সাম্প্রতিক কালে পিজিতে অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভর্তি রাখা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। ফাইল ছবি
‘সমালোচনা’ থেকে শিক্ষা নিয়ে কি অন্য পথে হাঁটতে চাইছে এসএসকেএম হাসপাতাল?
অতীত থেকে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গিয়েছে, পিজি-তে প্রভাবশালী কেউ ভর্তি হলেই তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডে থাকেন পছন্দের বা পরিচিত চিকিৎসকেরা। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে ওই শিক্ষক-চিকিৎসকদের। সূত্রের খবর, সেই ধারাবাহিকতা পাল্টে ফেলছে এসএসকেএম। স্থির হয়েছে, সাধারণ রোগীদের জন্য যে নিয়ম রয়েছে, সেটাই মেনে চলা হবে নেতা-মন্ত্রী বা অন্য কারও মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, তাঁর ভর্তির দিনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের যে ইউনিটের বহির্বিভাগ থাকবে, ওই ইউনিটের চিকিৎসকের অধীনেই তাঁকে ভর্তি হতে হবে।
সাম্প্রতিক কালে পিজিতে অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভর্তি রাখা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত অনুব্রত সিবিআইয়ের ডাক পাওয়ার পরেই হাজিরা এড়াতে শারীরিক সমস্যা দেখিয়ে দীর্ঘ দিন ভর্তি ছিলেন পিজির উডবার্ন ব্লকে। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, কেন সরাসরি উডবার্ন ব্লকে জায়গা হল অনুব্রতর? এ নিয়ে এতটাই বিতর্ক হয় যে, পিজি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশও বিব্রত বোধ করতে শুরু করেন। অনেক চিকিৎসকই অহেতুক মানসিক ‘চাপ’ নিতে নারাজ ছিলেন। অন্য দিকে, শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেন সরাসরি উডবার্ন ব্লকে ভর্তি না হন, তেমন মন্তব্যও শোনা গিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতির মুখ থেকে।
ফলে ইডি-র হাতে গ্রেফতারির পরে দু’দিন কার্ডিয়োলজি বিভাগের কেবিনে ভর্তি ছিলেন পার্থ। রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তথা পূর্ব ভারতের উৎকর্ষ কেন্দ্র এসএসকেএম প্রভাবশালীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে বলে তখন নির্দেশনামায় উল্লেখ করেছিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। আদালতের নির্দেশে পার্থকেভুবনেশ্বর এমসে নিয়ে গেলে সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ভর্তির প্রয়োজন নেই। তাতে আরও সমালোচিত হতে হয় এসএসকেএম-কে। একাধিক চিকিৎসক সংগঠন প্রশ্ন তোলে, ‘চিকিৎসকেরা কেন আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবেন? কেন একদল রাজনৈতিক নেতার ‘আশ্রয়স্থল’ হয়ে হাসপাতালের গরিমা নষ্ট হবে?’
চিকিৎসক মহল জানাচ্ছে, শুধু অনুব্রত বা পার্থই নন। আগেও মদন মিত্র, আরাবুল ইসলামের মতো আরও অনেকে বিভিন্ন সময়ে এসে ভর্তি হয়েছেন এই হাসপাতালে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাধারণের কাছে তির্যক মন্তব্য শুনতে হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ডে থাকা চিকিৎসকদের। এই প্রশ্নও উঠছিল, ‘‘কেন সব ক্ষেত্রেই একই চিকিৎসকদের রাখা হয়?’’ সূত্রের খবর, কেন বার বার তাঁদের এবং প্রতিষ্ঠানকে ‘কাঠগড়ায়’ তোলা হবে, তা নিয়ে বিরক্ত হতে থাকেন এসএসকেএমের চিকিৎসকদের একাংশও।
গোটা বিষয়ে বিব্রত বোধ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। চিকিৎসকদের মনোবলে যাতে ধাক্কা না লাগে, সে জন্যই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলার পক্ষে সম্মতি দেন সকলে। তারই প্রথম ধাপ হিসাবে সম্প্রতি অনুব্রতকে পরীক্ষার পরে ভর্তির প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দেন মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যেরা। মেডিক্যাল রিপোর্টে এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়, ক্রনিকসমস্যার জন্য হাসপাতালে এলে নির্দিষ্ট রোগের বহির্বিভাগে দেখাতে হবে অনুব্রতকে। দ্বিতীয় ধাপে স্থির হয়েছে, কোনও বিভাগের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসক নন, ভর্তি হতে হবে ওই দিনের ইউনিটের চিকিৎসকের অধীনেই।
এসএসকেএমের এক বর্ষীয়ান চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ভিন্ রাজ্যের হাসপাতালে এই পদ্ধতিই মেনে চলা হয়। মন্ত্রী-নেতা বা অন্য খ্যাতনামা যিনিই ভর্তি হোন, তাঁকে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের চিকিৎসকের অধীনে থাকতে হয়। তিনি প্রয়োজন মনে করলে অন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।’’
প্রশ্ন হল, নীতি হিসাবে ঘোষণা না-হয় হল, কিন্তু এই নিয়ম কতটা মানতে পারবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? উপরমহলের চাপে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদল করতে হবে না তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy