তু তার মধ্যে আদালতের বাইরে এমন পরিস্থিতি যে কতটা মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তা এঁদের দেখেই বোঝা যায়। এঁদের নিজেদের মতো করে বাঁচতে দেওয়া হোক।’’
আর দেবস্মিতার প্রশ্ন, ‘‘দাদার দোষের বিচার করবে আদালত। কিন্তু আমাদের কোন দোষে এমন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy