Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪

বিয়ের আড়াই মাসও কাটেনি, উদ্ধার বধূর দেহ

শুক্রবার দুপুরে তাঁর বাড়ির লোকজন কাশীপুর থানায় মেয়ের স্বামী, শ্বশুর এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে কিরণের স্বামী পঙ্কজ এবং শ্বশুর রাজেন ভগতকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ দিনই দুপুরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই বধূর দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে।

কিরণকুমারী ভগত

কিরণকুমারী ভগত

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫০
Share: Save:

বিয়ের সময়ে পাত্রপক্ষ পাঁচ লক্ষ টাকা পণ চেয়েছিল বলে অভিযোগ। কোনও মতে তিন লক্ষ টাকা মিটিয়েছিলেন মেয়ের বাড়ির লোক। তার পরেও শ্বশুরবাড়ি জানিয়ে দেয়, আরও অন্তত ১৭ হাজার টাকা দিতেই হবে। ওই টাকায় ছেলের সোনার হার কেনার বড় ইচ্ছে!

তবে ওই ১৭ হাজার টাকা আর মেটানো হয়নি। তার মধ্যেই বিয়ের আড়াই মাসের মাথায় বৃহস্পতিবার রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হল কিরণকুমারী ভগত (২৫) নামে ওই বধূর ঝুলন্ত দেহ। শুক্রবার দুপুরে তাঁর বাড়ির লোকজন কাশীপুর থানায় মেয়ের স্বামী, শ্বশুর এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে কিরণের স্বামী পঙ্কজ এবং শ্বশুর রাজেন ভগতকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ দিনই দুপুরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই বধূর দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে।

মৃতার দাদা ধনঞ্জয় প্রসাদ জানান, গত ১৭ জুন কিরণের সঙ্গে বিয়ে হয় পঙ্কজের। পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ পঙ্কজ কাজের সূত্রে পটনায় থাকেন। তাঁর বাবা রাজেন কাশীপুরের গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির কর্মী। পঙ্কজের আর এক ভাই নিরাপত্তা বাহিনীতে কাজ করেন। ধনঞ্জয়ের কথায়, ‘‘ভাল পরিবার ভেবে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিলাম। পাত্রপক্ষ প্রথমেই নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা এবং গাড়ি দাবি করে। অত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের ছিল না। সামর্থ্য মতো কাপড়, সোনার গয়না দিয়েছিলাম। ধার করে পরে তিন লক্ষ টাকাও দিতে হয়েছিল আমাদের।’’

কিরণের বাড়ির লোকের অভিযোগ, সম্পূর্ণ টাকা না পাওয়ায় তাঁদের দিয়ে পরে টাকা মেটানোর কথা লিখিয়ে নিয়েছিল শ্বশুরবাড়ির লোক। এর পরে আরও ১৭ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করা হয়। কিরণের বাবা শিবপূজন প্রসাদ বলেন, ‘‘জামাই ওই টাকায় সোনার হার কিনবে বলেছিল। কিন্তু ওই টাকা আমরা দিতে পারিনি। টাকার জন্য আমাদের মেয়েটার উপরে নানা ভাবে নির্যাতন চালানো হত। মেয়ে সে কথা বারবার আমাদের বলত। কেন যে তখনই ওকে বাড়ি নিয়ে চলে এলাম না!’’

বুধবারই কিরণের মা লংদেবী প্রসাদ মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন দেখা করতে। আর জি কর হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে কান্নায় ভেঙে পড়া বৃদ্ধা আক্ষেপ করছেন, কেন তখনই তিনি বুঝতে পারেননি কী হতে চলেছে! কান্না জড়ানো গলায় লংদেবী শুধু বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতেই ওর বাবার মোবাইলে ফোন এল, মেয়েটা আর নেই। পঙ্কজ গিয়ে দেখে, ওর বোনের দেহ মাটিতে শোয়ানো।’’

মৃতার স্বামী পঙ্কজ এবং তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁদের মোবাইল বন্ধ ছিল। কাশীপুর থানার পুলিশ জানায়, স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে তারাই গিয়ে কিরণের দেহ সিলিং থেকে নামিয়ে হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনাস্থল থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। তবে মৃতার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে মেনে নিয়েছেন, তাঁরা বিয়েতে পণ চেয়েছিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

crime mysterious death dowry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy