সাইকেল নিয়ে হাওড়া ব্রিজ পার হচ্ছেন মানুষ। নিজস্ব চিত্র।
শহরের গলিপথ এবং গণপরিবহণ চলে না এমন রাস্তায় এ বার থেকে সাইকেল চালানো যাবে। আনলকডাউন পর্বে বর্তমান পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে সাইকেল চালানোর অনুমতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করল কলকাতা পুলিশ। সোমবারই এ বিষয়ে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু কলকাতা পুলিশ এলাকা নয়, সংলগ্ন পুলিশ কমিশনারেটগুলোতেও সাইকেল চালানোর অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আনলকডাউন পর্যায়ে, এক দিকে পর্যাপ্ত গণপরিবহণের অভাব, অন্য দিকে কোভিড-১৯ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ— এই জোড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ভোগান্তি থেকে বাঁচতে বিকল্প হিসাবে সাইকেলকেই বেছে নিয়েছিলেন অফিসযাত্রীদের একটা অংশ। গত ১ জুন রাজ্যে আনলকডাউন পর্ব শুরু হতেই দেখা গিয়েছিল, শহর জুড়ে সাইকেলের ঢল। কেউ ব্যারাকপুর থেকে, কেউ সোনারপুর থেকে কেউ বা গঙ্গার ওপারে চন্দননগর-চুঁচুড়া থেকে সাইকেল চড়ে আসতে শুরু করেন কলকাতার অফিসে।
মধ্য চল্লিশের সুমন বিশ্বাস এঁদেরই এক জন। ব্যারাকপুরে বাড়ি। চাকরি করেন পার্ক স্ট্রিটের একটি বেসরকারি সংস্থায়। আগে লোকাল ট্রেনে দমদম, তার পর সেখান থেকে মেট্রো ধরে অফিস পৌঁছতেন। সব মিলিয়ে বাড়ি থেকে অফিস পৌঁছতে সময় লাগত মেরেকেটে সওয়া এক ঘণ্টা। তখন বাড়ি থেকে স্টেশন পর্যন্ত পৌনে এক কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চড়ে যাতায়াত করতেন। এখন গোটাতাই সাইকেলে। তাঁর কথায়, ‘‘বাস পাওয়ার কোনও নিশ্চয়তা নেই। প্রথম দু’দিন বাস ধরার জন্য প্রায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। তার পর বাসে আরও দেড় ঘণ্টা বা তারও বেশি। সব মিলিয়ে দুর্বিসহ অবস্থা।” তাই তিনি এখন গোটা রাস্তাই সাইকেলে যাতায়াত করছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘একটু কষ্ট হচ্ছে ঠিকই, তবে বাসে গাদাগাদি করে যাওয়ার থেকে ঢের ভাল।”
আরও পড়ুন: গাড়ি আছে চালক নেই? দেশের নানা শহরে এখন মুশকিল আসান ‘পঞ্চপাণ্ডব’ বঙ্গসন্তান
সুমনবাবুর মতো তাই অনেকেই বাসের উপর ভরসা না করে সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। লালবাজার সূত্রে খবর, সাইকেলের এই ঢল দেখেই তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে কলকাতা পুলিশ। কারণ, বর্তমানে কলকাতা পুলিশ-আইন অনুযায়ী শহরের অধিকাংশ রাস্তাতেই সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত কলকাতা শহরের যান চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৩৪ টি রাস্তায় সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ৭০। এক কথায়, সাইকেল চালানোরই সুযোগ নেই কলকাতা শহরে। কলকাতা পুলিশ-আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ রাস্তায় সাইকেল চালালে জরিমানা এবং যান বাজেয়াপ্ত দুই হতে পারে।
নিষিদ্ধ রাস্তায় সাইকেল চালালে জরিমানা এবং যান বাজেয়াপ্ত দুই হতে পারে। নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সাইকেলকেই রাস্তা করে দেওয়া হল শহরে। লালবাজার সূত্রে খবর, সাইকেলের এই ঢল নিয়ে গোটা পরিস্থিতি জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রীকেও। কী ভাবে সাইকেলকে শহরের রাস্তায় জায়গা দেওয়া যায়, তা নিয়েও শুরু হয়ে হিসেবনিকেশ। মুখ্যমন্ত্রীও পরিস্থিতির প্রয়োজনীয় মানবিক দিক থেকে বিচার করে পুলিশকে সাইকেল চালাতে দেওয়ার অনুমতি দিতে নির্দেশ দেন।
কিন্তু কোথায় চলবে সাইকেল তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল শহরের বড় রাস্তাগুলোতে সাইকেলের জন্য নির্দিষ্ট লেন করার। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে দেখা গিয়েছে, নির্দিষ্ট লেন করলে রাস্তার পরিসর কমে যাচ্ছে এবং তার ফলে যানজট সামাল দেওয়া কঠিন হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে দুর্ঘটনার সম্ভবনাও। তাই সাইকেল লেনের সম্ভবনা আপাতত বাতিল করা হয়েছে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে সাইকেলের অনুমতি দেওয়ার নির্দেশের পরেই কলকাতা পুলিশের নগরপাল ট্রাফিক বিভাগের কর্তাদের নির্দেশ দেন তা কী ভাবে কার্যকরী করা যায়। কলকাতার ২৫টি ট্রাফিক গার্ডকে এ দিন দুপুরের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়— কোন কোন রাস্তায় সাইকেল চললে যান চলাচল বিঘ্নিত হবে না।
আরও পড়ুন: পঙ্গু ছেলে, পঙ্গু স্ত্রী, ওঁদের ‘বাঁচাতেই’ সঙ্গে নিয়ে মরলেন নিঃসহায় বৃদ্ধ!
ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের নগরপাল অনুজ শর্মা বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন, উড়়ালপুল এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ছাড়া গলিপথে সাইকেল চালানো যাবে আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত। লালবাজার সূত্রে খবর, এটা প্রাথমিক বিজ্ঞপ্তি। এর পর ট্রাফিক গার্ডগুলোর পাঠানো রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে একটি সুসংহত সাইকেল রুট পরিকল্পনা করা হবে। অর্থাৎ কোন কোন পথে সাইকেল চালানো যাবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হবে। তার সঙ্গে শহরের কোন দিক থেকে এলে কোন রুট ধরতে পারবেন সাইকেল আরোহীরা তার একটা সবিস্তার রুট তৈরি করা হবে।
সাইকেল চালানোর অনুমতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করল কলকাতা পুলিশ। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।
মঙ্গলবার রাতে বা বুধবার প্রকাশিত হতে পারে কলকাতার সাইকেল রুট ম্যাপ। কলকাতা পুলিশের কর্তাদের একাংশ এই সাইকেল রুট পাকাপাকি করার পক্ষেও সওয়াল করেছেন। তাঁদের যুক্তি, বহু দেশে শহরের ঘি়ঞ্জি এলাকায় গণপরিবহণ ছাড়া ছোট গাড়ি নিষিদ্ধ। এক দিকে তা যানজট কমাতে সাহায্য করে, সেই সঙ্গে দূষণের মাত্রাও কম রাখে। কলকাতাতেও দূষণ একটা বড় সমস্যা। সাইকেলই পারে সেই সমস্যার সমাধান করতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy