তৃণমূলের ‘এক’ এবং ‘দুই’ নম্বর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব একই দিনে কলকাতায় আলাদা দু’টি কর্মসূচিতে থাকছেন, এমন দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বুধবার রাজনীতির ‘রাজযোটক’ কলকাতায়। দুপুরে রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির সামনে দু’দিনের ধর্না শুরু করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার অনতিদূরে শহিদ মিনার ময়দানে ছাত্র-যুব সমাবেশ করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গুগল ম্যাপ বলছে, দু’টি ক্রমসূচির দূরত্ব ১.২ কিলোমিটার। মমতার ধর্নায় যেমন নেতা-মন্ত্রী মিলিয়ে ভিআইপিদের ভিড় হবে, তেমনই অভিষেকের সভায় ভিড় জমাবেন তৃণমূলের ছাত্র-যুবরা। ফলে বুধবার মধ্য কলকাতার ‘দখল’ নেবে তৃণমূল।
মমতা তো ‘এক’ বটেই, তৃণমূল অভিষেক যে এখন ‘অঘোষিত দু’নম্বর’, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দলের সেই ‘এক’ এবং ‘দুই’ নম্বর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব একই দিনে কলকাতায় আলাদা দু’টি কর্মসূচিতে থাকছেন, এমন দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। মমতার ধর্না শুরু হওয়ার কথা বেলা ১২টায়। আর অভিষেকের সভা শুরু হওয়ার বেলা ১টায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ভাষণ শুরু করবেন বেলা ২টো নাগাদ।
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যে পথে চলছে, তাতে তৃণমূল যে ‘চাপে’, একান্ত আলোচনায় তা স্বীকার করে নিচ্ছেন দলের নেতারা। তার মোকাবিলাতেই বাম জমানার ‘নিয়োগ দুর্নীতি’ টেনে আনছে তৃণমূল। যদিও তাতে এই চাপের মোকাবিলা পুরোপুরি করা সম্ভব হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আবার রাজ্যের বকেয়া টাকা আটকে রাখা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়েও দিল্লির কাছ থেকে সে ভাবে ‘আশার খবর’ শোনা যায়নি। ফলে চাপে নবান্নও। এই আবহেই মমতা এবং অভিষেকের আলাদা আলাদা কর্মসূচি বুধবার।
মমতা তাঁর কর্মসূচি ঘোষণার সময়েই জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রের থেকে বরাদ্দ এবং বকেয়া অর্থ না পাওয়ার দাবিতেই তাঁর ধর্না। এবং তিনি ‘মুখ্যমন্ত্রী’ হিসাবেই সেই ধর্নায় বসবেন। বিজেপি-সহ বিরোধীরা অবশ্য কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই বলে আসছে, রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে আবহ তৈরি হয়েছে, তা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই মমতার এই দু’দিনের ধর্না কর্মসূচি। অভিষেক যে সভার ডাক দিয়েছেন, তার মূল উদ্দেশ্য দলের ভাবমূর্তি ফেরানো বলেই অনুমান দলেরই একাংশের। তাঁদের মতে, অভিষেক যে ভাবে দলীয় সংগঠনকে ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ করতে চাইছেন, সে সম্পর্কে ছাত্র-যুবদের বার্তা দিতে পারেন। কিছু নেতার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের নেতা, কর্মীদের ‘চোর-চোর’ স্লোগানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতেও উঠছে দুর্নীতি প্রসঙ্গ। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র-যুবরা যাতে হতাশ হয়ে পড়েন, সে বিষয়েও লড়াইয়ের বার্তা দিতে পারেন অভিষেক।
তবে বুধবার তৃণমূলের দুই কর্মসূচি যাতে প্রচারের সব আলো শুষে নিতে না পারে, তার জন্য ‘পাল্টা কর্মসূচি’ নিয়েছে বিজেপি। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে নেতাজির মূর্তির নীচে ধর্নায় বসার পরিকল্পনা রয়েছে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। বিজেপি চাইছে, সেখানে দলের দক্ষিণবঙ্গের বিধায়করা এবং রাজ্যের অন্য নেতারাও থাকুন। তবে এটা ঠিক যে, বুধবারের কলকাতায় বেশি আগ্রহ থাকবে মধ্য কলকাতা নিয়েই। মমতার ধর্না এবং অভিষেকের সভার দিকেই নজর থাকবে বেশি।
এখন দেখার, শহিদ মিনারের সভায় যাওয়া বা আসার পথে অভিষেক অদূরে দলনেত্রীর ধর্নামঞ্চে যান কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy