Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ইকো পার্কে দুর্ঘটনার পরে ঘেরা হচ্ছে জলাশয়

মা-বাবার সঙ্গে ইকো পার্কে বেড়াতে গিয়ে চিলড্রেন্স পার্কের কাছে এই জলাশয়ের মধ্যেই শনিবার বিকেলে ডুবে যায় এন্টালি থানা এলাকার তালতলা লেনের বছর চারেকের শেখ আবেজ।

অবশেষে: ইকো পার্কে পানায় ঢাকা পুকুর ঘিরে দেওয়ার কাজ চলছে। রবিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য, নিজস্ব চিত্র

অবশেষে: ইকো পার্কে পানায় ঢাকা পুকুর ঘিরে দেওয়ার কাজ চলছে। রবিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য, নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০১
Share: Save:

জলাশয় নয়, অনেকেই বলছেন মরণফাঁদ! জল এমন সবুজ হয়ে রয়েছে যে ঘাসে ঢাকা মাঠ, নাকি জলাশয়? তা বোঝার উপায় নেই।

মা-বাবার সঙ্গে ইকো পার্কে বেড়াতে গিয়ে চিলড্রেন্স পার্কের কাছে এই জলাশয়ের মধ্যেই শনিবার বিকেলে ডুবে যায় এন্টালি থানা এলাকার তালতলা লেনের বছর চারেকের শেখ আবেজ। ইকো পার্কে সারা বছর ধরে অসংখ্য মানুষ বেড়াতে আসেন, শীতের মরসুমে সেই সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রশ্ন উঠেছে, এমন একটি পার্কের ভিতরে জলাশয়গুলি নিয়ে কর্তৃপক্ষ এত উদাসীন কেন? কেন ছোট-বড় সাতটি জলাশয়ের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ঘেরা নেই?

রবিবার দুপুরে নিউ টাউনের ওই পার্কে ঘুরে দেখা গেল, জলাশয়ের সামনে একটি বোর্ড রয়েছে। তাতে লেখা, ‘‘জলাশয় হইতে সাবধান। শিশুদের দূরে রাখুন।’’ সাবধানবাণী ওই বোর্ড ছাড়া ছোট জলাশয়গুলি এ দিনও অরক্ষিতই পড়েছিল। একটি ছাড়া অন্যগুলির সামনে কোনও নিরাপত্তারক্ষী চোখে পড়েনি। সেগুলির সামনেই বাচ্চাদের দেখা গেল খেলতে। একটি ছোট জলাশয়ে প্যাডেল-বোটিং চলছিল তখন। সেখানে লাইফ জ্যাকেট পড়ে বোটিং করছিলেন অনেকেই। এ ক্ষেত্রেও নজরদারির অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। যে জলাশয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার চারদিকে এ দিন ঘেরার কাজ চলছিল। সপরিবার ঘুরতে আসা এক যুবক বললেন, ‘‘যত নজরদারি ইকো পার্কের বড় ঝিলে। সব জলাশয় ঘিরে দেওয়া হচ্ছে না কেন? পাশ থেকে এক জন প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘‘একটি বাচ্চার মৃত্যুর পরে এত দিনে কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙল?’’

এ দিন বিকেলে তালতলা লেনে আবেজদের এক কামরার ছোট্ট ঘরে গিয়ে দেখা গেল, একমাত্র সন্তান হারিয়ে ক্রমাগত কেঁদে চলেছেন সুলতানা পরভিন। তাঁকে ঘিরে বসে আত্মীয়েরা। পরভিনের স্বামী শেখ আকবর দোকানে দোকানে মুরগি সরবরাহ করেন। শনিবারের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কোনও রকমে পরভিন জানান, ছেলেকে তাঁরা হন্যে হয়ে খুঁজতে খুঁজতে ইকো পার্কের বিভিন্ন গেটে নিরাপত্তারক্ষীদের সে কথা বলেওছিলেন। তাঁর অভিযোগ, তখন পার্ক কর্তৃপক্ষ শুধু মাইকে ঘোষণা করেই দায়িত্ব সেরেছিলেন। পরভিন জানান, পার্কের ভিতরের অফিসে গিয়ে তাঁরা ছেলের নিখোঁজের কথা বললে কয়েক জন আধিকারিক ও পুলিশ জানতে চান, কোথায় তাঁরা বসেছিলেন? এর পরেই জায়গাটি তাঁরা দেখতে আসেন। তখনই তাঁদের নজরে আসে ওই জলাশয়। তত ক্ষণে তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। আবেজের খোঁজে ওই জলাশয়ে পুলিশ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী নামাতেই শিশুর দেহ বেরোয়।

তালতলা লেনের বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আবেজের মা সুলতানা পরভিন। রবিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য, নিজস্ব চিত্র

আকবর বলে ওঠেন, ‘‘যে ভাবে জলাশয়টি সবুজ হয়েছিল, আমিও বুঝতে পারিনি যে ওটা কোনও পুকুর। আমার বাচ্চাটা বোধহয় ওই পুকুরকে মাঠ ভেবে খেলতে গিয়েই পড়ে গিয়েছিল!’’ পাশ থেকে এক আত্মীয় বলে ওঠেন, ‘‘এত বড় পার্কে এমন মরণফাঁদ থাকে কী করে? ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’’ ইতিমধ্যেই পরভিনরা ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিউ টাউন থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কী করে এমন দুর্ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করার কথা বলেছি ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষকে।’’

যাবতীয় অভিযোগ প্রসঙ্গে হিডকোর এক কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘ইকো পার্কের সুরক্ষা ব্যবস্থা খুবই ভাল। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পার্কের উপরে নজরদারি চলে। আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য ফোর্স রাখা রয়েছে। পার্কের সব থেকে বড় ঝিলের চারদিকে ঘেরা রয়েছে। সেখানে গার্ডও রয়েছেন। তবে ছোট জলাশয়গুলিতে ফেনসিং দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।’’ কেন ওই জলাশয় পরিষ্কার করা হয়নি? ওই কর্তা বলেন, ‘‘পানা জমলে পরিষ্কার করা হয়। এক-দু’দিনের মধ্যেই পরিষ্কার করার কথাও ছিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Eco Park Children's Day Death Drowning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy