রাত বেড়েছে। ছবি: রিঙ্কি মজুমদার।
রাত বাড়ছে। ঘুম নেই আন্দলোনকারীদের চোখে। স্লোগান উঠল, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন গানবাজনা শুরু করলেন। সঙ্গে রয়েছে কলকাতা পুলিশের কমিশনের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরানোর দাবি এবং স্লোগানও।
রাত ২টো। ঘুম নেই কারও চোখে। লালবাজারের সামনে ফিয়ার্স লেনে এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রামের মাঝেই চলছে আন্দোলন।
রাত গড়িয়েছে। অবস্থানে বসে খাওয়া-দাওয়ার পর, সেখানেই বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছেন আন্দোলনকারীরা। ত্রিপল, বড় প্লাস্টিক ইত্যাদি কিনে এনে রাস্তায় পেতে শুয়ে পড়লেন চিকিৎসকেরা।
মধ্যরাত অতিক্রান্ত। তবু লালবাজারের সামনে অবস্থানে অনড় চিকিৎসকেরা। নির্ঘুম রাত জাগছেন তাঁরা।
আন্দোলনকারীদের অবস্থানে পৌঁছেছেন অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল, দেবলীনা দত্ত এবং সুদীপ্তা চক্রবর্তী।
চিকিৎসকেরা তাঁদের দাবিতে অনড়। সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারিতে তাঁরা খুশি। তবে সেটাকে ‘নৈতিক জয়’ হিসাবেই ধরছেন। আসল দাবি, কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ।
আন্দোলনকারীদের অবস্থানে পৌঁছেছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে তাঁর আসায় অখুশি চিকিৎসকেরা। আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক নেতাদের চান না তাঁরা। স্লোগান উঠেছে ‘গো ব্যাক’।
ঘড়ির কাঁটা রাত ১০টা ৪০ মিনিট ছুঁয়েছে। এখনও একই ভাবে অবস্থানে বসে রয়েছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। এখনও বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকবেন তাঁরা। এত ক্ষণ কেটে গেলেও এতটুকু উৎসাহ কমেনি আন্দোলনকারীদের। রাস্তায় বসেই স্লোগান তুলছেন তাঁরা।
এর মধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সোমবার রাতে তাঁকে নিজাম প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সন্দীপের গ্রেফতারির খবরে খুশির ঢল অবস্থান স্থলে। আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘সন্দীপের গ্রেফতারি আন্দোলনের নৈতিক জয়।’’ তবে এখনই আন্দোলন থামাচ্ছেন না জুনিয়র চিকিৎসকেরা। আন্দোলনকারী এক চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বললেন, ‘‘সকল আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের কুর্নিশ। তবে সন্দীপ গ্রেফতার হলেও আন্দোলন চলবে।’’
আরও এক বার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে এলেন পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার (ট্রাফিক) রূপেশ কুমার। আবারও প্রস্তাব দিলেন, আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা লালবাজারে গিয়ে কথা বলুন। কোনও পরিস্থিতিতেই মিছিল এগোতে দেওয়া যাবে না। তবু আন্দোলনকারীরা এখনও দাবি থেকে নড়তে নারাজ। তাঁরা বারবার বলছেন, ‘‘আপনাদের সিপি স্যারকে নিয়ে আসুন। ব্যারিকেডের বাইরে থেকেই কথা বলব আমরা।’’
ছাত্রদের মতোই নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় পুলিশও। এখনও পর্যন্ত মানা হয়নি আন্দোলনকারীদের দাবি। ব্যারিকেডের ওপারে বসে পড়েছেন পুলিশ কর্তারা।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বললেন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার অশেষ বিশ্বাস। বললেন, ‘‘লালবাজারে এসে কথা বলুন।’’ কিন্তু বিনীতের ইস্তফার দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, যত দূর মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তত পর্যন্তই যেতে দিতে হবে মিছিল। নয়তো আসতে হবে স্বয়ং কমিশনারকে। তাঁরা সাফ বলে দিলেন, ‘‘৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করে আমরা অভ্যস্ত। রাত জাগতে সমস্যা নেই! যত ক্ষণ না ওঁরা দাবি মানছেন, এক পা-ও নড়ব না এখান থেকে।’’
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল, তবু রাস্তা ছেড়ে নড়লেন না আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সে ভাবেই বসে থাকবেন তাঁরা। জানালেন, প্রয়োজনে অবস্থান চলবে সারা রাত।
এখনও রাস্তা বন্ধ। তবে দমছেন না আন্দোলনকারীরা। মাইকে বাজানো হচ্ছে গান। নতুন উদ্যমে চলছে রাস্তা লিখন। সাদা, হলুদ, লাল, কালো কালিতে স্লোগান লিখে রাস্তা ভরাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।
এ প্রসঙ্গে ডিসি ট্রাফিক রূপেশ কুমার বলেন ‘‘এই এলাকায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি রয়েছে। তা ছাড়া এমনিতেও অতীতে সব মিছিল বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটেই আটকানো হত।’’ এই বক্তব্যে আরও ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি কিঞ্জল নন্দ অবস্থানরত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘বন্ধুরা, সিপি যত ক্ষণ না আসছেন কিংবা পদত্যাগ করছেন, আমরা এখান থেকে এক পা-ও নড়ব না।’’ কিঞ্জল সংবাদমাধ্যমকে জানাচ্ছেন, আগে পুলিশ জানিয়েছিল বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট এবং বিবি গাঙ্গুলি ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল যেতে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন বেঁকে বসেছে পুলিশ। আরও অনেক আগেই মিছিল আটকে দিয়ে বলা হচ্ছে, ২০ জনের প্রতিনিধি দল পাঠান। এই নয়া দাবি মানবেন না চিকিৎসকেরা। যত ক্ষণ না সিপি এসে পৌঁছচ্ছেন, অবস্থান আন্দোলন চলবে।
ছাত্রছাত্রীরা বসেছেন অবস্থানে। এর মাঝেই পুলিশ জানিয়ে দিল, আর এগোতে দেওয়া হবে না মিছিল। ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আজ পর্যন্ত যত মিছিল হয়েছে, সব ফিয়ার্স লেনেই আটকানো হয়। এটাই নিয়ম। আজও মিছিল এগোতে দেওয়া হবে না। ওঁরা যদি শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতে চান, করুন।’’ কেবলমাত্র জুনিয়র চিকিৎসকদের ২০ জনের প্রতিনিধি দলকেই ভিতরে যেতে দেওয়া হবে। তবে মানছেন না আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, মিছিল এগোতে দিতে হবে, নয়তো সিপি না আসা পর্যন্ত অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন রুখতে লালবাজারের সামনে বসেছে ভারী, চওড়া ব্যরিকেড। সে ব্যারিকেড ভেঙে এগোনো প্রায় দুঃসাধ্যই। ‘নবান্ন অভিযান’ থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার এমন অভিনব প্রস্তুতি পুলিশের।
আন্দোলনকারীদের রুখতে টিয়ার গ্যাসের সেল নিয়ে তৈরি পুলিশ। ব্যারিকেডের সামনে অতন্দ্র প্রহরা।
লালবাজারের আগেই আটকে দেওয়া হয়েছে মিছিল। বন্ধ রাস্তা। তাই সেখানেই পুলিশ কমিশনারের কুশপুতুল পোড়ালেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy