প্রতীকি ছবি
এক জন পুরুষ হয়তো কোনও কারণে খুব দুঃখ পেলেন। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে তা প্রকাশ করতে পারলেন না তিনি। কারণ, ছোট থেকেই তাঁকে শেখানো হয়েছে, পুরুষ কখনও কাঁদে না। এর পরে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর উপরে শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে সেই যন্ত্রণার প্রকাশ ঘটালেন তিনি। এই গোটা ঘটনাক্রমে ওই ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী-ই আসলে হেরে গেলেন। নড়বড়ে হয়ে গেল তাঁদের সম্পর্কের ভিত। তাঁদের সঙ্গে কোথাও যেন হেরে গেল সমাজও। আর জিতে গেল যুগ যুগ ধরে চলে আসা কিছু ধারণা, যা নিয়ে আমরা প্রশ্ন করি না— বলছিলেন মালদহে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কাজ করা অসীম আক্রম।
পুরুষত্বের সংজ্ঞা আসলে কী, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তার মাধ্যমে পিতৃতান্ত্রিক ধ্যানধারণাকে প্রশ্ন করা— বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন
করেছিল শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতি বছরই ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী ও শিশুকন্যা নির্যাতনের বিরুদ্ধে চলে আন্তর্জাতিক প্রচার। ১৬ দিন ব্যাপী সেই প্রচারের সূচনায় বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, বাচিক শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী রাহুল গোস্বামী ও অসীম আক্রম।
সভার শুরুতেই সূত্রধর নীলাদ্রি প্রশ্ন তোলেন, নারী-পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য করা হয়, তার গোড়ায় কী আছে? শিশুকন্যা ও শিশুপুত্রকে আলাদা খেলনা দেওয়া থেকে শুরু করে আচরণগত বিধিনিষেধ— বক্তাদের কথায় উঠে আসে সামাজিক নির্মাণের কথাই। ছোট থেকে তৈরি হওয়া যে সব ধারণা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রয়ে যায় আজীবন। গল্প-সিনেমার মাধ্যমেও এই সব ধারণা কী ভাবে আরও প্রচার পায়, সে কথা তুলে আনেন সুজয়প্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘আসলে আইনে রদবদল করার চেয়েও আগে দরকার মানসিকতায় বদল।’’
কী ভাবে জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে পিতৃতান্ত্রিক ভাবনা, কী ভাবে নিজেরাও অজান্তেই বয়ে চলেন সেই সব ধারণা, শুধু ‘পুরুষ’ হওয়ার সুবিধা নিয়ে চলেন কী ভাবে, কখন নিজেদের ভাবনার ভুলটা বুঝতে পারলেন— বক্তারা নানা দিকে থেকে কাটাছেঁড়া করেন একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই। রাহুল জানান, শুধু পুরুষ হওয়ার সুবাদেই কী ভাবে প্রাপ্য বলে ধরে নিতেন অনেক কিছু। নিজের ভুল স্বীকার করা বা দুঃখপ্রকাশ করতে শেখার মাধ্যমে কী ভাবে দৃঢ় হয়েছে সম্পর্কের বাঁধন। তিনি বলেন, ‘‘দশ বছর আগে এই সংস্থায় কাজ করতে এসেছিলাম পুরুষমানুষ হিসাবে। আজ আমি শুধুই মানুষ।’’
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বয়ম’-এর কর্ণধার অনুরাধা কপূর জানাচ্ছেন, প্রচারে পুরুষদের আহ্বান করা হচ্ছে, তাঁরা যাতে নিজেদের আচরণ বিশ্লেষণ করেন এবং বদল আনেন দৃষ্টিভঙ্গিতে ও ভাষায়। তাতেই কমবে মহিলাদের উপরে নির্যাতন। পুরুষেরা ভাবনায় বদল আনলে কী ভাবে সমানাধিকারের পথ প্রশস্ত হয়— তা নিয়ে দেখানো হয় দু’টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিও।
বক্তাদের পাশাপাশি এ দিন শ্রোতাদের মধ্যে থেকেও উঠে আসে নানা অভিজ্ঞতার কথা। উপস্থিত পুরুষেরা সভার শেষে একসঙ্গে শপথ নেন, লিঙ্গ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবেন, ভবিষ্যতেও এ নিয়ে কাজ করবেন। তাঁদের শপথের সঙ্গে মিলে যায় এ বছরের প্রচারের থিম— ‘আপনি বদলান, পৃথিবী বদলাবে’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy