বিক্ষোভ: এসপ্লানেড-খিদিরপুর-টালিগঞ্জ রুটে ট্রাম ফের চালু করার দাবিতে পথে ট্রামপ্রেমীরা। রবিবার, খিদিরপুর ডিপোর সামনে। নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ট্রামের যে ক’টি ঘোষিত বৈদ্যুতিক রুট চালু আছে, তার অন্যতম ৩৬ নম্বর বা এসপ্লানেড-খিদিরপুর-টালিগঞ্জ রুটটি। ময়দানের সবুজ ছুঁয়ে চলা ওই রুটের ট্রাম বহু দিন আগেই ঠাঁই পেয়েছিল ছবির পোস্টকার্ডে। এ দিকে ঘূর্ণিঝড় আমপানের পরে শহরের অন্য কয়েকটি রুট ফের সচল হলেও ৩৬ নম্বর নিয়ে কোনও সাড়াশব্দ নেই পরিবহণ দফতরের। ট্রামপ্রেমীদের আশঙ্কা, তবে কি পোস্টকার্ডের পরে এ বার পুরনো এই রুটের ঠাঁই হবে স্মৃতির ঘরে?
শুধু যে সবুজ ময়দানের কারণেই এই রুটের আকর্ষণ ছিল, তেমনটা নয়। খিদিরপুর এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই ছিলেন এর নিত্যযাত্রী। অতিমারি পূর্ব পরিস্থিতিতে ওই রুটে দৈনিক প্রায় ৬-৭ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন। সকাল এবং সন্ধ্যায় ভিড় হত চোখে পড়ার মতো। কার্যত তাঁদের দাবিতেই অবিলম্বে ওই রুট সচল করার জন্য রবিবার খিদিরপুর ডিপোর সামনে ‘কলকাতা ট্রাম ইউজ়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে বিক্ষোভ দেখানো হল। ট্রামপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা ছাড়াও একাধিক সাইকেল এবং পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা এ দিনের বিক্ষোভে শামিল হন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত ওই বিক্ষোভ চলে বলে খবর। ট্রামপ্রেমী সংগঠনের অভিযোগ, রুটের বিভিন্ন অংশে ছিঁড়ে যাওয়া ওভারহেড তার মেরামত করা হলেও ট্রাম চালানো হচ্ছে না। যদিও খিদিরপুর ডিপোর অংশের ওভারহেডের তার কয়েক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এখনও জোড়া লাগানো হয়নি বলেও অভিযোগ।
আগে এসপ্লানেড থেকে ছেড়ে খিদিরপুর হয়ে ওই রুটের ট্রাম কালীঘাট ব্রিজ পেরিয়ে টালিগঞ্জ পর্যন্ত চলত। কিন্তু সেতুর স্বাস্থ্যের যুক্তি দেখিয়ে সেখানে হাইট বার বসানোর ফলে ওই রাস্তা দিয়ে ট্রাম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ট্রামপ্রেমী সংগঠনের অভিযোগ, সারা পৃথিবী জুড়ে যেখানে দূষণমুক্ত গণ পরিবহণের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কলকাতায় ট্রামকে কোণঠাসা করা হচ্ছে! যে রুটে যাত্রী সংখ্যা যথেষ্ট ছিল, সেখানেই ট্রাম বন্ধ করে গণ পরিবহণে এর গুরুত্ব কমিয়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন সমাবেশে আসা বিক্ষোভকারীরা।
ট্রামপ্রেমী সংগঠনের অন্যতম সংগঠক, দেবাশিস ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘সারা বিশ্ব কম খরচের পরিবেশবান্ধব পরিবহণ হিসাবে ট্রামের গুরুত্ব বুঝেছে। অথচ এ শহরে ট্রামকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বসিয়ে রেখে ট্রাম নষ্ট করা হচ্ছে। পরিকল্পনা করে চালাতে পারলে বাসের তুলনায় ট্রামের কার্যকারিতা কোনও অংশে কম হত না।’’ পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ওই রুট নিয়ে কিছু জটিলতা থাকায় সেটি চালু
করা যায়নি। ট্র্যাফিক পুলিশের পক্ষ থেকেও কিছু সমস্যার কথা জানানো হয়েছে বলে খবর। তবে ৩৬ নম্বর রুটটি পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই আশ্বাস দিচ্ছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy