Advertisement
E-Paper

ভিডিয়ো চ্যাটের আমন্ত্রণেই পাতা প্রতারণার ফাঁদ

ফোনে এ কথা শুনে তখন আকাশ থেকে পড়ছেন তাঁরা। কী ভাবে, কখন, কোথায় তিনি এই অপরাধ করেছেন— তা ভেবে না-পাওয়ার সময়টুকুর মধ্যেই ফের ফোন আসছে ‘থানা থেকে’।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৪
Share
Save

সোশ্যাল মিডিয়ায় সদ্য পাতানো বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে বিপদে পড়ছেন অনেকে। কথা বলার কিছু পরেই ফোন আসছে পুলিশের নাম করে। বলা হচ্ছে, “আপনার বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। থানায় দেখা করবেন।” নয়তো বলা হচ্ছে— “আপনি হুমকি দিয়ে তোলা তুলছেন বলে অভিযোগ এসেছে। সেই অপরাধের অডিয়ো এবং ভিডিয়ো রেকর্ডিং রয়েছে। সেগুলি অভিযোগকারী থানায় জমা দিয়েছেন!”

ফোনে এ কথা শুনে তখন আকাশ থেকে পড়ছেন তাঁরা। কী ভাবে, কখন, কোথায় তিনি এই অপরাধ করেছেন— তা ভেবে না-পাওয়ার সময়টুকুর মধ্যেই ফের ফোন আসছে ‘থানা থেকে’। মধ্যস্থতা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এর পরে মোটা টাকা দাবি করছেন ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকছে হুমকি। পাঠানো হচ্ছে একের পর এক আপত্তিকর ভিডিয়ো ক্লিপিং। যাঁর থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে, ওই সব ভিডিয়ো ক্লিপিংয়ে দেখা যাচ্ছে খোদ সেই ব্যক্তিকেই!

সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই প্রতারণা চক্রের রমরমা চলছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। গত তিন মাসে এই চক্রের দ্বারা প্রতারিত এবং ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েছেন বলে লালবাজারের সাইবার শাখার দ্বারস্থ হয়েছেন অনেকে। অভিযোগকারীদের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় সদ্য পাতানো বন্ধুর সঙ্গে ভিডিয়ো এবং অডিয়ো চ্যাটের পরেই এই ঘটনা শুরু হয়েছে। কোথাও কথার মাঝখানে চালু করে দেওয়া হয়েছে পর্ন ক্লিপ। কোথাও ব্যবহারকারী বুঝতেই পারেননি যে, তাঁর ভিডিয়ো বা অডিয়ো চ্যাটটি রেকর্ড করা হচ্ছে।

তদন্তকারীদের চিন্তা আরও বাড়িয়ে সম্প্রতি পুলিশের জালে ধরা পড়েছে দিল্লির একটি দল। তদন্তে জানা গিয়েছে, ছ’জনের ওই দলের প্রত্যেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে সেগুলি আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। তার পরে সেই অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব করত। কোনও ‘বন্ধু’কে নিশানা করার পরে অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে তাঁর ছবিতে লাইক-কমেন্ট করে ঘনিষ্ঠতা বাড়াত। এর পরে মেসেজে শুরু হত কথোপকথন। দিনকয়েকের মধ্যেই সেই ‘বন্ধু’কে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো চ্যাট করার জন্য ডাকত তারা। আর সেই চ্যাটের আড়ালে সেই ‘বন্ধু’র ভিডিয়ো ফুটেজ তুলে নেওয়া হত। এক বার ভিডিয়ো চ্যাট করা হয়ে গেলে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিত তারা। তার পরে নিপুণ ভাবে নানা আপত্তিকর এবং অপরাধমূলক ভিডিয়োয় সেই ফুটেজ ব্যবহার করা হত। এর পরে প্রতারণা চক্রের কোনও সদস্য পুলিশ হিসেবে যোগাযোগ করত ওই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সঙ্গে। তাঁকে ভিডিয়ো ক্লিপ পাঠিয়ে শুরু হত ব্ল্যাকমেল।

ধৃতদের ডেরায় হানা দিয়ে ১৮টি মোবাইল ফোনে ছ’শোরও বেশি এমন ভিডিয়ো তদন্তকারীরা পেয়েছেন বলে খবর। উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু সিম কার্ড। সেগুলি অন্ধ্রপ্রদেশের নানা এলাকা থেকে ভুয়ো নথি জমা দিয়ে তোলা হয়েছিল। হুমকি দিয়ে টাকা হাতানো হয়ে গেলে সেই সিম কার্ডও বদলে ফেলা হত। ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নিয়ে এবং ভিডিয়ো চ্যাটে পাওয়া ছবি ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর মোবাইল নম্বরও টেলি অপারেটিং সংস্থার মাধ্যমে জেনে নিত ওই চক্রের সদস্যেরা।

এ রাজ্যেও তেমনই কোনও চক্রের রমরমা শুরু হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় এ নিয়ে ধন্দে পুলিশ। লালবাজারের সাইবার শাখার এক আধিকারিক বললেন, “রাজ্যের নানা প্রান্তে সূত্রের খোঁজ চলছে। বেশ কয়েকটি দল ভিন্‌ রাজ্যে গিয়েও কাজ করছে। তবে আপাতত স্রেফ সতর্ক হওয়াই সম্বল। এমন কিছু ঘটলেই পুলিশের দ্বারস্থ হোন।” ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, “এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকেই সতর্ক হতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও অপরিচিতের সঙ্গে কথাবার্তা চালানো যাবে না। ভিডিয়ো চ্যাট তো নয়ই। তা ছাড়া নিজের ছবি বা ব্যক্তিগত পোস্ট যতটা সম্ভব বাছাই লোকেদের সঙ্গেই শেয়ার করতে হবে। না-হলে বিপদ অবধারিত!”

Trapped Video Chat

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}