Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
book fair

VHP: বইমেলায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টলে নেতাজির ছবি! ক্ষুব্ধ ইতিহাসবিদরা

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টলের গায়ে সঙ্ঘ পরিবারের অন্যতম প্রাণপুরুষ গোলওয়ালকর, হেডগেওয়ারের পাশেই রয়েছেন সুভাষচন্দ্র।

নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ০৭:২৭
Share: Save:

দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর বা তাঁর জীবনের ১২৫ বছরে সুভাষচন্দ্র বসুর ছায়া যথেষ্ট দীর্ঘ বইমেলা জুড়ে। কিন্তু তা বলে এমন জায়গায় তাঁকে দেখা যাবে, তা সম্ভবত কেউই কল্পনা করেননি।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টলের গায়ে সঙ্ঘ পরিবারের অন্যতম প্রাণপুরুষ গোলওয়ালকর, হেডগেওয়ারের পাশেই রয়েছেন সুভাষচন্দ্র। সুভাষের অন্য পাশে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আজ, মঙ্গলবার কলকাতা বইমেলা শুরুর আগে ওই ছবি দেখে সাধারণ ইতিহাস-সচেতন পাঠকেরা অনেকেই ক্ষুব্ধ। বিষয়টি শুনে ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার বলছেন, ‘‘সুভাষচন্দ্র আদ্যোপান্ত সেকুলার ছিলেন। তাঁর জীবনের কোনও বড় কাজেই সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ নেই। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতাদর্শের ধারকদের পাশে সুভাষের ছবি রাখা তাঁর পক্ষে অপমানজনক।’’ আর এক প্রবীণ ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ও বলছেন, ‘‘সুভাষ এবং ভিএইচপি, আরএসএসের আদর্শে আকাশ-পাতাল ফারাক। কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার সময়েও সুভাষচন্দ্র সর্বধর্ম সমন্বয়, সম্প্রীতি ও সমাজতন্ত্রের প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন। তৎকালীন হিন্দু মহাসভার সঙ্গে তাঁর আদর্শগত বিরোধও সুবিদিত।’’ রজতের মতে, আজ়াদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক সুভাষের ঝাঁসি রানি বাহিনীও নারী স্বাধীনতার প্রতীক। তাঁর প্রশ্ন, মেয়েদের এই মর্যাদাই বা সঙ্ঘের আদর্শে কোথায়?

কোনও কোনও ইতিহাসবিদ মনে করেন, আধুনিক ভারত গঠন বা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কদের মধ্যে সঙ্ঘঘনিষ্ঠ বা হিন্দুত্ববাদী কার্যত কেউ ছিলেন না। তাই বাধ্য হয়েই কখনও গান্ধী, কখনও অম্বেডকর বা সুভাষের মতো জাতীয় নায়কদের তারা ‘আত্মসাৎ’ করতে চাইছে। তবে এই অভিযোগে বেজায় চটছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা। পরিষদের পূর্বাঞ্চলীয় সম্পাদক অমিয় সরকার বলছেন, ‘‘সুভাষ কি ভারতের বাইরে? তিনি আমাদের রাষ্ট্রনেতা।’’ বইমেলার স্টলে স্বামী বিবেকানন্দের ছবিও রয়েছে। বিবেকানন্দও তাঁদের রাষ্ট্রঋষি বলে দাবি ভিএইচপি নেতার। কিন্তু ভিএইচপি, সঙ্ঘের বিদ্বেষ-বিষে ভরপুর হিন্দুত্বের সঙ্গে বিবেকানন্দের আদর্শও মেলে না বলে মনে করেন রজত বা তনিকা। সুভাষের হিন্দু-মুসলিম ভ্রাতৃত্বের আদর্শও পুরো আলাদা। কিন্তু ক্ষুব্ধ অমিয়ের দাবি, ‘‘আমরা তো বিশ্বভ্রাতৃত্ব মানি!’’

দীর্ঘ দিন ভিএইচপি, সঙ্ঘ পরিবারের কর্মকাণ্ড খুব কাছ থেকে দেখে গবেষণা করা তনিকা বলছেন, ‘‘বড়সড় গালভরা আদর্শের কথা মুখে বললেই হল না! বাবরি ধ্বংস, গুজরাত গণহত্যা থেকে গোরক্ষার নামে মানুষ হত্যায় ভিএইচপি-র ভূমিকাই বলে দিচ্ছে, তাদের অবস্থানটা আসলে কী। সুভাষচন্দ্রের নাম মুখে আনার যোগ্যতাও ওদের নেই।’’

সুগত বসুর মতো বিভিন্ন ইতিহাসবিদের বয়ানে উঠে এসেছে, আজ়াদ হিন্দ ফৌজের সেনানায়কের জীবনে রাজনীতি বা ব্যক্তিগত পরিসর, কোথাওই হিন্দু-মুসলিমে ভেদাভেদ ছিল না। তাঁর ঘনিষ্ঠতম সহযোগীদের অনেকেই ছিলেন মুসলিম। আজকের ভারতে সুভাষের ছবি নিয়ে বিজেপি বা তাদের ঘনিষ্ঠ সংগঠনগুলির এই টানাটানি অবশ্য নতুন কিছু নয়। বইমেলার সাম্প্রতিক কাণ্ড নিয়ে সুগত (যিনি আবার সুভাষের ভ্রাতুষ্পুত্রের পুত্র) বলছেন, ‘‘এ ভাবে সুভাষকে আত্মসাৎ করা যায় না। দেশের মানুষ জানেন, তাঁর মতাদর্শ হিন্দুত্ববাদীদের বিপরীত মেরুতে। তা ছাড়া, দেশের ঐক্য সাধনার কাজে একমাত্র গান্ধীর পাশেই সুভাষের ছবি মানায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

book fair Netaji vhp BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy