Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
tumor

কাটাছেঁড়া ছাড়াই শ্বাসনালি থেকে বেরোল টিউমার

২০১৭ সালে প্রস্টেটে ক্যানসার ধরা পড়ায় শহরেরই এক বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় লক্ষ্মীকান্তবাবুর।

লক্ষ্মীকান্ত দাস

লক্ষ্মীকান্ত দাস

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:১৮
Share: Save:

শ্বাসকষ্ট এবং কাশি নিয়ে গত আট মাস ধরে ভুগছিলেন রোগী। হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে প্রায় পুরোপুরি অক্সিজেন-নির্ভর হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মূল চিকিৎসা-পর্ব শেষ করার মাত্র দশ মিনিটেই তিনি মুক্তি পেলেন সেই অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে। রোগীর কথায়, ‘‘ওই মুহূর্ত থেকেই যেন নতুন জীবন শুরু হল।’’ সেই রোগী, মালদহের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত দাস (৭৪) এখন স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন।

পরিবার সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে প্রস্টেটে ক্যানসার ধরা পড়ায় শহরেরই এক বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় লক্ষ্মীকান্তবাবুর। সে সময়ে তাঁর ফুসফুসে ছোট টিউমার নজরে এলেও চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, সেটি ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শ্বাসকষ্ট এবং কাশি শুরু হয় বৃদ্ধের। সমস্যা বাড়তে থাকায় স্থানীয় চিকিৎসক এক্স-রে করে দেখেন, রোগীর ডান ফুসফুস সাদা হয়ে গিয়েছে। কফ পরীক্ষায় যক্ষ্মার জীবাণু ধরা পড়লে চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু তাতে বিশেষ ফল মেলেনি। তখন সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, লক্ষ্মীকান্তবাবুর ডান শ্বাসনালি অবরুদ্ধ। সেটার জন্যই এই সমস্যা।

বৃদ্ধকে নিয়ে পরিজনেরা কলকাতায় আসেন। বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে শুরু হয় চিকিৎসা। চিকিৎসক ব্রঙ্কোস্কোপি করে দেখেন, টিউমারটি ডান শ্বাসনালির মুখ জুড়ে থাকায় শ্বাসবায়ুর পথ সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে রয়েছে। বুক কেটে অস্ত্রোপচার করাই ছিল উপায়। কিন্তু তা রোগীর পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ হবে মনে করে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের কথা ভাবেন ওই হাসপাতালের বক্ষরোগ চিকিৎসক দেবরাজ যশ। ‘থেরাপিউটিক ব্রঙ্কোস্কোপি প্রসিডিয়োর’, যাকে ইলেক্ট্রোকটারি স্নেয়ার পদ্ধতি বলা হয়, তার মাধ্যমে কয়েক মিনিটেই বার করে আনা হয় টিউমার।

আরও খবর: সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত রাজ্যে, মুখ্যসচিব ও ডিজি-র সঙ্গে বৈঠকের পর টুইট রাজ্যপালের

কী ভাবে হয় এই চিকিৎসা? প্রথমে রোগীকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়। ব্রঙ্কোস্কোপি করার মতোই আরও আধুনিক এই যন্ত্র শ্বাসনালিতে ঢুকিয়ে অত্যধিক তাপ উৎপন্ন করে তার দেওয়াল থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় টিউমার। তার পরে আংটার মতো একটি যন্ত্রের সাহায্যে সেটি তুলে আনা হয়। দেবরাজ জানাচ্ছেন, টিউমারটি বায়োপসির পরে জানা যায়, সেটি এপি ডার্ময়েড ক্যানসার প্রকৃতির। রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপি নয়, অস্ত্রোপচার করে বার করাই ছিল ওই টিউমারের একমাত্র চিকিৎসা।

আরও খবর: চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বুদ্ধদেব, স্বাভাবিক রক্তচাপ, পালস রেট

শহরে প্রায় নতুন এই থেরাপিউটিক ব্রঙ্কোস্কোপি পদ্ধতিকে স্বাগত জানাচ্ছেন অন্য চিকিৎসকেরা। ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক জন রোগীর পক্ষে কাটাছেঁড়া ছাড়া নিরাময়ের এই পদ্ধতিতে যেমন শারীরিক ধকল কম হবে, তেমনই সাশ্রয় হবে খরচে। রোগীর কষ্ট দ্রুত কমবে। এমন পদ্ধতি জরুরি।”

এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি হাসপাতালে এই পদ্ধতির প্রয়োগ হয়নি। এসএসকেএমের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “থেরাপিউটিক ব্রঙ্কোস্কোপি প্রসিডিয়োরে ইলেক্ট্রোকটারি করে টিউমার কাটার পরে আর্গন প্লাজ়মা কোয়াগুলেশন (এপিসি) পদ্ধতি কোষে স্পর্শ করিয়ে রক্তপাত বন্ধ করা হয়। এখনও কোনও মেডিক্যাল কলেজে এই পদ্ধতি নেই।” আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর অরুণাভ দত্তচৌধুরীর কথায়, “এই যন্ত্র দিয়ে শুধু টিউমার বার করাই সহজ হবে না, ব্রঙ্কোস্কোপি করে বায়োপসি করতে গিয়ে রক্তপাত হলে তা বন্ধ করতেও এই যন্ত্র উপযুক্ত। এই যন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কোভিডের জন্য বিষয়টি আটকে গিয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

tumor Surgery-less CT scan treatment oxygen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy