Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Driving Licence

শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের পরীক্ষার দিন পেতেও দরাদরি

মুহূর্তে হাল্কা হয়ে গেল ভিড়টা। কিছু পরে ওই যুবকদেরই এক জনকে জিজ্ঞাসা করা হল, লার্নার লাইসেন্সের পরীক্ষা দেওয়ার দিন মিলছে না। কী করণীয়?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৫০
Share: Save:

সম্প্রতি এক লকডাউনের দিন সকাল থেকে ভিড় সল্টলেকে পাবলিক ভেহিক্‌লস ডিপার্টমেন্টের (পিভিডি) অফিসে। লার্নার লাইসেন্সের ৬০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে লকডাউন জেনেও চলে এসেছেন ১৫ জন। কিন্তু পরীক্ষা নেওয়া হবে না জানিয়ে দেওয়ার পরেই চিৎকার শুরু করলেন তাঁরা। এমন সময়ে ওই ভিড়ে চার-পাঁচ জন যুবক ঢুকে তাঁদের বললেন, ‘‘এ ভাবে লাইসেন্স হবে না। কিছু খরচ করতে হবে। নয়তো করোনা মিটলে আসবেন।’’

মুহূর্তে হাল্কা হয়ে গেল ভিড়টা। কিছু পরে ওই যুবকদেরই এক জনকে জিজ্ঞাসা করা হল, লার্নার লাইসেন্সের পরীক্ষা দেওয়ার দিন মিলছে না। কী করণীয়? নিজেকে এআরটিও (অ্যাসিস্ট্যান্ট রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিস)-র দালাল পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘২৪০ টাকা দিয়ে ফর্ম ভরেছেন তো? অত কমে কি লাইসেন্স হয়? এখন করোনার জন্য প্রতিদিন মাত্র ৬০ জনের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। কয়েক হাজার আবেদনকারীর মধ্যে ৬০ জনকে আমরাই করিয়ে দিচ্ছি। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে করাতে হলে পাঁচ হাজার দিতে হবে।’’ এত কেন? উত্তর এল, ‘‘অনেক বেশি মনে হচ্ছে? তা হলে এত দিন যেমন অপেক্ষা করছিলেন, তেমনই বসে থাকুন!’’

করোনা অতিমারির পরিস্থিতিতে লার্নার লাইসেন্স করাতে গেলে এমনই দালাল-চক্রের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। কোনও আরটিও (রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিস) বা এআরটিও-তেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সাধারণ ভাবে দিন পাওয়া যাচ্ছে না। দিন পেতে সংশ্লিষ্ট অফিসে গেলে দালালেরা কারও থেকে পাঁচ হাজার, কারও থেকে আট বা দশ হাজার টাকা চাইছেন বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, পরীক্ষা দিতে হবে না। এমনিই লাইসেন্স চলে আসবে।

যদিও নিয়মানুযায়ী ২৪০ টাকা দিয়ে সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করলেই লার্নার লাইসেন্স পাওয়া যায়। আবেদনকারীর নাম-ঠিকানা জানানোর পরে প্রামাণ্য নথি আপলোড করতে হয়। এর পরে আবেদনকারীর ছবি এবং একটি ‘সেল্ফ ডিক্লারেশন’ ফর্ম আপলোড করার পরে আসে পরীক্ষার দিন বা ‘স্লট’ পাওয়ার জায়গা। দিন পাওয়া হয়ে গেলে অনলাইনেই ২৪০ টাকা জমা দিয়ে নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা দিতে যেতে হয়। কিন্তু ভুক্তভোগীদের দাবি, টাকা দেওয়ার কয়েক মাস পরেও পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, এক মাসের মধ্যে কোনও দিন নেই।

শ্যামবাজারের এক বাসিন্দা অভিজিৎ দত্তের অভিযোগ, ‘‘দু’মাস অপেক্ষা করেও স্লট না পেয়ে দালালকে ধরেছিলাম। তিনি চার হাজার টাকা নিয়েও পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেননি।’’ বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির বাসিন্দা সুরেশ বর্ধনের আবার দাবি, ‘‘বহু দিন ঘুরেও পরীক্ষার দিন না পেয়ে এখন এমনিই বাইক নিয়ে বেরোচ্ছি। করোনার ভয়ে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে নিরাপদে যাব বলে বাইক কিনেছিলাম। পরীক্ষা হবে না বলে তো বাইকটা ফেলে রাখতে পারি না!’’

কিন্তু বিনা লাইসেন্সে এ ভাবে বেরোনো তো অপরাধ? বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও আতান্তরে বলে জানালেন শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ডের এক আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘‘মানবিকতার খাতিরে কিছু ক্ষেত্রে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই ভাবে কেউ বেরিয়ে বিপদ ঘটালে ট্র্যাফিক পুলিশের যে বিট থেকে চালককে ছাড়া হয়েছে, সেখানকার অফিসারদের জবাব দিতে হয়।’’

তা হলে এ ভাবে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ? দালাল-চক্রের অভিযোগ নিয়েই বা কী হবে? কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘লাইসেন্স না-থাকলে কোনও চালককেই ছাড়ার নির্দেশ নেই। কোনও পুলিশকর্মী এমন করে থাকলে নিজের দায়িত্বে করবেন। আর আরটিও-র দালাল-চক্রের বিষয়টি দেখার কথা পরিবহণ দফতরের।’’

দালাল-দৌরাত্ম্যের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেলতলা আরটিও-র লাইসেন্স অথরিটি তাপস পোদ্দার বলেন, ‘‘কেউ লাইসেন্স করিয়ে দেওয়ার নামে টাকা নিচ্ছেন বলে শুনিনি। তবে দূরত্ব-বিধি বজায় রাখতে এখন কম পরীক্ষার্থীকে ডাকা হচ্ছে। তাই স্লট পেতে একটু সমস্যা হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে হয়তো পাওয়া যাবে না, কিন্তু ঘড়ি ধরে সকাল আটটায় চেষ্টা করলে পাওয়া যেতেও পারে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE