কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ শহরতলির চার পুরসভায় শাসকদলের দাপট বাড়ল। সেই সঙ্গে বিরোধীশূন্য হওয়ার নজির গড়ল বারুইপুর এবং বজবজ পুরসভা। রাজপুর-সোনারপুর এবং মহেশতলা পুরসভায় একটি করে ওয়ার্ড জিতেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। তবে চার পুরসভাতেই কার্যত ধুয়েমুছে সাফ বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ভোটের পরিমাণ বাড়িয়ে চারটি পুরসভাতেই দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামেরা। তার পরেই কাছাকাছি রয়েছে কংগ্রেস। বারুইপুর পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বিদায়ী চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানও জয়ী হয়েছেন। বিগত নির্বাচনে ওই পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র একটিতে (৪ নম্বর ওয়ার্ড) জয়ী হয় বিজেপি। বাকি সবক’টিই ছিল তৃণমূলের হাতে। বিরোধীরা প্রার্থী না দেওয়ায় বজবজে ২০টি ওয়ার্ডের ১৮টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই বোর্ড দখল করেছে তৃণমূল। ৫ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট হলেও তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। বিগত পুরভোটেও বজবজের ১৮টি ওয়ার্ডে জয়ী হয় তৃণমূল।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ৩৩টি আসনে। সিপিএম প্রার্থী অর্চনা মিত্র ১৬ নম্বর এবং নির্দল প্রার্থী শিশির ভট্টাচার্য (পল্টু) ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন। অর্চনা বলেন, ‘‘বছরভর মানুষের পাশে থাকি। ভোটের দিন মানুষ পাশে ছিলেন। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারায় জিতেছি।’’ আর তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়ানো শিশির বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শ নিয়ে চলি। যাঁদের আদর্শ নেই, তাঁদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’
এর মধ্যে সোনারপুরে সবচেয়ে বেশি (প্রায় সাড়ে ন’হাজার) ভোটের ব্যবধানে জিতলেন ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী নজরুল আলি মণ্ডল। ভোটের দিন বিরোধীদলের প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বুথে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বছরভর মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। হয়তো তা-ই এত ভালবাসা পেয়েছি।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমল গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এই ফলাফল বুথলুট এবং ছাপ্পাভোটের যোগফল। মানুষের রায় নয়।’’ বিজেপি নেতা সুনীপ দাসের মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল সমর্থক ছাড়া আর কেউ ভোট দিতেই পারেননি।’’ যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল দেখেই মানুষ ভোট দিয়েছেন। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট সব বিরোধীদের অজুহাত।’’
মহেশতলা পুরসভাতেও তৃণমূলের জয়জয়কার। ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪টিই শাসকদলের দখলে। শুধু ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১৮০০টি ভোটে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী শাহিদা খাতুন। ওই ওয়ার্ডে এ বারই প্রথম জয় পেল কংগ্রেস। তবে বিগত পুরভোটে বাম এবং কংগ্রেসের দখলে যে ১১টি ওয়ার্ড ছিল, তার সবক’টিই হাতছাড়া হয়েছে। বামেদের দখলে থাকা ৪, ১৪, ২১, ২৪, ২৫ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। কংগ্রেসের দখলে থাকা ১২, ১৩, ১৮, ২৯ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডেও জয় পেয়েছে তৃণমূল। তবে কয়েকটি ওয়ার্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। যেমন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র ৭ ভোটে বামেদের হারিয়েছে তৃণমূল। ১৮ এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে লড়াই দিয়েছে কংগ্রেস। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রভাত চৌধুরী বলেন, ‘‘বামেরাই মানুষের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে। বিরোধিতার পরিসরে তাই তাদেরই দেখা যাচ্ছে। তবে বুথদখল, ছাপ্পাভোট না হলে বিরোধীদের ফল আরও ভাল হত।’’ বিদায়ী চেয়ারম্যান দুলাল দাস বলেন, ‘‘এই জয় মুখ্যমন্ত্রীর কাজের উপরে মানুষের আস্থা। তাই অনেক নতুন ওয়ার্ডে জয় এসেছে।’’