Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Deepika Padukone

‘সহানুভূতি দেখাতে ছবিটা দেখুন, চাই না!’

উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানা এলাকার বাসিন্দা সুনীতা অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছিলেন ২০১০ সালের ২১ মার্চ। যে দিনটার পর থেকে আমূল বদলে গিয়েছে তাঁর জীবন।

সাহসিনী: (বাঁ দিক থেকে) সুনীতা দত্ত, পিয়ালি দত্ত এবং উষা নস্কর।

সাহসিনী: (বাঁ দিক থেকে) সুনীতা দত্ত, পিয়ালি দত্ত এবং উষা নস্কর।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ১০:৩০
Share: Save:

‘‘কেন ছবিটা দেখতে ভিড় হবে বলুন তো?’’ ফোনে পাল্টা প্রশ্ন করলেন বছর পঁচিশের সুনীতা দত্ত। ‘ছপাক’ নিয়ে এত প্রচার হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাণিজ্যিক ভাবে তেমন সফল হয়নি বলেই জানাচ্ছে বক্স অফিসের হিসেব। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এর কারণটা কী হতে পারে?

উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানা এলাকার বাসিন্দা সুনীতা অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছিলেন ২০১০ সালের ২১ মার্চ। যে দিনটার পর থেকে আমূল বদলে গিয়েছে তাঁর জীবন। সুনীতা তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। এক জনের কুপ্রস্তাবের প্রতিবাদ করার ‘উপহার’ ছিল অ্যাসিড।

সুনীতা বলছিলেন, ‘‘মানুষ তো বিনোদনের জন্য সিনেমা দেখতে যান। আমাদের জীবনে বিনোদন কোথায়? বাস্তব জীবনেই যেখানে আমাদের সহজ ভাবে গ্রহণ করে না সমাজ, অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে, সেখানে টাকা খরচ করে কেন কেউ এই সিনেমা দেখতে যাবেন বলতে পারেন?’’

আরও পড়ুন: মহিলাকে মারধর করে গলায় বিষ

দীপিকা পাড়ুকোন, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক— সব মিলিয়ে মুক্তি পাওয়ার আগে প্রচারের তুঙ্গে ছিল ‘ছপাক’। কিন্তু সেই প্রচারের প্রতিফলন বাণিজ্যিক ভাবে ঘটেনি। যে ভাবে বিভিন্ন সময়ে অ্যাসিড আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে দেরি বা তাঁদের পুনর্বাসন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যে ভাবে সমাজের মূলস্রোতে ব্রাত্য থাকেন তাঁরা, তারই প্রতিফলন বাণিজ্যিক ‘ব্যর্থতা’র মাধ্যমে ধরা পড়েছে কি না, স্বাভাবিক ভাবেই সেই প্রশ্ন উঠেছে।

‘‘এখন তো অ্যাসিড-হামলা হয়েই চলেছে। রাস্তাঘাটেই তো মানুষ আমাদের অন্য গ্রহের জীব মনে করেন। সেখানে যে ছবিতে এই ভয়ঙ্কর দিকটি তুলে ধরা হয়েছে, তা দর্শকেরা কেন দেখতে যাবেন?’’ এই প্রশ্ন আরও এক অ্যাসিড-আক্রান্ত, শ্যামনগরের বাসিন্দা পিয়ালি দত্তের। ২৯ বছরের পিয়ালি ২০০৫ সালে অ্যাসিড-হামলার শিকার হয়েছিলেন। অনেক লড়াইয়ের পরে বর্তমানে তিনি এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করেন।

আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বা বধূর দেহ উদ্ধার, ধৃত স্বামী-শাশুড়ি

২০১৪ সালে অ্যাসিড-হামলায় দৃষ্টিশক্তি হারান রাজারহাটের উষা নস্কর। উষা বলছেন, ‘‘আমি তো চোখে দেখতে পাই না। তাই সিনেমাটি দেখার প্রশ্ন নেই। তবে গল্পটা শুনেছি। আসলে অ্যাসিড-আক্রান্তদের তো পরিবার-আত্মীয়স্বজনই ঠিক মতো গ্রহণ করতে পারেন না। সেখানে দর্শকেরা কেন দেখতে যাবেন?’’

তবে ‘ছপাক’-এর বাণিজ্যিক সাফল্যের সম্ভাবনা যে কম, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল বলে মনে করছেন অনেকে। অ্যাসিড-আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে দিব্যালোক রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘ছবিটি নিয়ে একটা কৌতূহল ছিল ঠিকই। কিন্তু অনেকেই রূঢ় বাস্তব মানসিক ভাবে গ্রহণ করতে পারেন না। তাই কারও মুখ থেকে ছবি নিয়ে কিছু শুনলাম, জানলাম, এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকেছে বেশির ভাগ মানুষের কৌতূহল।’’

দিব্যালোকবাবু জানাচ্ছেন, অ্যাসিড আক্রান্তদের যত দ্রুত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা, তাঁরা তা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি তাঁদের পুনর্বাসনের বিষয়টিকেও সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি অনেককে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি দেওয়ার। দিয়েছিও।’’

চেষ্টা করছেন সুনীতারাও। জীবনের মূলস্রোতে ফিরে আসার। সুনীতা বলছিলেন, ‘‘প্রাইভেটে মাধ্যমিক দেওয়ার জন্য আবার ভর্তি হয়েছি। চাকরিরও চেষ্টা করছি।’’ একটু থেমে দৃঢ় ভাবে তিনি বললেন, ‘‘সহানুভূতি দেখাতে ছবিটা দেখুন, চাই না!’’

সহানুভূতি নয়, নিজেদের প্রাপ্য সম্মানটুকু চাইছেন সুনীতা, পিয়ালি, উষারা। তাই ‘ছপাক’ বাণিজ্যিক ভাবে ব্যর্থ হলেও বাস্তব জীবনের লড়াইয়ে অসফল হতে নারাজ তাঁরা। পিয়ালি বলছিলেন, ‘‘এই লড়াইটা আমাদের নিজস্ব লড়াই, জীবনের লড়াই। এটা ‘ছপাক’-এর আগেও চলছিল, তার পরেও চলবে, চলবেই!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Chhapaak Deepika Padukone Acid Attack Acid Attack Victim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy