বিধানসভা ভোটে দলের প্রশ্নাতীত সাফল্য। জাতীয় স্তরে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে-ওঠা। পেগাসাসের আড়ি পাতার তালিকাতেও তাঁর নাম। রাজ্য রাজনীতি ছাড়িয়ে ক্রমশই জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশিই, দলেও প্রশ্নাতীত ভাবে গুরুত্ব বাড়ছে তাঁর। দলীয় সংগঠনে এখন তিনিই কার্যত সবচেয়ে সক্রিয়। কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের টালির চালের বাড়ির মতোই এখন তৃণমূলের রাজনীতিতে গুরুত্ব পাচ্ছে হরিশ মুখার্জি রোডের ‘শান্তিনিকেতন’ও। প্রথমটি হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদি এবং অকৃত্রিম ঠিকানা। দ্বিতীয়টি অভিষেকের। তৃণমূলে অভিষেক এখন ঘোষিত ভাবেই দু’নম্বর। যদিও অভিষেক নিজে তেমন মনে করেন না। তিনি বারবারই বলেন, তৃণমূলে একজনই নেত্রী— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি সকলেই কর্মী। তিনি নিজেও। কিন্তু বিধানসভা ভোটের পর দলে অভিষেকের গুরুত্ব যে বেশ কয়েক গুণ বেড়েছে, তা বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র বিপর্যয়ের মতোই স্পষ্ট।
ভোটের অব্যবহিত পরে অভিষেককে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োগ করেছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্তে অভিষেকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকছে। সোমবার মমতার সঙ্গেই দিল্লি সফরে যাচ্ছেন অভিষেক। জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনে মমতার পাশাপাশি অভিষেকের ভূমিকাও থাকবে। কারণ, বিধানসভার সাফল্যকে পুঁজি করে সর্বভারতীয় স্তরে পদচিহ্ন রাখতে চাইছে তৃণমূল। রাজ্যের বিধানসভা ভোটে মমতার পাশাপাশিই গোটা বাংলা ঘুরে প্রচার করেছিলেন অভিষেক। পিসি মমতার মতো নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটির সরাসরি মোকাবিলা করেছেন তিনিও। এবং যুদ্ধ জিতেছেন। পর থেকেই দলে অভিষেকের গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গুরুত্ব বেড়েছে তাঁর কন্যা আজানিয়ারও। রবিবার ছিল আজানিয়ার জন্মদিন। ছোট্ট মেয়েটিকে অকাতরে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেটমাধ্যমে। এমনকি, একটি পোস্টে আজানিয়াকে ‘ভবিষ্যতের অগ্নিকন্যা’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে!
আজানিয়া এখনও নেহাতই বালিকা। স্কুলে পড়ে। ইদানীংকালে তাকে মাত্র দু’বারই প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে। প্রথমবার, বিধানসভা ভোটের আগে। যখন অভিষেকের পত্নী রুজিরাকে জেরা করতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন সিবিআই অফিসারেরা। কেন্দ্রীয় সরকারের তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা অভিষেকের বাড়িতে পৌঁছনোর ঠিক আগে সেখানে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বাড়ির ভিতরে কিছুক্ষণ কাটিয়ে তিনি যখন বেরিয়ে আসছেন, তখন তাঁর হাতটি ছোট্ট মুঠিতে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাইরে এসেছিল আজানিয়া। দ্বিতীয়বার, বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের দিন ২ মে। বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর কালীঘাটের বাড়ির চত্বরে মমতা যখন প্রথম বেরিয়ে এলেন প্রতিক্রিয়া দিতে, তখন তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে দু’আঙুল তুলে ‘ভিকট্রি’ চিহ্ন দেখিয়েছিল আজানিয়া। মমতা-আজানিয়ার সেই ছবি নেটমাধ্যমে সাড়া এবং শোরগোল ফেলেছিল (সেই ছবি রবিবার আজানিয়ার জন্মদিনে আবার তৃণমূলের অনেকে পোস্ট করেছেন)। কিন্তু অভিষেকের কন্যাকে কেউ তখনও ‘ভবিষ্যতের অগ্নিকন্যা’ বলে অভিহিত করেননি।
ঘটনাচক্রে, আজানিয়ার জন্মদিন যে ২৫ জুলাই, তা পারিবারিক আবহে সকলে মনে রাখলেও এতদিন দলীয় স্তরে কেউ মনে রাখেননি। তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের একাংশের মতে, মনে রাখার প্রয়োজনও পড়েনি। এখন একদিকে যেমন আজানিয়ার জন্মদিনে তার ছবি দিয়ে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন দলের দাপুটে বিধায়ক মদন মিত্র, তেমনই ইনস্টাগ্রামে দলের একটি শাখা সংগঠনের নামের অ্যাকাউন্টে বালিকার ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে ‘ভবিষ্যতের অগ্নিকন্যা’। আজানিয়া-অভিষেকের ছবিও পোস্ট করে জন্মজিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। অভিষেক নিজে তাঁর কন্যার জন্মদিন নিয়ে এই অভূতপূর্ব ‘উৎসাহে’ কী মনে করছেন, তা জানা যায়নি। তবে দলের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘এ সবই যে আসলে অভিষেকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, তা খুব স্পষ্ট। দলে যেহেতু অভিষেকের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে, তাই তাঁকে খুশি করার প্রবণতাও বাড়ছে।’’ তবে একইসঙ্গে ওই নেতা এর মধ্যে ‘অস্বাভাবিক’ কিছুও দেখছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অবামপন্থী দলে জন্মদিন-সব বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়ে থাকে। ক্ষমতাবানদের গুডবুকে থাকার চেষ্টাও তারই একটা অঙ্গ। এর আগে কেউ অভিষেকের কন্যার জন্মদিনে প্রকাশ্যে শুভেচ্ছা জানাননি কেন, সেটা যেমন স্পষ্ট, তেমনই এখন কেন জানাচ্ছেন, সেটাও পরিষ্কার। ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলে এগুলো সবসময়েই হয়ে থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy