—ফাইল চিত্র।
‘রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এ বার দেহ নিয়ে যেতে পারবেন’— হাসপাতাল থেকে এমন খবর পেয়েই শববাহী গাড়ি, ফুল, মালা নিয়ে পরিজনেরা পৌঁছে গিয়েছিলেন। কাগজপত্র তৈরি হওয়ার পরে মর্গ থেকে মৃতদেহ নিতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার অবস্থা পরিবারের তিন জামাইয়ের। দেখলেন, যে দেহটি দেওয়া হচ্ছে সেটি তাঁদের শাশুড়ির নয়। সেই দেহ অন্য কোনও বৃদ্ধার, যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন! এর পরে তাঁরা জানতে পারলেন, তাঁদের শাশুড়ির দেহ করোনা রোগীর দেহ হিসেবে দাহ করে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকালে শিয়ালদহের বি আর সিংহ রেল হাসপাতালে এমন ঘটনার কথা সামনে আসার পরে হকচকিয়ে গিয়েছেন কর্তৃপক্ষও। শেষমেশ তাঁরাও স্বীকার করেছেন, মৃতদেহ বদলে গিয়েছে! কিন্তু কী ভাবে কী ঘটেছে তা জানতে চার চিকিৎসকের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি কলকাতা পুরসভা ও পুলিশকেও জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাওড়ার মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোডের বাসিন্দা কল্পনা ভকত (৬৭) দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১ অগস্ট আচমকাই শারীরিক অবস্থার অবনতির সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। তখন কল্পনাদেবীকে শিয়ালদহের ওই রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলেই জানান তাঁর ছোট জামাই রাজীব দে। তিনি আরও জানান, শ্বাসকষ্ট থাকায় ওই বৃদ্ধাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। গত ৩ অগস্ট দুপুরে বৃদ্ধার লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তবে ওই দিন রাতেই মৃত্যু হয় কল্পনাদেবীর।
বৃদ্ধার পরিজনেরা জানান, হাসপাতাল থেকে তাঁদের জানানো হয় কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। তত ক্ষণ মৃতদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা থাকবে। রাজীব বলেন, ‘‘সেই মতো বুধবার হাসপাতালে আসলেও জানানো হয় রিপোর্ট আসেনি। পরের দিন বৃহস্পতিবার ফের সকালে হাসপাতালে এলে বলা হয়, বিকেলে রিপোর্ট আসবে। কিন্তু তখনও আসেনি।’’ এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ রাজীবকে ফোন করা হয় বি আর সিংহ হাসপাতাল থেকে। জানানো হয়, কল্পনাদেবীর কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। খবরটা শুনে এ দিন সকালে বৃদ্ধার তিন জামাই ও অন্যান্য পরিজন মিলে হাওড়া থেকে শববাহী গাড়ি-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করে শিয়ালদহে পৌঁছে যান। কিন্তু মর্গে গিয়ে তাঁরা দেখেন যে মৃতদেহটি দেওয়া হচ্ছে তা কল্পনাদেবীর নয়।
বিষয়টি জানতে পেরেই নড়েচড়ে বসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, করোনা আক্রান্ত অন্য এক বৃদ্ধার সঙ্গে এই বৃদ্ধার দেহ বদল হয়ে গিয়েছে। রাজীব বলেন, ‘‘হাসপাতাল ভুল স্বীকার করছে ঠিকই। কিন্তু কী ভাবে ডেথ সার্টিফিকেট পাব, তা বুঝতে পারছি না।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ৩ অগস্ট দু’জন বৃদ্ধাই মারা যান। কল্পনাদেবীর রিপোর্ট বৃহস্পতিবার রাতে এসেছে। কিন্তু অন্য বৃদ্ধার পজ়িটিভ রিপোর্ট চলে আসায় ৫ অগস্ট পুরসভাকে খবর দেওয়া হয়। করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধার বদলে তাঁর পরিজনেদের উপস্থিতিতে কল্পনাদেবীর দেহ সৎকারের জন্য তুলে দেওয়া হয় পুরসভার হাতে।
হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দুলালচন্দ্র ভুঁইয়া বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধার পরিজনেরা দেহটি দেখে শনাক্তও করেছিলেন। সেটা ভিডিয়ো করা রয়েছে। তাঁরাও কী ভাবে ভুল করলেন বুঝতে পারছি না। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’’ তবে কল্পনাদেবীর এক আত্মীয় রাহুল দের প্রশ্ন, ‘‘কেউ কি তাঁর পরিজনের দেহ চিনতে ভুল করেন? আর তা করলেও মৃতদেহের শরীরে যে কাগজ লাগানো থাকে তাতে কি করে ভুল করল হাসপাতাল?"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy