Advertisement
E-Paper

রোগীর কাছে সাহায্য কোন পথে, চিন্তিত স্বেচ্ছাসেবকেরা

সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোভিড কিচেন এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা কী ভাবে সাহায্যের জন্য পৌঁছবেন, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। ফলে পরোক্ষে হয়রানির মুখে পড়তে চলেছে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের পরিবার।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২১ ০৬:১৮
Share
Save

সংক্রমণ রুখতে ১৫ দিনের জন্য রাজ্যে আরও কড়া বিধিনিষেধ বলবৎ হচ্ছে আজ, রবিবার থেকে। যার জেরে চরম সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কায় কোভিড আক্রান্ত পরিবারগুলি। কারণ, নিষেধাজ্ঞার জেরে বন্ধ হতে চলেছে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সমস্ত ধরনের পরিবহণ মাধ্যম। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোভিড কিচেন এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা কী ভাবে সাহায্যের জন্য পৌঁছবেন, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। ফলে পরোক্ষে হয়রানির মুখে পড়তে চলেছে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের পরিবার।

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে শহর ও শহরতলিতে নাগরিকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু ‘কোভিড কিচেন’ চালু হয়েছে। এর পাশাপাশি কোভিড রোগীর কাছে ওষুধ, অক্সিজেন, মাস্ক, ফ্লো মিটার, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, এমনকি মুদিখানার জিনিস পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে রক্তদান, প্লাজ়মা বা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর মতো নানা কাজে অক্লান্ত ভাবে সাহায্য করে চলেছেন স্বেচ্ছাসেবক এবং রেড ভলান্টিয়ার্সেরা। কিন্তু যানবাহনের অভাবে এ বার সেই কাজে বাধা পড়তে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জিনিস পৌঁছনোয় এবং জরুরি পরিষেবায় ছাড় পাবে ট্যাক্সি ও অটো— এমনটাই জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে।

দীর্ঘদিন ধরে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত দেবাঞ্জলি ভট্টাচার্য গত সপ্তাহেই কোভিডে হারিয়েছেন পিসিমা এবং কাকিমাকে। তিনি শনিবার বলেন, ‘‘এ দিনের নির্দেশে রক্তদান শিবির নিয়ে কোনও স্পষ্ট বার্তা নেই। কিন্ত আমরা এটাকে জরুরি পরিষেবা বলেই ধরছি। রক্তদান শিবির নিয়ে প্রশাসন কোনও ভাবেই বাধা দিতে পারে না। যেখানে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্তের আকাল চলছে, সেখানে এই পরিস্থিতিতে রক্তদান শিবির বন্ধ করা সম্ভব নয়। রক্তদাতাদের অনুরোধ, এই পরিস্থিতিতে রক্ত দিতে আসার পথে বাধা পেলে প্রতিরোধ করুন।’’ দেবাঞ্জলি আরও জানাচ্ছেন, দূরে থাকা রক্তদাতারা এই পরিস্থিতিতে শিবিরে পৌঁছতে সমস্যায় পড়বেন। হাসপাতালে বা ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিতেও আসতে পারবেন না অনেকে। ফলে কী ভাবে রক্তদানকে জরুরি পরিষেবা হিসেবে দেখিয়ে পথে বেরনো সম্ভব, তা নিয়ে সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা চলছে।

গণ পরিবহণ বন্ধ রাখার নির্দেশে যাতায়াত নিয়েও সমস্যায় পড়তে চলেছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। ‘কোভিড কিচেন’ চালানো বা স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে সাহায্য করা স্বেচ্ছাসেবকদের অনেকেরই ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। আবার

অনেকে স্ব-উদ্যোগে কাজ করছেন। ফলে জরুরি পরিষেবা দিতে প্রশাসনিক অনুমতি পেতেও বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। বিভিন্ন অ্যাপ-ক্যাব পরিষেবার মাধ্যমে অক্সিজেন মাস্ক, ওষুধের মতো জরুরি জিনিস অন্যত্র পাঠানোর কাজও গতি হারাতে পারে বলে আশঙ্কা। জরুরি পরিষেবার আওতায় এনে এর জন্য অনুমতি জোগাড় করা নিয়েও রয়েছে ধন্দ। যদিও এ নিয়ে প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, যাঁরা এই সামাজিক কাজ করছেন, তাঁরা প্রকারান্তরে সরকারেরই সুবিধা করছেন। ফলে তাঁদের গতিবিধির সুবিধার দিকটাও বিশেষ ভাবে বিবেচনা করা হতে পারে।

শ্যামবাজারের বাসিন্দা, থিয়েটার-কর্মী শ্রাবস্তী ঘোষ যেমন গত এপ্রিল থেকে কোভিড আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি দু’বেলা খাবার পাঠাচ্ছেন। মায়ের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে রান্না থেকে বাজার করা— সবটাই করছেন নিজে। আর বাইকে করে সেই খাবার পৌঁছে দিচ্ছিলেন তাঁর তিন বন্ধু। এ দিন নতুন কড়াকড়ির ঘোষণা শুনেই শ্রাবস্তী ছুটলেন আনাজ কিনতে। খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন তাঁর যে তিন বন্ধু, তাঁদের জন্য স্থানীয় থানায় অনুমতির দরখাস্তের জন্যেও ছুটতে হচ্ছে তাঁকে। শ্রাবস্তীর কথায়, ‘‘বাবাকে বাজারে পাঠাই না। কিন্তু এখন বাড়ির সামনে এত আনাজ-মাছ-মাংস পাব কি? ৪৪ জন কোভিড রোগীকে দু’বেলা খাবার পাঠাই। দুম করে সেটা বন্ধ হলে গেলে তো তাঁরাও বিপদে পড়বেন! ওঁরা কি না খেয়ে থাকবেন? কিন্তু কাল থেকে কী ভাবে খাবার পৌঁছব, জানি না।’’

ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোভিড রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করানো থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার মতো কাজ করছেন অনুষ্টুপ রায়। এ দিন দুপুরেও এ শহরে একা থাকা, কোভিড আক্রান্ত এক মহিলাকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান তিনি। এ দিনের ঘোষণার পরে অনুষ্টুপ বলছেন, ‘‘শুনছি জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে। তবে আজকের মতো জরুরি পরিস্থিতি হলে কখন কার থেকে অনুমতি আনতে যাব?’’

প্রশ্নটা অনেকেরই। ‘‘মরণাপন্ন কোভিড রোগীকে সাহায্য করব, না কি প্রশাসনের অনুমতি নিতে ছুটব?’’— এর উত্তর এখনও অজানা।

COVID-19 Volunteers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}