Advertisement
E-Paper

২১-এর ভার্চুয়াল সভাতেও ‘বিধিভঙ্গ’

করোনা অতিমারির এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য-বিধি মানতে চলতি বছরের একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ বাতিল করে ভার্চুয়াল সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু মঙ্গলবারের সেই ভার্চুয়াল সভাতেও স্বাস্থ্য-বিধি ঠিকমতো মানা হল কি?

বিধি-ভঙ্গ:গড়িয়াহাট মোড়ে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেই পর্দায় চোখ দর্শকদের (বাঁ দিকে উপরে) । ধর্মতলায় শহিদ স্মরণের অনুষ্ঠানে গায়ে গায়ে নেতা-মন্ত্রীরা (বাঁ দিকে নীচে) ।নিয়ম ভেঙে বসা দর্শকদের উপরে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে হাওড়ার দাশনগরে (ডান দিকে উপরে)। শ্যামবাজারের সভা ঘিরে চলছে আড্ডা (ডান দিকে নীচে)। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক, দীপঙ্কর মজুমদার এবং সুমন বল্লভ

বিধি-ভঙ্গ:গড়িয়াহাট মোড়ে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেই পর্দায় চোখ দর্শকদের (বাঁ দিকে উপরে) । ধর্মতলায় শহিদ স্মরণের অনুষ্ঠানে গায়ে গায়ে নেতা-মন্ত্রীরা (বাঁ দিকে নীচে) ।নিয়ম ভেঙে বসা দর্শকদের উপরে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে হাওড়ার দাশনগরে (ডান দিকে উপরে)। শ্যামবাজারের সভা ঘিরে চলছে আড্ডা (ডান দিকে নীচে)। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক, দীপঙ্কর মজুমদার এবং সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২০ ০৪:০৮
Share
Save

রাস্তা পুরোপুরি আটকে তৈরি হওয়া বিশাল মঞ্চ এ বার নেই। তবে মাটি থেকে দেড় ফুট উচ্চতার চৌকি পেতে যে জায়গাটি তৈরি করা হয়েছে, তার জেরেও আটকে গিয়েছে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট। সবুজ কার্পেটে ঢাকা সেই চৌকির উপরে ছ’ফুটের দূরত্ব-বিধি না হোক, দু’ফুট দূরত্বে দাঁড়ালেন তৃণমূলের তিন নেতা। কিছুটা পিছনে কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আর তাঁদের ঘিরে তৃণমূলের কয়েকশো নেতা-কর্মী।

করোনা অতিমারির এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য-বিধি মানতে চলতি বছরের একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ বাতিল করে ভার্চুয়াল সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু মঙ্গলবারের সেই ভার্চুয়াল সভাতেও স্বাস্থ্য-বিধি ঠিকমতো মানা হল কি? এই প্রশ্ন উঠে গেল ওই সভা ঘিরে দিনভর ধরা পড়া নানা চিত্রে।

২১ জুলাইয়ের মূল মঞ্চ, অর্থাৎ ধর্মতলা মোড়েই যেমন দেখা গেল, ‘শহিদ স্মরণে’ অনেকেই হাজির হয়েছেন মাস্ক ছাড়া। দূরত্ব-বিধি মানারও কোনও চেষ্টা নেই তাঁদের! উল্টে নেতারা ‘শহিদ বেদি’তে মাল্যদানের জন্য এগোতেই তাঁদের অনুগামীরাও হুড়মুড়িয়ে সামনের দিকে আসা শুরু করেন বলে অভিযোগ। এক সময়ে পরিস্থিতি এমনই হয় যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিমকে বার বার মাইকে দূরত্ব-বিধি মেনে চলার ঘোষণা করতে হয়। সেখানেই ভিড় ঠেলে এগোনোর পথে এক নেতার অনুগামী বললেন, “শহিদদের জন্য এসেছি। ওঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন। ওঁদের জন্য এসে করোনাকে ভয় পেলে চলে!”

ধর্মতলায় মাস্ক ছাড়াই হাজির হওয়া ছ’জনের একটি দলের এক জন বললেন, “আমাদের বাড়ি মালদহে। প্রতিবারই এ দিন ধর্মতলায় আসি। তার পরে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া ঘুরে যাই। এ বার সে সব বন্ধ। তবু গাড়ি ভাড়া করে ছ’জন চলে এসেছি। ধর্মতলার একটা হোটেলে কয়েক দিন থেকে এ দিক-ও দিক একটু ঘুরে নেব।” উৎসব নাকি? তাঁদেরই দলের এক জনের যুক্তি, “লকডাউনের মধ্যে তো কোথাও যাওয়া হয়নি। ২১-এর সভার জন্য যাচ্ছি বললে পুলিশও ধরবে না জানতাম।”

এ দিন ওই ভার্চুয়াল সভা ঘিরে রাজ্যের বিরোধী নেতারাও করোনা পরিস্থিতিতে উৎসব হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এ দিন দুপুর ২টো থেকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল বক্তৃতা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পাড়ায় পাড়ায় মাইক বেজেছে সোমবার সকাল থেকে।

উত্তর কলকাতার রাজবল্লভপাড়া সংলগ্ন একটি এলাকায় সোমবার দুপুর থেকে তারস্বরে মাইক বাজতে দেখে শ্যামপুকুর থানায় ফোন করেন এক নবতিপর। এ দিন ওই বৃদ্ধ বলেন, “পাড়ার দুই তরতাজা যুবক দু’দিন আগে করোনায় মারা গিয়েছে। তার মধ্যে এই মাইক। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চটুল গান বেজেছে। থাকতে না-পেরে থানায় ফোন করেছিলাম।” তার পরে কি মাইক বাজানো বন্ধ হয়েছিল? বৃদ্ধের উত্তর, “করোনাই উচ্ছৃঙ্খলতায় লাগাম পরাতে পারেনি, সেখানে পুলিশ কী করবে!”

আরও পড়ুন: একুশের মঞ্চে ত্রাণের ত্রিপল?

একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে পাড়ায় পাড়ায় জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে ভার্চুয়াল সভা দেখার উদ্যোগ ঘিরে। গড়িয়াহাটের কাছে এমনই কয়েকটি স্ক্রিনের সামনে মাটিতে চক দিয়ে দাগ কেটে নির্দিষ্ট দূরত্বে চেয়ার পাতা হলেও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শুরু হওয়ার আগেই সেই দূরত্ব-বিধি ঘুচে যেতে দেখা যায়। কালীঘাটের মাঠে যেখান থেকে ভার্চুয়াল সভার মূল ‘ফিড’ সম্প্রচারের ব্যবস্থা হয়েছিল, সেখানেও হাজির ছিলেন মাস্ক ছাড়া কয়েকশো লোক। কিছু দূরে দাঁড়ানো পুলিশকর্মীদের প্রথমে বলতে শোনা যায়, “মাস্ক ছাড়া সভা দেখতে দেওয়া হবে না।” কিছু ক্ষণ বাদে তাঁরাই বলেন, “কাকে ছেড়ে কাকে আটকাব? মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি মানা কী জিনিস, এখনও শহরের অর্ধেক লোকই বোঝেন না।”

যদিও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন দাবি করেছেন, “সবটাই স্বাস্থ্য-বিধি মেনে হয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বড় করে দেখা উচিত নয়।” ধর্মতলায় ২১-এর মঞ্চের কাছে সাইকেলে দলীয় পতাকা এবং দলনেত্রীর ছবি লাগিয়ে হাজির এক ব্যক্তি বলছিলেন, “মানুষের কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের করোনা ছুঁতে পারে না। জায়ান্ট স্ক্রিনই হোক বা মঞ্চের সামনে, ভিড়ে ঢুকলেও তাঁদের কিছুই হবে না।” কিন্তু চিকিৎসকেরা যে বলছেন...! কথা থামিয়ে দিয়ে সাইকেল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আগে ওই যুবক চেঁচাতে থাকেন, “কোনও ডাক্তারের কথার দরকার নেই। সামনের বার করোনা থাকুক আর না থাকুক, এখানেই বিশাল সমাবেশ হবে।”

Virtual Meet TMC Martyr's Day COVID-19 Coronavirus Lockdown

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।