Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Biometric Attendance Machine

হাসপাতালে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করতে দেরি, জরিমানা কমিশনের

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের ক্ষোভ, বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর ক্ষেত্রে প্রাথমিক কী কী সমস্যা হয়েছে, কিসের জন্য দেরি হচ্ছে— সে সব কথা জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের কর্তারা শুনতে এবং বুঝতে চাননি।

—প্রতীকী চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৪ ০৮:১৮
Share: Save:

মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিকিৎসকদের বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি চালু করার ব্যাপারে দীর্ঘসূত্রতা এবং গড়িমসির খেসারত দিতে হচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে। চিকিৎসকেরা কখন হাসপাতালে ঢুকছেন এবং বেরোচ্ছেন, তার উপরে নজর রাখতেই বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করায় জোর দিয়েছিল জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন। কারণ, বহু চিকিৎসক দেরিতে আসেন বা এলেও মেডিক্যালের পড়ুয়াদের ক্লাস না নিয়ে এবং রোগী না দেখে বাড়ি চলে যান বলে অভিযোগ উঠেছিল। এতে রোগী-পরিষেবার পাশাপাশি ডাক্তারির পঠনপাঠনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল।

এই কাজে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি। রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুতে ব্যর্থ হওয়ায় শাস্তি হিসাবে তাদের বিপুল টাকা জরিমানা করেছে কমিশন (এনএমসি)। জরিমানার অঙ্ক মোটামুটি ২৪ লক্ষ থেকে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এতেই চরম বিড়ম্বনায় পড়া রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এনএমসি-কে চিঠি লিখে শাস্তি মকুবের আবেদন জানিয়েছে।

তবে, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের ক্ষোভ, বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর ক্ষেত্রে প্রাথমিক কী কী সমস্যা হয়েছে, কিসের জন্য দেরি হচ্ছে— সে সব কথা জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের কর্তারা শুনতে এবং বুঝতে চাননি। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষেরা যখন মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হওয়া ভিডিয়ো কনফারেন্সে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তখন কমিশনের কর্তারা তাঁদের কোনও যুক্তি না শুনেই জরিমানার অঙ্ক শুনিয়েছেন।

একাধিক অধ্যক্ষের অভিযোগ, তাঁরা মৃদু প্রতিবাদ করলে কমিশনের কর্তারা সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিলের হুমকিও দিয়েছেন। এক-একটি মেডিক্যাল কলেজের যুক্তি শোনার জন্য কমিশন ভিডিয়ো কনফারেন্সে মাত্র ১-২ মিনিট সময় বরাদ্দ করেছিল বলেও অভিযোগ। কী কারণে কোনও মেডিক্যাল কলেজের ২০ লক্ষ, কোনওটির ২৪ লক্ষ আবার কোনওটির পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা হচ্ছে, সেই ভাগাভাগিও কমিশন স্পষ্ট করেনি বলে অভিযোগ।

আবার এনএমসি-র মেডিক্যাল এডুকেশন বোর্ডের সভাপতি অরুণা ভানকরের দফতরের এক কর্তার দাবি, গত বছর থেকে বার বার পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরকে হাসপাতালে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করতে বলেছেন তাঁরা। একাধিক বার চিঠি দিয়ে, ফোনে, ভিডিয়ো কনফারেন্সে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন’ মারফত বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করতে অহেতুক দেরি করেছে রাজ্য সরকার। কমিশনের এক কর্তার অভিযোগ, ‘‘চিকিৎসকদের একটি লবি পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের এ ব্যাপারে প্রভাবিত করেছে। কারণ, নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবেই তাঁরা এই ব্যবস্থা চালু করতে দিতে চাইছিলেন না। কর্তারাও সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছিলেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মেডিক্যাল পড়ুয়ারা।’’

কমিশন আরও জানিয়েছে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি চালু করার বিষয়টি জানুয়ারির প্রথমেই এক বার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে মনে করানো হয়। তাতেও স্বাস্থ্য দফতর কান দেয়নি। একাধিক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষও দাবি করেছেন, ২০২২-’২৩ সাল থেকেই তাঁরা বায়োমেট্রিক যন্ত্র চালু করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে লাগাতার তাগাদা দিয়েছেন। দফতর চালু না করলে তাঁরা কী করবেন?

রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাননি। তবে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, কিছুটা দেরি হলেও চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে সব মেডিক্যাল কলেজেই বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তারা যেন সেই বিষয়টি গ্রাহ্য করে জরিমানা মকুব করে।’’ যার প্রেক্ষিতে এনএমসি-র ওই কর্তা বলেন, ‘‘বর্তমানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বেশ কিছু কলেজে চালু হলেও জরিমানা মকুবের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy