গাড়ি চালাতে জানেন কি জানেন না, সেটা কোনও বিষয়ই নয়। স্রেফ হাজার তিনেক টাকা খসাতে পারলেই মেলে ‘লার্নার’ লাইসেন্স। এর পরে স্থায়ী লাইসেন্স পেতে ৯০ দিন অপেক্ষা করারও প্রয়োজন নেই। টাকা দিলেই সবটা করে দেন মোটর ভেহিক্লস দফতরের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো দালাল চক্রের পান্ডারা। কলকাতার বেলতলা হোক কিংবা শহরতলির অন্যান্য মোটর ভেহিক্লস অফিস— কয়েক দশকের পুরনো চিত্র বদলায়নি কোথাও।
অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে আনকোরা চালকের হাতে লার্নার লাইসেন্স পৌঁছে যাচ্ছে। আর তা নিয়ে বহাল তবিয়তে অনভিজ্ঞ চালক গাড়ি চালাচ্ছেন। ঘটছে দুর্ঘটনাও।
প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারও পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের সূচনায় একবার বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দেশে পাসপোর্ট পাওয়া কঠিন, লাইসেন্স পাওয়া নয়!’’ সম্প্রতি লোকসভায় পাশ হয়েছে মোটর ভেহিক্লস (সংশোধনী) বিল। ওই বিলে জরিমানার পরিমাণ এবং হাজতবাসের সময় বাড়ানোর কথা বলা হলেও তাতে বেআইনি ভাবে লাইসেন্স বার করে দেওয়ার কারবার বন্ধ করা যাবে কি?
পরিবহণ দফতরের নিয়ম বলছে, লার্নার লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাতে হলে গাড়িতে সামনে এবং পিছনে ‘এল’ অক্ষরটি লাগাতে হয়। পাশাপাশি সূর্যাস্তের পরে লার্নার লাইসেন্সধারী চালক গাড়ি বা মোটরবাইক চালাতে পারবেন না। গাড়িতে লার্নার লাইসেন্সধারী চালকের সঙ্গে স্থায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালককে থাকতে হবে। লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার পরে ৩০ দিন সরকারি মোটর ট্রেনিং স্কুলে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গাড়ি বা মোটরবাইক চালানোর পরীক্ষা দিয়ে তবেই কেউ পাকা লাইসেন্স পেতে পারেন। বাইপাসের এক ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিক বলেন, ‘‘স্থায়ী লাইসেন্স পাওয়ার পরেও ৩০ দিন গাড়িতে দু’টো ‘এল’ অক্ষর টাঙিয়ে রাখা ভাল।’’
অভিযোগ, এই সব নিয়মের কিছুই মানা হয় না। বেলতলা মোটর ভেহিক্লসে এক দুপুরে লাইসেন্স করাতে হাজির হওয়াদের ভিড়ের মাঝে ঘুরতে দেখে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘গাড়ি আছে না কিনবেন?’’ কেনার পরিকল্পনার কথা জানাতে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘দু’হাজার টাকা লাগবে!’’ কিন্তু, গাড়ি চালাতে জানা নেই বলায় এর পরে তাঁর বক্তব্য, ‘‘তা হলে আর একটু বেশি লাগবে। তিন হাজার পড়বে!’’ কিন্তু, সাধারণ নিয়মে অনলাইনে ফর্ম পূরণ করেই তো সামান্য টাকা দিলে পরীক্ষায় বসা যায়! ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘পরীক্ষা দিলেও পাশ করবেন না! নিজে করে দেখতে পারেন।’’
লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘লার্নার লাইসেন্সের নিয়ম কারা মানছেন না, তা গাড়ি ধরে ধরে দেখা সম্ভব নয়। অত লোক নেই পুলিশে! কিন্তু কেউ বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালানোর সময়ে ধরা পড়লে, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।’’
সেই সঙ্গে ওই আধিকারিকের দাবি, বেআইনি লাইসেন্স কারবারে পুলিশের কড়া নজর রয়েছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেই নজরদারিতে কাজ হয় কি? বাস্তব চিত্র অবশ্য অন্য কথাই বলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy