যশ দাশগুপ্ত।
কয়েক মাস আগেই তাঁদের সম্পর্ক এবং বন্ধুত্ব নিয়ে মুখর হয়েছিল টলিউড। অতিসক্রিয় হয়েছিল নেটমাধ্যম। তৃণমূলের অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত জাহান এবং টলিউডের নায়ক যশ দাশগুপ্তের সেই বন্ধুত্বের খবর বাসি হতে না হতেই চমক! বুধবেলায় যশ যোগ দিলেন বিজেপি-তে। বান্ধবী জোড়াফুলের সাংসদ। বান্ধব পদ্মফুলে। ঘটনাচক্রে, যশের সঙ্গেই টলিপাড়ার আরও বেশ কয়েকজন অভিনেত্রী এবং কলাকুশলীও বিজেপি-তে গিয়েছেন। কিন্তু যশকে আলাদা করে দিচ্ছে নুসরতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। যা বলছে, হৃদয়ের সমীকরণ আর রাজনীতির সমীকরণ একই সরলরেখা ধরে চলে না। যশের যোগদানকে বিজেপি ‘চমক’ বলেই বর্ণনা করেছে। বস্তুত, কলকাতার একটি পাঁচতারায় যশের যোগদানের সময় যে হর্ষধ্বনি উঠল, তা সাম্প্রতিক কালে বিরল।
বিজেপি-তে যোগ দিয়ে যশ জানিয়েছেন, তিনি আচমকা এই সিদ্ধান্ত নেননি। তাঁর কথায়, ‘‘হুট করে এই সিদ্ধান্ত নিইনি। আমার মূল লক্ষ্য তরুণ প্রজন্ম। কারণ, আমার নিজেরও বয়স খুব একটা বেশি নয়। আমি জানি, বিজেপি সবসময় তারুণ্যের উপর ভরসা রেখেছে।’’ কেন তিনি রাজনীতিতে এলেন, বিনা প্রশ্নেই তার জবাব দিয়েছেন যশ। বলেছেন, ‘‘আমাদের সমাজে ছোট ছোট বিষয়েও রাজনীতি থাকে। এমনকি, বাড়ির কাজের লোকেদের মধ্যেও রাজনীতি থাকে। রাজনীতি তো সবসময় বদলের জন্য। আর বদল আনতে গেলে সিস্টেমের ভিতর থেকেই আনতে হয়। সেইজন্যই আমি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছি। আমায় বিজেপি পরিবারের সদস্য করার জন্য ধন্যবাদ।’’ যশের দাবি, বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তাঁর নুসরতের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘ও একটা পার্টিতে আছে। আমি একটা পার্টিতে আছি। ও আমার বন্ধু। কিন্তু ওর-আমার বন্ধুত্বটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে।’’ একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমি এখনও ভালবাসি। শ্রদ্ধা করি। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগেও আমি ওঁকে বার্তা পাঠিয়ে আশীর্বাদ চেয়েছি। ওঁকে আমার প্রণাম।’’
বুধবার বিজেপি-র দুই শীর্ষনেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায়ের হাত ধরে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেন যশ। তাঁর ‘বিশেষ বন্ধু’র বিপক্ষ শিবিরে যোগদান সম্পর্কে নুসরতের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে নিশ্চিত ভাবেই তাঁকে ভবিষ্যতে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। এবং সেই প্রশ্নে অভিনেত্রী-সাংসদের জবাব কী হতে পারে, তা অনুমানের জন্য কোনও পুরস্কার নেই। সম্ভবত নুসরত বলবেন, এটা তাঁর বন্ধুর একেবারেই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। বলতে পারেন, এর কোনও প্রভাব তাঁদের বন্ধুত্বে পড়বে না। যশের কথায়, ‘‘আমি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছি। অনেক আলোচনার পরেই যোগ দিয়েছি। তাই আমি অন্য কোনও দলের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। আমার মনে হয়, আমি এই দলে থেকে কাজ করতে পারব। আমি কাজ করে জবাব দিতে চাই। নিন্দা করে নয়। কোন পার্টিতে গরু চুরি হচ্ছে বা কয়লা চুরি হচ্ছে, সেটা বলা আমার কাজ নয়। আমরা কাজ মানুষের পাশে থাকা। আমরা পশ্চিমবঙ্গে যা যা বদল আনতে চাই, আমি মনে করি এই দলে থেকে থেকে সেই বদলটা আনতে পারব।’’ তাঁর হাত ধরে কি আরও কোনও তারকা বিজেপি-তে আসতে পারেন? যশের কথায়, ‘‘কে আসবেন বা আসবেন না, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। আমি এসেছি। যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করেই এসেছি।’’
মিয়াঁ এবং বিবির (যদিও যশ-নুসরতকে ঠিক ‘মিয়াঁ-বিবি’ বলা যায় না। নুসরত বিবাহিতা। যশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন জোরাল থেকে জোরালতর হওয়ার পাশাপাশিই স্বামী নিখিল জৈনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে হাল্কা চিড় ধরেছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু নায়িকা নিজে ওই বিষয়ে বা কোনও ব্যক্তিগত বিষয়েই মন্তব্য করতে নারাজ) আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দলে থাকার উদাহরণ এর আগেও বাংলা দেখেছে। তৃণমূলের কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বিজেপি-র সক্রিয় নেতা। তবে অনন্যা সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই জয় বিজেপি-তে নাম লিখিয়েছিলেন। আর অনন্যা-জয়ের ব্যক্তিগত সম্পর্কে টানাপড়েনও দীর্ঘদিনের। কিন্তু ভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ায় একেবারে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে, এমন আপাত-বিরল ঘটনাও এই বাংলাতেই ঘটেছে। যখন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সৌমিত্র তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২০২০ সালের যাবতীয় রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহকে পিছনে ফেলে সাংবাদিক বৈঠকে প্রকাশ্যে সৌমিত্রের হাপুস নয়নে কান্না এবং বিলাপ গোটা বাংলার নজর কেড়ে নিয়েছিল। যে ঘটনা সাম্প্রতিক অতীত কেন, নিকট অতীতে দেখা গিয়েছে বলেও কেউ মনে করতে পারছেন না।
সেই সূত্রেই কৌতূহলীরা নজর রাখতে শুরু করেছেন ভবিষ্যতে যশ-নুসরত সম্পর্কের উপর। যদিও যশ স্পষ্টতই দাবি করেছেন, রাজনীতির কোনও প্রভাব তাঁদের সম্পর্কে পড়বে না। বস্তুত, একধাপ এগিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘নুসরতের মতোই মিমি চক্রবর্তীও তো আমার ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু। ও-ও তো তৃণমূলের সাংসদ। এর পর যদি আমরা একসঙ্গে কোনও ফিল্মে অভিনয় করি, তখন কি আমরা শত্রু হিসাবে কাজ করব! তখনও তো আমার বন্ধুই থাকব। সে যার যার রাজনৈতিক আদর্শ যেমনই হোক।’’ নিজের ‘রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ নিয়ে সে ভাবে কিছু বলেননি যশ। ভোটে দাঁড়াবেন কি না, খওলসা করেননি তা-ও। শুধু বলেছেন, ‘‘যুবসমাজের জন্য কাজ করতে চান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy