সপরিবার: ব্রিগেডে তৃণমুলের সভামুখী সমর্থকেরা। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
ময়দানে এক পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে চলেছেন এক ব্যক্তি। কিন্তু সেই কথায় কান নেই তাঁর সঙ্গীদের। কিছু ক্ষণ পরে নিজেই চুপ করে গেলেন সেই ব্যক্তি। রেগে বললেন, ‘‘গরম ভাত আর ডিমের ঝোল হয়ে গিয়েছিল। খেয়ে নিতে বললাম, শুনল না কেউ। স্টেজের কাছে র্যাম্প দেখতে ছুটল। র্যাম্প না দেখে নাকি ওরা বাড়ি যাবে না!’’ কিছু দূরেই আবার হনহন করে হেঁটে যেতে দেখা গেল কয়েক জনকে। অত্যন্ত উত্তেজিত ভাবে ফোন করতে শুরু করলেন তাঁরা। শোনা গেল, তাঁদের এক জন ফোনে বলছেন, ‘‘দাদা র্যাম্পে নামবে না, আর আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখব? দাদা র্যাম্পে হাঁটবে না শুনেই আমরা বাড়ির দিকে হাঁটা লাগাচ্ছি!’’
তৃণমূলের ‘জনগর্জন’ কর্মসূচিতে ব্রিগেডে অভিনব কায়দায় বানানো ৩৩০ ফুট লম্বা র্যাম্প আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে মনে করাই হচ্ছিল। বাস্তবেও দেখা গেল, রবিবার দিনভর ওই র্যাম্প ঘিরেই আবর্তিত হল সমর্থকদের বড় অংশের উচ্ছ্বাস। লোকসভা ভোটের ৪২টি আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সেই র্যাম্প দিয়ে হাঁটা শুরু করলেন, তখন উচ্ছ্বাস আরও বাড়ল। পছন্দের লোক প্রার্থী তালিকায় নেই এবং র্যাম্পে হাঁটবেন না জানার পর কিছুটা উষ্মাও চোখে পড়ল। যা নিয়ে ব্যারাকপুর থেকে ব্রিগেডে আসা এক প্রৌঢ়া বললেন, ‘‘বহু দিন থেকেই তৃণমূলের সমর্থক আমি। তবে এখন আলাদা করে আর সভা-সমাবেশে আসার ইচ্ছে হয় না। এ বার গানের অনুষ্ঠানের মতো করে র্যাম্প বানানো হয়েছে শুনে চলে এলাম। স্টেজের কাছেই বসব বলে ভোর ভোর বেরিয়েও পড়েছিলাম। কিন্তু দিনের শেষে মন ভরল না। আমাদের পছন্দের লোককে দল প্রার্থী না করায় ছেলে রেগে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গিয়েছে!’’ র্যাম্প লাগোয়া এলাকায় ছাতা মাথায় বসা আর এক মহিলার অবশ্য মন্তব্য, ‘‘বড় বড় গানের অনুষ্ঠানে এমন স্টেজ হয় শুনেছি, কখনও দেখা হয়নি। জুন, রচনা, সায়নী— কত জনকে একসঙ্গে হাঁটতে দেখা হয়ে গেল। প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও তো ছিলেন। এ বার ব্রিগেডে আসা সার্থক।’’
এই উচ্ছ্বাসই চোখে পড়েছে দিনের শুরু থেকে। বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, লরি, অটোয় চড়ে সমর্থকেরা ময়দানের দিকে এগোতে থাকেন ভোর থেকেই। এর জেরে বেলার দিকে এক সময়ে পুলিশকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং জওহরলাল নেহরু রোড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। বেলা ১১টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার একটি বড় মিছিল ব্রিগেডে পৌঁছয় হাজরা হয়ে। এর জেরে ওই অংশে যান চলাচল শ্লথ হয়ে পড়ে। সাড়ে ১১টা নাগাদ হাওড়া থেকে স্ট্র্যান্ড রোড, ব্রেবোর্ন রোড হয়ে ব্রিগেডে ঢোকে আরও একটি বড় মিছিল। তার কিছু পরেই আরও একটি বড় মিছিল শিয়ালদহ থেকে এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ময়দানের দিকে যায়। ওই অংশে গাড়িতে আটকে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘পুলিশ গলিপথে গাড়ি বার করানোর চেষ্টা করেছে। রবিবার হলেও গলিতেও প্রবল গাড়ির চাপ।’’ এর মধ্যেই উত্তর কলকাতার একাধিক মিছিল ধর্মতলা হয়ে ব্রিগেডে পৌঁছয়। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে থাকা সমর্থকেরা আলাদা আলাদা জেলার ব্যানার নিয়ে মিছিল করে সভাস্থলে গিয়েছেন।
মেদিনীপুরের সারেঙ্গা ব্লক থেকে আসা একটি মিছিলে আদিবাসী পোশাকে মহিলাদের হাঁটতে দেখা যায়। তাঁদের ছাতায় ছাপানো ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একাধিক প্রকল্পের উল্লেখ। এ ছাড়াও একাধিক জেলার সমর্থকেরা এসেছিলেন ট্যাবলো সাজিয়ে। কাউকে আবার ঢাক, ঢোল, খোল-করতাল বাজাতেও দেখা যায়। অনেককেই রাস্তার ধারে পিকনিকের মেজাজে খাওয়াদাওয়া সারতে দেখা গিয়েছে। কোথাও ভাতের সঙ্গে মাংস বা ডিমের ঝোল, কোথাও বিরিয়ানি। আসানসোল থেকে আসা একটি দলকে ভিক্টোরিয়ার পাশে দেখা গেল। এক জন বললেন, ‘‘নেতারা মঞ্চটা দেখার মতো হয়েছে বলে নিয়ে এসেছিলেন, আমরা ভিক্টোরিয়াও ঘুরে নিলাম। সভা-সমাবেশ ছাড়া তো শহরে বেশি আসা হয় না!’’ সভা শেষের পরে নাতনিকে কাঁধে নিয়ে হেঁটে শিয়ালদহ স্টেশনের দিকে যাওয়া এক মাঝবয়সী বললেন, ‘‘নাতনিকে নিয়ে প্রথম বার এসেছি, একটু কলকাতা না ঘুরিয়ে দিলে হয়! তাই ইচ্ছে করেই বাস ছেড়ে দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy