প্রতীকী থবি।
বেজিংয়ের তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার। সেখানকার ‘দ্য গ্রেট হল অব দ্য পিপ্ল’-এ এক সম্মেলনে হাজির বিশ্বের তাবড় চিকিৎসকেরা। ওই সম্মেলনে প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছিল এক বার ব্যবহার করার মতো জুতো। কারণ সমাধিস্থলে সম্মান প্রদর্শন যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি পায়ের স্বাস্থ্য। তাই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এমন নিদান। ওই দলে থাকা বাঙালি চিকিৎসকের তাজমহল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অবশ্য ভিন্ন। সেখানে তাঁকে খালি পায়ে ঢুকতে হলেও বিদেশি পর্যটকেরা পেয়েছিলেন বিশেষ জুতো। বলা হয়েছিল, এই ব্যবস্থা শুধু তাঁদেরই জন্য। দু’দেশের এই দুই চিত্রই বুঝিয়ে দেয়, সচেতনতার তফাত এখনও কোন স্তরে।
এই তফাতের কারণে ভারতে বেড়ে চলেছে ‘ডায়াবেটিক ফুট’-এর সমস্যা। অথচ যাঁরা ডায়াবিটিসে আক্রান্ত, তাঁরা সর্বত্র শুধু জুতো পরে এই সমস্যা ঠেকাতে পারেন। তা না করায় অনেক ক্ষেত্রে রোগীর পা বাদ দিতে হয়। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, রোগের উৎস ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি। এতে পায়ের সাড় চলে যাওয়ায় আঘাত বা ক্ষত বোঝা যায় না। এসএসকেএমের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রফেসর সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পায়ের নীচে সিন্থেটিক ফাইবার মনোফিলামেন্ট (চুলের মতো সূক্ষ্ম) দিয়ে দেখতে হবে, অনুভূতি কতটা রয়েছে। বাজারে এটি পাওয়া যায় মাত্র ১০ টাকায়। ডায়াবিটিস আক্রান্তদের পায়ের তলা ঢাকা চপ্পল বাড়িতেও পরে থাকতে হবে। অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম জলে পায়ের সেঁক নয়। সামান্য চোট-আঘাতেও নজর রাখতে হবে।’’
১৪ নভেম্বর ইনসুলিনের দুই আবিষ্কর্তার এক জন, ফ্রেডরিক ব্যান্টিংয়ের জন্মদিন। দিনটি পালিত হয় ‘বিশ্ব ডায়াবিটিস দিবস’ হিসেবে। সচেতনতা প্রসারে চলে নানা কর্মসূচি। কিন্তু নাগরিকদের একাংশের মধ্যে এখনও যে সচেতনতার অভাব রয়েছে, তার প্রমাণ পরিসংখ্যান। ‘ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবিটিস ফেডারেশন’-এর ২০২০ সালের তথ্য বলছে, বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত ৪৬ কোটি ৩ লক্ষ। যাঁর মধ্যে ৭ কোটি ৭০ লক্ষ রোগী আছেন শুধু ভারতে। এর বাইরেও এ দেশে এমন অনেক আক্রান্ত আছেন যাঁরা তাঁদের শরীরে ডায়াবিটিসের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানেনই না। চিকিৎসকদের মতে, কোভিড পরিস্থিতিতে ওঁরাই দাঁড়িয়ে বিপদসীমায়। ফলে অন্য অসুখ (কোমর্বিডিটি) নেই বলে যাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে, তাঁদের একটি অংশের কোভিড চিকিৎসায় লাফিয়ে বাড়ছে সুগারের মাত্রা। এর মূলে একটি স্টেরয়েড। অথচ, সেটি না দিয়েও উপায় নেই — জানাচ্ছেন সতীনাথবাবু।
এসএসকেএমের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুজয় ঘোষের মতে, ‘‘বাড়িতে আটকে থেকে বাইরের কাজ কমে যাওয়ায় অনেকেরই খাওয়াদাওয়া অনিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফলে, অজানতে বাড়ছে রোগ। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে ডায়াবিটিসের স্ক্রিনিং এবং মনিটরিং। সে কারণে প্রতিদিন বাড়িতে সুগারের মাত্রা মাপা, ব্যায়াম, খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ জরুরি। যাঁদের ডায়াবিটিস নেই, তাঁদেরও বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।’’
চিকিৎসকেরা বলছেন, রোজকার জীবন যাপনে নিয়ন্ত্রণ আলগা করলেই বিপদ ঘিরে ধরবে চক্রব্যূহের মতো। চোখ, হৃদ্যন্ত্র, কিডনি, প্যানক্রিয়াস, স্নায়ু অকেজো করার পাশাপাশি এখন নতুন আতঙ্ক কোভিড। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি থেকে অন্ধত্ব পর্যন্ত আসতে পারে। এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সপ্তর্ষি মজুমদার বলছেন, ‘‘দৃষ্টি ঝাপসা লাগলে অথবা মাকড়সার জালের মতো কিছু দেখছেন মনে হলেই বুঝতে হবে রেটিনার সমস্যা। এ জন্য সরাসরি চিকিৎসকের কাছে যান।’’ ডায়াবিটিস আক্রান্তদের ক্ষেত্রে শরীরের অন্য কোথাও রোগের প্রভাব বুঝতে বছরে অন্তত এক বার চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। শহরের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখনও চলছে ডায়াবেটিক ক্লিনিক। শুধু এসএসকেএমে বৃহস্পতিবার চলে ফুট ক্লিনিক।
সুজয়বাবু জানাচ্ছেন, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে যে কোনও বয়সি কোভিড-আক্রান্ত দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন বলে একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে। তাই এই পরিস্থিতিতে সুগার নিয়ন্ত্রণ ভীষণ জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy