উল্টে-পাল্টে: রাস্তার জমা জলে পড়ে গিয়েছেন এক সাইকেল আরোহী। রবিবার, ভিআইপি রোডের কাছে। ছবি: সুমন বল্লভ
শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ভারী বৃষ্টি আর হয়নি। রবিবার বেলার দিকে মেঘের ফাঁকে খানিকটা রোদও উঁকি দিয়েছে। ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় আশপাশের এলাকা থেকে জল নেমে গিয়েছে। অথচ এখনও জলমগ্ন ভিআইপি রোডের চিনার পার্ক ও কৈখালির সার্ভিস রোড। রাস্তার দু’ধারের আবাসনের বাসিন্দারা কার্যত জলবন্দি। অভিযোগ, রাস্তার এ-পার থেকে ও-পারে যেতে রিকশা হাঁকছে কখনও ৩০, কখনও ৫০ টাকা।
শুধু কৈখালি বা চিনার পার্ক নয়। ছবিটা একই সল্টলেকের বেশ কিছু এলাকাতেও। সেখানকার অধিকাংশ জায়গা থেকে জল নেমে গেলেও রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জল ছিল ডিডি ব্লক ও সুকান্তনগরের বেশ কিছু এলাকায়। নিউ টাউনের গৌরাঙ্গনগরেও এক অবস্থা। বিধাননগর পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় পাম্প চলায় জল দ্রুত নামছে। সেই সঙ্গে গঙ্গায় ভাটা শুরু হলে তা আরও দ্রুত নামতে শুরু করবে।
তবে পুরসভা এই আশ্বাস দিলেও বাসিন্দাদের প্রশ্ন, প্রতি বার কেন টানা বর্ষণে তাঁদের এ ভাবে নাকাল হতে হবে? কেন বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরেও জল নামতে এত দেরি হবে? তাঁদের আরও অভিযোগ, বেশি ক্ষণ জল জমে থাকার জন্য রাস্তাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বিমানবন্দরের এক নম্বর গেটের কাছে যেখান থেকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উড়ালপুল শুরু হয়েছে, সেখান থেকে বেশ কিছুটা অংশের রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে।
ওই এলাকার এক আবাসনের বাসিন্দা সমীরবরণ সাহা বলেন, ‘‘এত বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে যে, আমাদের রাস্তা পারাপার করাই রীতিমতো ঝুঁকির হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ চিনার পার্কের এক বাসিন্দা সাবির আলি মণ্ডলের অভিযোগ, তাঁদের মাঝেরপাড়া, দক্ষিণপাড়ায় বড় বড় আবাসন ও রেস্তরাঁ তৈরির পরে এলাকার নিকাশি নালাগুলি বুজে গিয়েছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে যায়।
স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর মতে, নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতাই এই জল জমার প্রধান কারণ। দীর্ঘকাল ধরে অপরিকল্পিত ভাবে নগরায়ণ হয়ে চলেছে। আবাসন তৈরি হলেও তার নিকাশি ব্যবস্থার কী হবে, সেই পরিকল্পনা নেই। তাঁর মতে, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আমজনতার একাংশের সচেতনতার অভাব। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘এক দিকে নগর পরিকল্পনার অভাব, অন্য দিকে মানুষের একাংশের সচেতনতার অভাব। তাঁরা খালে, নর্দমায় অবাধে প্লাস্টিক ফেলছেন। ফলে নিকাশি নালার মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’’ পূর্ণেন্দুবাবুর দাবি, জল নামানোর জন্য গোটা পুরসভা জুড়ে ৫০টির মতো পাম্প চলছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, নিউ টাউন, রাজারহাটের ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালাগুলির কী অবস্থা তা খতিয়ে দেখা হবে। কৈখালি, চিনার পার্ক এলাকায় জল জমার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, বিমানবন্দর থেকে জল আসার যে পাইপলাইন রয়েছে, সেই পাইপলাইন থেকে জল বেরোনোর মুখটি খুব সরু হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে ওই এলাকায় তৈরি হয়েছে একের পর এক বহুতল আবাসন। ফলে বেশি সময় ধরে জল জমে থাকছে।
কিছু দিন পরেই ওই এলাকায় মেট্রো রেলের কাজ শুরু হবে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, তখন ফের মাটি খোঁড়াখুঁড়ি হলে নিকাশি নালার অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারে। যদিও বিধাননগর পুরসভার কর্তারা জানাচ্ছেন, যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করে যাতে কাজ করা হয়, তা নিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই এলাকার ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালাগুলি কী ভাবে সংস্কার করা যায়, তা নিয়েও তাঁরা পরিকল্পনা করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy