Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
JU Student Death

যাদবপুরের ‘ভূমিকা’ নিয়ে একের পর এক চিঠি! কড়া সমালোচনার মুখে শেষমেশ ‘কঠোর’ নির্দেশ কর্তৃপক্ষের

প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যুতে অভিযোগের আঙুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দিকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে একের পর এক চিঠি আসছে তাঁদের কাছে। এর মধ্যেই পদক্ষেপ করলেন রেজিস্ট্রার।

Graphical representation

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ২৩:৪০
Share: Save:

সাঁড়াশি-চাপে যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন, জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন— এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একের পর এক চিঠি। তৎপর হয়ে সত্যানুসন্ধান কমিটি গড়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। এই পরিস্থিতিতে কঠোর হলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশের উপর জারি করা হল বিধিনিষেধ। তার পরেই প্রশ্ন উঠল, কেন এত দিন এ সব বিধিনিষেধ জারি করা হয়নি? লালবাজারে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ডিন অফ স্টুডেন্ট যদিও এর দায় চাপালেন ছাত্রদের উপরেই। জানালেন, পড়ুয়ারা বাধা দেন বলেই আইন থাকলেও তা প্রয়োগ করা যায় না।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শনে আসার কথা ছিল ইউজিসির এক প্রতিনিধি দলের। কিন্তু তারা আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়েছিল, তাঁদের পাঠানো রিপোর্টে ‘সন্তুষ্ট’ হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি প্রতিনিধি দল। যদিও কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল তার উল্টোটা। বৃহস্পতিবার ইউজিসি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিল, কর্তৃপক্ষের পাঠানো ওই রিপোর্টে তারা ‘অসন্তুষ্ট’। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২টি প্রশ্নের জবাব তথ্য-সহ পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। না-পাঠালে ধরে নেওয়া হবে, কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। সে ক্ষেত্রে ইউজিসির র‌্যাগিং-বিরোধী নীতি মেনে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিল কমিশন।

ইউজিসির মতোই ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন। কর্তৃপক্ষের পাঠানো রিপোর্টে তারাও ‘অসন্তুষ্ট’ বলে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, শো-কজের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু যে জবাব দিয়েছেন, তা ‘দায়সারা’। তাতে কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রতিফলন ঘটেছে। নোটিস পাঠিয়ে কমিশন এই প্রশ্নও তুলেছে যে, র‌্যাগিং নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা এবং ইউজিসি-র নির্দেশাবলি কেন মানা হয়নি? যাঁরা ওই নির্দেশ অমান্য করেছেন, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি? আরও এক ধাপ এগিয়ে এই ঘটনার তদন্তের জন্য সত্যানুসন্ধান দল গঠন করেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। চার সদস্যের ওই কমিটি আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে যাদবপুর নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে রিপোর্ট জমা দেবে।

তৎপর হয়েছে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন। বৃহস্পতিবার রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জুকে চিঠি পাঠিয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্ক কানুনগো। যদিও সেই চিঠিতে ছাত্রের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে মৃত্যুর পরের দিনই যাদবপুর থানায় খুনের মামলা দায়ের হয়েছিল। পাশাপাশি, মৃত নাবালক হওয়া সত্ত্বেও চিঠির ভিতর তাঁর নামোল্লেখ করা হয়েছে। তাই তৎপরতা দেখালেও জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের এই পদক্ষেপ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

এই চাপের মধ্যেই সক্রিয় হয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। নির্দেশিকা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের উপর বিধিনিষেধ জারি করেছেন তিনি। রাত ৮টার পর থেকে সকাল ৭টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া ‘বৈধ’ পরিচয়পত্র লাগবে। তার পরেই প্রশ্ন, কেন বাকি সময় ছাড় দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ? তার জবাব যদিও মেলেনি। বিভিন্ন মহলের অভিযোগের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্স রজত রায় লালবাজারে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, র‌্যাগিং-বিরোধী আইন থাকলেও তা কার্যকর করা যায় না পড়ুয়াদের কারণেই। পুলিশ সূত্রেই এই খবর মিলেছে। তার পরেই আবার কাঠগড়ায় পড়ুয়ারা। ছাত্রের মৃত্যুতে ইতিমধ্যে ৯ জন পড়ুয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিনের এই মন্তব্যের পর তাঁদের দিকে আবারও ঘুরছে নজর। যদিও শিক্ষা মহলের একাংশ ডিনের এই মন্তব্য মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, পড়ুয়াদের সঠিক পথে চালনা করার ভার কর্তৃপক্ষেরই। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ থেকেই যাচ্ছে।

ইউজিসির ‘অসন্তোষ’

এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তা নিয়ে ইউজিসি-কে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেই রিপোর্ট নিয়ে বৃহস্পতিবার ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে ইউজিসি। শুক্রবারের মধ্যে তথ্য-সহ ১২টি প্রশ্নের জবাব তলব করেছে কমিশন। ওই সময়সীমার মধ্যে জবাব দিতে না পারলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। গত রবিবার, ১৩ অগস্ট ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছিল ইউজিসি। সোমবার, ১৪ অগস্ট রিপোর্ট পাঠিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। গত বুধবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার কথা ছিল ইউজিসির প্রতিনিধি দলের। যদিও তারা আসেনি। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে দাবি করা হয়, তাদের পাঠানো রিপোর্টে ‘সন্তুষ্ট’ হয়েছে বলেই পরিদর্শনে আসছে না ইউজিসি। যদিও বৃহস্পতিবার ইউজিসি স্পষ্ট জানাল, ওই রিপোর্টে তারা ‘অসন্তুষ্ট’। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুকে লেখা এক চিঠিতে ইউজিসি জানিয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিংয়ে লাগাম পরাতে ২০০৯ সালে কমিশন কিছু নীতি চালু করেছে। সেই নীতির শর্তগুলি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেনেছেন কি না, সে সবই জানতে চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, ভর্তির সময়ে ছাত্রদের যে ‘ব্রোশিওর’ দেওয়া হয়েছিল, তাতে কি র‌্যাগিং-বিরোধী হেল্পলাইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং-বিরোধী সংগঠনের নম্বর রয়েছে? সেই ‘ব্রোশিওর’ পাঠাতে হবে। যে সব পড়ুয়া হস্টেলে থাকতে ইচ্ছুক, তাঁদের কি অতিরিক্ত একটি হলফনামায় সই করিয়েছিল প্রতিষ্ঠান? এ রকমই ১২টি প্রশ্নের জবাব তথ্য-সহ না-পাঠালে মনে করা হবে, তাঁদের এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। সে ক্ষেত্রে ইউজিসির র‌্যাগিং-বিরোধী নীতির (২০০৯) ৯.৪ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় তৎপর রাজ্য সরকারের উচ্চ শিক্ষা দফতর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রুটি খুঁজতে তারা একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। চার সদস্যের ওই কমিটি আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে যাদবপুর নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে রিপোর্ট জমা দেবে। বৃহস্পতিবার উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যেই প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ওই ছাত্র র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা খতিয়ে দেখছে। এই কমিটিতে মোট চার জন সদস্য থাকছেন— উচ্চ শিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারপার্সন, উচ্চ শিক্ষা দফতরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিশেষ কমিশনার, রাজ্যের ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন এবং উচ্চ শিক্ষা সংসদের সদস্য-সচিব। বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমিটি তার কাজ শুরু করছে বলে জানিয়েছে উচ্চ শিক্ষা দফতর।

‘অসন্তুষ্ট’ শিশু সুরক্ষা কমিশন

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টে ‘অসন্তুষ্ট’ রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনও। বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে তারা। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, শো-কজের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু যে জবাব দিয়েছেন, তা ‘দায়সারা’। তাতে কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রতিফলন ঘটেছে। কমিশনের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নেওয়ার পরিবর্তে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার সব দায় ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছেন। তাঁরা ত্রুটি সংশোধন করে ব্যবস্থাপনার সংস্কারের কোনও চেষ্টা করেননি। র‌্যাগিংয়ের মতো নিয়মবিরুদ্ধ কাজ আটকানোর চেষ্টাও করা হয়নি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের ত্রুটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সমস্যার সমাধান করার কোনও মানসিকতা নেই তাঁদের। নোটিস পাঠিয়ে কমিশন এই প্রশ্নও তুলেছে যে, র‌্যাগিং নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা এবং ইউজিসি-র নির্দেশাবলি কেন মানা হয়নি? যাঁরা ওই নির্দেশ অমান্য করেছেন, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি? শিশু সুরক্ষা কমিশনের তরফে উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী গত রবিবার নদিয়ায় মৃত ছাত্রের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়ে এসেছিলেন তিনি। তার পর কমিশনের প্রতিনিধিরা যাদবপুরের ক্যাম্পাস এবং হস্টেল পরিদর্শন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। অভিযোগ, র‌্যাগিং সংক্রান্ত ইউজিসির নির্দেশিকা যাদবপুরে মানা হয়নি। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী, জানতে চেয়েছিল কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরে তারা এ বার ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে।

কড়া হল যাদবপুর

প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে ইউজিসি, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে। রাজ্যের শিক্ষা দফতর তথ্যানুসন্ধানী দল তৈরি করেছে। এর পরেই নড়েচড়ে বসেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্দেশিকা জারি করেছেন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু। পাশাপাশি, হস্টেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা জানিয়েছেন স্নেহমঞ্জু। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের দেওয়া ‘বৈধ’ পরিচয়পত্র ছাড়া রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করা যাবে না। পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হলে তা দেখাতে বাধ্য থাকবেন পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য যাঁরা আসবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অন্য কোনও ‘বৈধ’ পরিচয়পত্র দেখিয়ে তবেই প্রবেশ করা যাবে ক্যাম্পাস চত্বরে। গেটে রাখা থাকবে নথিভুক্তকরণের খাতা (রেজিস্টার)। প্রবেশকারী যে ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, তার বিষয়ে বিশদে সমস্ত তথ্য ওই খাতায় নথিভুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সব চার বা দু’চাকার গাড়ি প্রবেশ করবে, সেগুলিতে কর্তৃপক্ষের দেওয়া স্টিকার থাকতে হবে। যে সব গাড়িতে কর্তৃপক্ষের দেওয়া স্টিকার থাকবে না, প্রবেশের সময় সেগুলির রেজিস্ট্রেশন নম্বর গেটে জানাতে হবে। সে সব তথ্য রাখবেন নিরাপত্তারক্ষীরা। নিরাপত্তারক্ষীরা চাইলে গাড়িচালক এবং যাত্রীদের ‘বৈধ’ পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মাদকের ব্যবহার, আইন-বিরোধী কাজকর্ম নিষিদ্ধ। কেউ এ সব করতে গিয়ে ধরা পড়লে তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পড়ুয়াদের দিকে আঙুল ডিনের

প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুতে হস্টেল সুপার, ডিন-সহ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ডিন অফ স্টুডেন্ট রজত রায় পাল্টা পড়ুয়াদের দিকেই আঙুল তুলেছেন বলে জানা গিয়েছে। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, র‌্যাগিং-বিরোধী আইন থাকলেও তা প্রয়োগ করা কঠিন। কারণ হিসাবে তিনি দাবি করেন, ছাত্রছাত্রীরা আইন প্রয়োগে বাধা দেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টে থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রজতকে। তদন্তকারীদের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রজতের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন অফ স্টুডেন্টস হিসাবে তাঁর ভূমিকা কী? ডিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যাদবপুরে র‌্যাগিং-বিরোধী কোনও গোষ্ঠী বা দল (স্কোয়াড) আছে কি না। তদন্তকারীদের দাবি, রজত তাঁদের জানিয়েছেন, র‌্যাগিং-বিরোধী স্কোয়াড বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। যদি সেখানে কিছু খামতি থাকে, তবে তা শুধরে নেবেন বলেও তদন্তকারীদের জানিয়েছেন তিনি। হস্টেলে সিসি ক্যামেরা রয়েছে কি না, ছাত্রের পড়ে যাওয়ার কথা তিনি কী ভাবে জানতে পেরেছিলেন, এ সব প্রশ্নও রজতকে জিজ্ঞেস করা হয় বলে সূত্রের খবর। বুধবারও রজতকে ডেকে পাঠিয়েছিল লালবাজার। ওই দিন তিনি জানিয়েছিলেন, ছাত্রেরা তাঁকে ঘেরাও করে রেখেছে বলে যেতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার লালবাজারে উপস্থিত হন তিনি।

যাদবপুরের ছাত্রের ‘আত্মহত্যা’!

যাদবপুরের ছাত্রের মৃত্যুতে তৎপর জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন। বৃহস্পতিবার রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জুকে চিঠি পাঠিয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্ক কানুনগো। পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ওই পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলার পাশাপাশি কী কী পদক্ষেপ করা হল তা-ও কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে। জবাব দেওয়ার জন্য সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছে কমিশন। যদিও সেই চিঠিতেই ওই ছাত্রের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করেছে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন। যেখানে ছাত্রের মৃত্যুর পরের দিনই, ১১ অগস্ট যাদবপুর থানায় খুনের মামলা রুজু হয়। কী ভাবে এমনটা করল জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন, সেই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এর পাশাপাশি চিঠির ভিতর নাবালক ছাত্রের নামও উল্লেখ করেছে কমিশন। পড়ুয়ার মৃত্যুর পর ছাত্রের নাম প্রকাশ্যে এসেছিল। কিন্তু পরে জানা যায়, তার বয়স এখনও ১৮ বছর হয়নি। তা উল্লেখ করে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন জানায়, ওই ছাত্রের উপর যৌন হেনস্থা হয়ে থাকতে পারে। সেই কারণে এই মামলায় পকসো আইনের ধারাও যুক্ত হতে পারে। সংবাদমাধ্যমের কাছে ছাত্রের নাম এবং ছবি ব্যবহার না করার অনুরোধ করেন কমিশনের উপদেষ্টা। পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠানো চিঠিতে পকসো আইন যুক্ত করার কথা বলা হলেও ছাত্রের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ বার এই বিষয়টি আতশকাচের নীচে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy