Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Tricolor

মাস্কেও তেরঙা! অতি উৎসাহে বিধিভঙ্গ

২৪টি দণ্ডযুক্ত নীল রঙের অশোকচক্র-সহ ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা কোথায় এবং কী ভাবে ব্যবহার করা যাবে, তার নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে।

জাতীয় পতাকার রঙে অশোক চক্র আঁকা মাস্ক। বড়বাজারে। নিজস্ব চিত্র

জাতীয় পতাকার রঙে অশোক চক্র আঁকা মাস্ক। বড়বাজারে। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০৩:০৫
Share: Save:

এ বার মাস্কেও তেরঙা! করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সকলেই মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ ঢাকছেন। তাকেই হাতিয়ার করে শহর জুড়ে পথ-নিরাপত্তার মতো বিভিন্ন প্রচার চলছে। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ বা রাখিবন্ধনের প্রচারেও মাস্ক পরা মুখ।

উদ্যোক্তাদের দাবি, ‘‘এ ভাবে একই সঙ্গে দু’টি বিষয়ে সচেতন করার কাজ হচ্ছে।’’ স্বাধীনতা দিবসের আগে বাজারে ছেয়ে গিয়েছে জাতীয় পতাকা ছাপানো মাস্ক। প্রশ্ন হল, জাতীয় পতাকা কি মাস্কে ব্যবহার করা যায়?

২৪টি দণ্ডযুক্ত নীল রঙের অশোকচক্র-সহ ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা কোথায় এবং কী ভাবে ব্যবহার করা যাবে, তার নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। ভারতীয় আইন অনুসারে সব সময়ে ‘মর্যাদা, আনুগত্য ও সম্মান’-সহ জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা উচিত। ‘প্রতীক ও নাম (অপব্যবহার রোধ) আইন ১৯৫০’ অনুসারে জারি করা ‘ভারতীয় পতাকা বিধি, ২০০২’ অনুযায়ী পতাকার প্রদর্শনী ও ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকা রয়েছে। তাতে বলা আছে, জাতীয় পতাকা কখনও মাটি বা জল স্পর্শ করবে না। জাতীয় পতাকা দিয়ে কোনও মূর্তি, নামলিপি বা শিলান্যাস প্রস্তর ঢাকা যাবে না। ২০০৫ সালে সরকার পতাকা-বিধি সংস্কার করে কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। তবে বালিশের ঢাকনা বা রুমালে জাতীয় পতাকা বা অন্য প্রতীক আঁকা বা পতাকার গায়ে কোনও কিছু লেখা নিষিদ্ধই রয়েছে।

বর্ষীয়ান রাজনীতিক তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জাতীয় পতাকার অপব্যবহার অবশ্যই অসম্মানের। কিছু মানুষ অতি উৎসাহে আইন ভাঙছেন।’’

শহরবাসীর একটি অংশেরও মত, ‘‘এটি অতি উৎসাহের ফল!’’ প্রতি বছরই স্বাধীনতা দিবসের আগে পতাকা, হাত-ব্যান্ড, টুপি, গোল বা পতাকার আকারের ব্যাজ মেলে। এ বার পতাকার তেরঙায় রঞ্জিত মাস্ক এল। কোনও মাস্কে তেরঙার মাঝে অশোকচক্র ও নেতাজির ছবি এবং ১৫ অগস্ট লেখা রয়েছে। আবার কোনওটিতে হলুদ-সবুজ ছোপের উপরে গোলাকৃতি ব্যাজের মতো রয়েছে জাতীয় পতাকার প্রতিচ্ছবি। চারধারে ইংরেজিতে লেখা, ভারতবাসী হিসেবে আমি গর্বিত। অনেক বিক্রেতাই জানাচ্ছেন, এ বছর অনেক সংগঠনই তেরঙা মাস্ক বিলির বরাত দিয়েছেন।

মানুষের একাংশের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা কম থাকায় মাস্কে তেরঙার ব্যবহার ঘটছে, মনে করছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আইন না মেনে যে যা খুশি করছেন। তেরঙা মাস্ক ব্যবহার করে একটি অংশ ভাবছেন, এতে দেশপ্রেম প্রকাশ পাচ্ছে। আসলে এটা ব্যবহারের যে বিধিনিষেধ আছে, সেটাই মাথায় থাকে না!” ক্রেতাদেরও একটি অংশের মত, মাস্কে জাতীয় পতাকা বা মনীষীর ছবি না থাকাই উচিত। কারণ হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময়ে থুতু ছিটকানো বন্ধ করতেই ওই মাস্ক। সে সব ওই প্রতীকে গিয়ে পড়বে। তা ছাড়া ব্যবহারের পরে মাস্ক যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হবে।

ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ের মত, ‘‘গেরুয়া, সাদা ও সবুজ রং এখন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার হচ্ছে। এ থেকে প্রমাণ হচ্ছে দেশবাসী দেশকে ভালবাসতে শিখেছেন। তার সঙ্গে যদি জাতীয় অনুভূতি ও আবেগ যুক্ত হয় তা হলে বুঝতে হবে জাতীয় চেতনা ছড়িয়ে পড়ছে।’’ তবে নির্দিষ্ট কোনও মনীষীর ছবি ব্যবহার করা উচিত নয় বলেই মনে করেন রজতবাবু। তিনি এ-ও মনে করেন, নৈতিক ভাবে অশোকচক্রের ব্যবহারও ঠিক নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Tricolor, Mask Coronavirus in Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy