প্রতীকী ছবি
সামনেই পুলিশ হাসপাতাল। তার উল্টো দিকে পুলিশ মিউজ়িয়াম। খাস কলকাতায়, ভবানীপুরের বেণীনন্দন স্ট্রিটের সেই পাড়া দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মঙ্গলবার গভীর রাতে। লাঠি, রড, হকি স্টিক নিয়ে এক পক্ষ চড়াও হয় অন্য পক্ষের উপরে। সেই পক্ষের বিরুদ্ধে আবার গুলি ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে। যদিও পুলিশের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বা অন্য কোনও মাধ্যমে গুলি চলার প্রমাণ মেলেনি। মারামারিতে অন্তত চার জন আহত হয়েছেন বলে খবর। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মারধর করা হয় এক মহিলাকেও। অভিযানে নেমে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার ভোরের মধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করেছে চার অভিযুক্তকে। ধৃতদের নাম রানা মুখোপাধ্যায়, বিশাল সর্দার, বিপ্লব মণ্ডল ও রবি সাউ।
ঠিক কী ঘটেছিল? স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বেণীনন্দন স্ট্রিটে পুলিশ হাসপাতালের পাশে ফুটপাত দখল করে ছাউনি দিয়ে একটি বসার জায়গা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে একটি রাজনৈতিক দলের কয়েক জন সমর্থক বসে থাকেন অনেক রাত পর্যন্ত। মঙ্গলবার রাতে তাঁদেরই এক জন, ভিকি সাউয়ের গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় রাস্তার উল্টো দিকের ওড়িয়া বস্তির একটি গোষ্ঠীর। বেণীনন্দন স্ট্রিটের পাশের রাস্তা নন্দন স্ট্রিটের বাসিন্দা এক মহিলা দাবি করেন, তাঁকেও মারধর করা হয়েছে। মহিলার কথায়, ‘‘আমার ছোট ছেলে আর ভাশুরের ছেলে মঙ্গলবার রাতে ওড়িয়া বস্তির একটি হোটেলে খেতে গিয়েছিল। সেখানে মদ্যপান করছিল ভিকির সঙ্গীরা। আমাদের ছেলেদের গালিগালাজ করতে থাকে তারা। সেই নিয়েই ঝামেলার শুরু। এর পরে ঘরে ঢুকে আমাকে মারা হয়েছে।’’
নিগৃহীতা মহিলার ভাশুরের ছেলে জানান, মঙ্গলবার রাতে তিনি অন্য পাড়ায় ফুটবল খেলে ফিরে বাড়িতে খাবেন না জানিয়ে দিয়েছিলেন। ওড়িয়া বস্তির একটি হোটেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেতে যান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর খুড়তুতো ভাই। ওই যুবকের দাবি, সেখানে তাঁর এক বন্ধুকে শাসানি দেয় ভিকির দলের কয়েক জন। ওই যুবক বলেন, ‘‘আমার ওই বন্ধুকে বাড়িছাড়া করার হুমকি দেওয়ায় আমি প্রতিবাদ করি। তখন ভিকির দলের ওই ছেলেটিকে মারধর করে আমার বন্ধুরা। পরে তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। ওই ছেলেটিই এর পরে ভিকিকে ফোন করে। সে দলবল নিয়ে আমাদের উপরে চড়াও হয়।’’
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘তখন রাত প্রায় দেড়টা। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বাড়ির বারান্দায় গিয়ে দেখি, লাঠি, রড হাতে এক দল ছেলে চিৎকার করতে করতে যাচ্ছে। যাঁকে পাচ্ছে, তাঁকেই মারছে। কিছু ক্ষণ পরে ওড়িয়া বস্তি থেকে এক দল ছেলেকে ছুটে আসতে দেখি। কানে আসে গুলির আওয়াজ। ভয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিই।’’
বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, পরিস্থিতি তখনও থমথমে। প্রায় কেউই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। তবে ভবানীপুর থানার তদন্তকারীদের দাবি, গন্ডগোলের খবর পেয়ে রাতেই যায় পুলিশের বিশাল বাহিনী। প্রথমে কয়েক জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হলেও পরে গ্রেফতার করা হয় চার জনকে। উভয় পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। যদিও পুলিশের তরফে গুলি চলার কথা স্বীকার করা হয়নি। যোগাযোগ করা যায়নি ভিকি বা তাঁর দলবলের কারও সঙ্গেও। ভিকির বাড়িতে গেলে তাঁর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাত থেকে ভিকি বাড়ি ফেরেনি। রাজনীতি করে বলে ওকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy