Advertisement
E-Paper

ঘণ্টায় মৃত্যু ১৮ জনের! সিট বেল্ট ও এয়ার ব্যাগের সচেতনতা কবে

গাড়ির পিছনের আসনের সিট বেল্ট নিয়ে সচেতনতার অভাব কত বেশি এবং তার পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে, দেশের সাম্প্রতিক পথ দুর্ঘটনা এর প্রমাণ।

অসচেতনা কাড়ছে প্রাণ।

অসচেতনা কাড়ছে প্রাণ। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:১৯
Share
Save

কুড়ির উপরে গতি উঠলেই গাড়ি শব্দ করে জানায় সিট বেল্ট পরার কথা। অথচ বহু চালক এবং তাঁর পাশে বসা আরোহী সেই প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিতে সিট বেল্ট টেনে ক্লিপ নির্দিষ্ট জায়গায় গুঁজে রাখছেন, কিন্তু বেল্ট পরছেন না বলে অভিযোগ। পুলিশ দেখলে কখনও কখনও বেল্ট টেনে পরার চেষ্টা হয়, পার হলেই যে কে সেই! বেল্ট পরা আছে ভেবে গাড়িও চুপ। গাড়িকে চুপ করানোর বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে কিনে ফেলা হচ্ছে সিট বেল্টের সঙ্গে যেমন থাকে, তেমন ক্লিপ। সেটাই গুঁজে দেওয়া হচ্ছে বেল্টের নির্দিষ্ট জায়গায়।

একই রকম অসচেতন পিছনের আসনের যাত্রীও। সিট বেল্ট পরার বালাই তো নেই-ই, অনেকেই জানেন না পিছনে বসেও সিট বেল্ট লাগায় কেন? পিছনের আসনের ক্ষেত্রে পুলিশি ধরপাকড় না হওয়ায় হুঁশও হয় না। অব্যবহারের ফলে চালক সিট বেল্ট হয় খুলে ফেলেন, নয়তো ঢুকিয়ে দেন পিছনের আসনের নীচে। গাড়ির ‘এয়ার ব্যাগ’ নিয়ে মানুষ সমান উদাসীন বলেও অভিযোগ উঠছে।

গাড়ির পিছনের আসনের সিট বেল্ট নিয়ে সচেতনতার অভাব কত বেশি এবং তার পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে, দেশের সাম্প্রতিক পথ দুর্ঘটনা এর প্রমাণ। যে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির। তদন্তে জানা গিয়েছে, তাঁর বিলাসবহুল গাড়িটিতে আটটি এয়ার ব্যাগ ছিল। কিন্তু পিছনের আসনে বসা সাইরাস ও তাঁর পাশের সঙ্গী, কেউই সিট বেল্ট পরেননি।

পরিবহণ মন্ত্রকের পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, এয়ার ব্যাগ মৃত্যুর ঝুঁকি ৬৩ শতাংশ কমাতে পারে। সিট বেল্ট এই ঝুঁকি কমাতে পারে ৭২ শতাংশ। আর এই দু’টির ঠিক ব্যবহার মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে প্রায় ৮০ শতাংশ। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে মোট ৬৩.৯ লক্ষ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে হাইওয়ে রয়েছে ১.৩৩ লক্ষ কিলোমিটার (মাত্র ২.১ শতাংশ)। অথচ এই পথেই দেশের মোট পথ দুর্ঘটনার ৩০.৩ শতাংশ ঘটে! ভারতে রাজ্য সড়ক রয়েছে মোট রাস্তার প্রায় ২.৯ শতাংশ (১.৮৭ লক্ষ কিলোমিটার)। যেখানে ঘটে বছরের মোট পথ দুর্ঘটনার প্রায় ২৩.৯ শতাংশ। বাকি ৪৫.৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে অন্যান্য রাস্তায়। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’র (এনসিআরবি) রিপোর্ট বলছে, ২০২১ সালে দেশে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬২২ জনের। অর্থাৎ, প্রতি ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ১৮ জন। মৃত্যুর কারণ হিসাবে দেখা গিয়েছে, ৬৮ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী অত্যধিক গতি এবং বেহাল পথ।

উঠে আসছে গতি নিয়ন্ত্রণ, পথের মানোন্নয়ন এবং গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির উপর নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ-বিধি প্রয়োগ প্রসঙ্গও। ভুক্তভোগীদের অনেকেরই অভিযোগ, বহু সংস্থাই এ দেশে তৈরি গাড়ি বিদেশের বাজারে ছ’টি বা তার বেশি এয়ার ব্যাগ দিয়ে বিক্রি করলেও এ দেশে তা বিক্রি করে দু’টি বা বড়জোর চারটি এয়ার ব্যাগ দিয়ে। সরকারের তরফে সব গাড়িতে অন্তত ছ’টি এয়ার ব্যাগ থাকা বাধ্যতামূলক করার সময়সীমা গত জানুয়ারিতে পেরোলেও এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এই অসচেতনতার উদাহরণ দেখেছে সম্প্রতি এই শহর। দিনকয়েক আগে কলকাতার বন্দর এলাকায় ঘটে একটি পথ দুর্ঘটনা। যেখানে কলকাতা পুরসভার এক কাউন্সিলরের ছেলের গাড়ির উপরে মালবাহী লরি পড়ে যায়। গাড়িটি চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে মৃত্যু হয় কাউন্সিলর-পুত্রের। ওই গাড়িতে দু’টির বেশি এয়ার ব্যাগ ছিল না। ফলে কাউন্সিলর-পুত্রের সিট বেল্ট পরে থাকা বা না-থাকা পার্থক্য করতে পারেনি।

এ বার সাইরাস মিস্ত্রির মতো এক জনের মৃত্যুর পরে নতুন করে তোড়জোড় শুরু হয়েছে অক্টোবর থেকেই গাড়িতে এয়ার ব্যাগের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার।

গাড়ি প্রস্তুতকারী একটি সংস্থার কলকাতা জ়োনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মনোজ মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘একটি এয়ার ব্যাগে ৯০০ টাকা খরচ পড়ে। এয়ার ব্যাগ বাড়ালে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথচ অনেক সময়ে কম এয়ার ব্যাগের মডেল পছন্দ করেন ক্রেতারাই। আসল বিষয় হল সচেতনতার অভাব।’’ কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক আধিকারিক বললেন, ‘‘এ বিষয়ে সচেতনতার কর্মসূচি পালনের ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। নজরদারির সময়ে জোর দেওয়া হবে, পিছনের আসনের যাত্রীরাও যাতে সিট বেল্ট পরেন তার উপরে।’’

Road accidents Death Seat belt Airbag

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।