আবার পিছু হটতে হবে না তো ফিরহাদকে? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
যতই বিতর্ক হোক, কলকাতার রাস্তায় গাড়ির পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে তিনি যে নীতিগত ভাবে সরছেন না, বিতর্কের পরেই তা ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেই কথা অনুযায়ীই তিনি চলছেন। তবে এ বার বিতর্ক এড়াতে আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অনুমোদন’ চাইবেন তিনি। এখন দেখার, মমতা ওই প্রস্তাবে অনুমোদন দেন কি না।
গত ১ এপ্রিল থেকে বর্ধিত পার্কিং ফি চালু করার কথা ঘোষণা করেছিল পুরসভা। সেই ঘটনায় তৃণমূলের অন্দরের মতানৈক্য প্রকাশ্যে এসে পড়ে। নতুন হারে প্রায় আড়াই গুণ বৃদ্ধি হয়েছিল পার্কিংয়ের খরচ। সেই বর্ধিত হারে পার্কিং ফি আদায় শুরুও হয়ে গিয়েছিল। পুরসভার তরফে ওই পদক্ষেপের পরেই প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর ওই ফি বৃদ্ধিতে কোনও অনুমোদন নেই। অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে ওই পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকর করা হয়েছে। কুণাল আগ বাড়িয়ে এমনও বলে দেন যে, ওই দিনই কলকাতা পুরসভা ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেবে। ঘটনাচক্রে, তখনও মেয়র বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেনইনি। কুণালের বক্তব্য জানার পর মেয়র ফিরহাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরে বললেই ভাল হত। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে না-বললেই ভাল হত। মেয়র এমনও বলেন যে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নির্দেশ দিলে তিনি বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করে নেবেন। অতঃপর মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন মেয়রের সঙ্গে। বিতর্ক এড়াতে মেয়র সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হন। তার পর ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও তড়িঘড়ি বর্ধিত পার্কিং ফি প্রত্যাহারের বি়জ্ঞপ্তি জারি করেন পুর কমিশনার।
তখনকার মতো বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে। তখনকার মতো বিষয়টিতে মেয়রকে পিছুও হটতে হয়। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কলকাতার রাস্তায় পার্কিং ফি বৃদ্ধি নিয়ে শাসক শিবিরের অন্দরে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। কারণ, দলের শীর্ষ স্তর থেকে নির্দেশ না-পেলে কুণালের সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ওই ঘোষণা করার কথা নয়। তবে এটাও ঠিক যে, ফি বৃদ্ধির আগে মেয়র মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছিলেন, এমন ‘ছোটখাট’ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বিরক্ত’ করা প্রয়োজন বলে মনে করেননি পুর কর্তৃপক্ষ। তবে ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ার অব্যবহিত পরে মেয়র ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন, পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে তিনি পিছু হটছেন না। কারণ, ওই ফি বৃদ্ধি তাঁর মতে ‘যৌক্তিক’ এবং ‘প্রয়োজনীয়’। কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাড়ি পার্ক করা থাকে। কিন্তু তার জন্য ফি নেওয়া হয় নামমাত্র। সেটা চলতে পারে না। ফি বৃদ্ধির পক্ষে যাঁরা, তাঁরা যুক্তি দিয়েছিলেন, দেশের অন্যান্য শহরে কলকাতার চেয়ে পার্কিং ফি বেশ কয়েক গুণ বেশি। এমনকি, কলকাতার বিভিন্ন শপিং মলেও ঘণ্টাপ্রতি পার্কিং ফি শহরের রাস্তার তুলনায় অনেকটাই বেশি। কোথাও তা ঘণ্টাপ্রতি ৩০ টাকা। কোথাও আবার ৪০ টাকা।
বিতর্কের পরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল নতুন করে সমীক্ষা করে পার্কিং ফি নির্ধারিত হবে। সেই মতো গত দু’মাস ধরে সেই সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করা হয়েছে। তার পরে সম্প্রতি পার্কিং ফি বৃদ্ধির ফাইল জমা পড়েছে মেয়রের দফতরে। সূত্রের খবর, মেয়রের দফতর থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর সেটি পাঠানো হবে নবান্নে। সেই ফাইলে মুখ্যমন্ত্রী ‘অনুমোদন’ দিলে তবেই বাড়বে শহর কলকাতার রাস্তায় গাড়ি রাখার খরচ।
তবে কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, এপ্রিল মাসে যে পরিমাণ পার্কিং ফি বাড়ানো হয়েছিল, এ বার বৃদ্ধির পরিমাণ তার থেকে খানিকটা কম রাখা হয়েছে। গত বার বর্তমান হারের প্রায় আড়াই গুণ পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ বার ফি বৃদ্ধির পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, আগে ঘণ্টাপ্রতি ১০ টাকা পার্কিং ফি থাকলে এখন তা হবে ২০ টাকা। তবে সেই ২০ টাকা আবার পরের ঘণ্টায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৪০ টাকা হয়ে যাবে, না কি তা ঘণ্টায় ১০ টাকা করে বেড়ে তৃতীয় ঘণ্টায় ৩০ টাকা হবে, তা স্পষ্ট নয়।
কলকাতা পুর প্রশাসনের একটি অংশের বক্তব্য, এই বৃদ্ধির পিছনে ‘পর্যাপ্ত কারণ’ রয়েছে। এই অংশের বক্তব্য, গত ১২ বছর কলকাতা পুরসভার পার্কিং ফি একেবারেই বাড়েনি। কিন্তু এই সময়কালে পুরসভার খরচ বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। পুরসভার একটি বড় অঙ্কের রাজস্ব আসে শহরের রাস্তায় পার্কিং ফি থেকেই। সময়ের চাহিদা বুঝে ধীরে ধীরে অঙ্ক কষে শহরের পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে রয়েছে ‘বিতর্কহীন’ ভাবে কলকাতা শহরে পার্কিং বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা। কারণ, এক বার পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে যে ভাবে পিছিয়ে আসতে হয়েছে, তাতে নিঃসন্দেহে কলকাতা পুরসভার ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে। তাই এ বার কলকাতা পুরসভা তথা মেয়রের লক্ষ্য যাবতীয় বিতর্ক এড়িয়ে পার্কিং ফি নিয়ে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন আদায় করা। পুরসভা সূত্রে খবর, ২ চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ১০ টাকা এবং ৪ চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ২০ টাকা ফি করার প্রস্তাব দিয়েছে পুরসভার পার্কিং বিভাগ। বর্তমানে এই পার্কিং ফি ঘণ্টায় যথাক্রমে ৫ টাকা এবং ১০ টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy