Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Syringes

ভুল জায়গায় পড়ে থাকা সিরিঞ্জের খেসারত কত দিন?

এর জন্য অনেকটাই দায়ী ভুল ইঞ্জেকশনের প্রয়োগ ও খারাপ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। তবে সব চেয়ে অসুরক্ষিত (ভালনারেবল) শ্রেণি হল কাগজকুড়ানি ও শিশুরা।

বিপজ্জনক: হাওড়া জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে পড়ে চিকিৎসা বর্জ্য। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বিপজ্জনক: হাওড়া জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে পড়ে চিকিৎসা বর্জ্য। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৩০
Share: Save:

শুধুমাত্র ভুল জায়গায় পড়ে থাকা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ বা ইঞ্জেকশনের ভুল প্রয়োগ। এ সবের জন্য খেসারত দিতে হয় কত মানুষকে? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সংখ্যাটা শুনলে চমকে উঠতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘আনসেফ ইঞ্জেকশন প্র্যাকটিসেস অ্যান্ড ট্রান্সমিশন অব ব্লাড বোর্ন প্যাথোজ়েনস’-এর সমীক্ষাই বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে কমপক্ষে ৮০ লক্ষ-১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ হেপাটাইটিস বি, ২৩-৪৭ লক্ষ মানুষ হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত হন। এইচআইভি সংক্রমণের শিকার হন অন্তত ৮০ হাজার-১ লক্ষ ৬০ হাজার জন। এর জন্য অনেকটাই দায়ী ভুল ইঞ্জেকশনের প্রয়োগ ও খারাপ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। তবে সব চেয়ে অসুরক্ষিত (ভালনারেবল) শ্রেণি হল কাগজকুড়ানি ও শিশুরা।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, এই সব তথ্য সীমিত পরিসরেই আটকে থাকে। সেই কারণে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের বিপদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশই। এ ক্ষেত্রে তাঁদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা যেমন রয়েছে, তেমনই সরকারি তরফেও প্রচারের খামতি রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। দিল্লির ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ’-এর অ্যাডজাঙ্কট প্রফেসর অশোককুমার আগরওয়াল বলেন, ‘‘সংক্রামক রোগের জন্য ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ-সহ বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের খারাপ ব্যবস্থাপনা অনেকটাই দায়ী। কারণ, খোলা ভাগাড়ে বা সাধারণ বর্জ্য ফেলার জায়গাতেই সিরিঞ্জ ফেলা হয়। এর ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি যাঁরা সেগুলি সংগ্রহ করতে আসেন, সেই সাফাইকর্মীদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের মধ্যে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সম্পর্কে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।’’

বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের বিপদ

• হেপাটাইটিস বি ও সি • এডস • শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ • ত্বকের সংক্রমণ • পেটের সমস্যা • রক্তের সংক্রমণ-সহ অন্যান্য

যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া বা সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমণ রোখার পদ্ধতির মতো বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের বিপদ নিয়েও লাগাতার প্রচার দরকার। তবে জনসংযোগের ভাষা সরল ও সহজ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। যাতে আমজনতা সহজেই এই ধরনের বর্জ্যের বিপদ ও তাকে কী ভাবে এড়িয়ে চলতে হবে, তা বুঝতে পারে। এক জনস্বাস্থ্য চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য— শুধু শব্দবন্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে এর মাধ্যমে কী কী ক্ষতি হতে পারে, সেটা সাধারণ মানুষকে সহজ ভাবে বোঝানোর ক্ষেত্রে সরকারের তরফে ত্রুটি রয়েছে।’’

রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, অতীতে ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ, কলকাতা’-র তরফে একটি সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, শহরের বড় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে প্রতিদিন শয্যা পিছু ১ কিলোগ্রাম-১.৩ কিলোগ্রাম বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সেখানে জেলার সরকারি হাসপাতালে এর পরিমাণ ছিল শয্যাপিছু দৈনিক ৩৯৭ গ্রাম। ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব হসপিটাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’-এর সেক্রেটারি সিদ্ধার্থ শতপথী জানাচ্ছেন, সরকারি এবং বেসরকারি কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্রেগুলিতেও প্রতি শিফটে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কোভিড-বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। যা শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল পিছু বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পরিমাণ অনেকটাই বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘ফলে এখন আর বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে সচেতন হওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Syringes Injection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy