Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
History

Clive House: তিন হাজার বছরের সভ্যতার খোঁজ ক্লাইভ হাউসে

ঘোড়ায় চড়ে এখনকার দমদমের রাস্তা পেরিয়ে যেতে যেতে রবার্ট ক্লাইভ দেখতে পেলেন, বড় ঢিপির উপরে একটি পুরনো একতলা বাড়ি।

প্রাচীন: ক্লাইভ হাউসের ঢিপি খননে প্রাপ্ত গুপ্ত যুগের নারী মূর্তি

প্রাচীন: ক্লাইভ হাউসের ঢিপি খননে প্রাপ্ত গুপ্ত যুগের নারী মূর্তি ছবি: পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সৌজন্যে

অলখ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২২ ০৬:৫০
Share: Save:

ফেব্রুয়ারি মাসের ঘন কুয়াশায় ছাওয়া একটি দিন। ঘোড়ায় চড়ে এখনকার দমদমের রাস্তা পেরিয়ে যেতে যেতে রবার্ট ক্লাইভ দেখতে পেলেন, বড় ঢিপির উপরে একটি পুরনো একতলা বাড়ি। সেই বাড়ি ক্লাইভ পরে দ্বিতল করেন। বাড়িটি ক্লাইভ হাউস নামেই এখন বিখ্যাত। তবে একতলার ইট দেখে অনুমান করা হয়, বাড়িটি অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নয়, আরও আগে তৈরি। সম্ভবত, নবাব আলিবর্দি এই বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন শিকারে গিয়ে থাকার জন্য। আর একটি মত হল, সিরাজউদ্দৌল্লা বাড়িটি তৈরি করেন কাছেই কলকাতায় ইংরেজদের উপরে গোপনে নজর রাখার লক্ষ্যে। সিরাজের পরাজয়ের পরে যা ইংরেজদের হাতে চলে যায়।

কিন্তু তার চেয়েও বড় খবর লুকিয়ে ছিল ওই ঢিপিটিতে। গত শতক থেকে ওই ঢিপির প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা সার্কলের অধীক্ষক শুভ মজুমদার বলেন, ‘‘পূর্ববর্তী উৎখননে এখানে সাতটি স্তরে নাগরিক সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। তবে এ বছরের উৎখননে সর্বশেষ স্তরে বা প্রাক্‌ মৌর্য যুগের বন্যা এবং তারও বেশ কয়েক শতক আগের সভ্যতার নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে।’’ যা দেখে পুরাতত্ত্ববিদদের অনুমান, সেই সময়েও এখানকার মানুষের বন্যার পরে ঘুরে দাঁড়ানোর কারিগরি দক্ষতা ও মনের জোর ছিল। পুরাতত্ত্ববিদেরা জানাচ্ছেন, এখানে ধারাবাহিক ভাবে জনবসতি থাকায় মানুষ বন্যার আঘাতের পরে চলে না গিয়ে ফের এখানেই আবার বসতি তৈরি করতে উৎসাহ দেখায়। কত দিন আগে থেকে এখানে মানুষ বসবাস করত, সে প্রসঙ্গে পুরাতত্ত্ববিদ রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব চেয়ে পুরনো স্তর থেকে যে নিদর্শন মিলেছে, তাতে পাওয়া কৃষ্ণাভ লাল মৃৎপাত্র থেকে অনুমান করা যায়, এই এলাকায় খ্রিস্টপূর্ব এক হাজার বছর আগেও বসতি ছিল।’’ অর্থাৎ, কলকাতার ইতিহাস এখন থেকে তিন হাজার বছর পুরনো। এখান থেকে হাড়ের তৈরি অস্ত্রও পাওয়া গিয়েছে। তার কার্বন পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতিহাসবিদদের অনুমান, সেই পরীক্ষার পরে এই এলাকার ইতিহাস আরও প্রাচীন বলে গণ্য হতে পারে।

 প্রাচীন: কুষাণ যুগের যক্ষিণী মূর্তি।

প্রাচীন: কুষাণ যুগের যক্ষিণী মূর্তি। ছবি: পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সৌজন্যে

পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, প্রায় ২০০ মিটার লম্বা ও ৭০ মিটার চওড়া এই ঢিপি থেকে পাওয়া বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সব থেকে উন্নত সভ্যতা ছিল খ্রিস্টীয় প্রথম-দ্বিতীয় শতক থেকে গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী যুগের মধ্যে। এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ নাগরিক বাণিজ্যকেন্দ্র, যার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ভারতের বিভিন্ন তৎকালীন বসতির। এই বছরই উৎখননে পাওয়া গিয়েছে একটি পুরুষ মূর্তির খণ্ডিত অংশ। যার হাতের অবস্থান ও পোশাক খুবই নাগরিক। শুভ মজুমদারের কথায়, ‘‘শুঙ্গ থেকে গুপ্ত পরবর্তী যুগের সময়কালের টেরাকোটার নিদর্শনগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই এলাকায় শুধু খুবই উন্নত নাগরিক জীবন ছিল তা-ই নয়, লোকশিল্প থেকে সচেতন ভাবে দূরত্ব তৈরি করে শিল্পকলা তৈরি হচ্ছিল। সেই শিল্পকলার উপরে ভারতের অন্য অঞ্চলের উন্নত সভ্যতার প্রভাব রয়েছে।’’ যেমন ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে শুঙ্গ যুগের যে পঞ্চচূড়া যক্ষিণীমূর্তি পাওয়া গিয়েছে, তা এখান থেকেও মিলেছে। মিলেছে মিথুন ফলক, দু’টি পদ্মের নাল ধরে রাখা নারী মূর্তি ও ডানাযুক্ত যক্ষিণী মূর্তি-সহ নানা নিদর্শন। গুপ্ত যুগের তিনটি নারী মূর্তির কেশসজ্জা, অলঙ্কার ও দেহাবয়বের লাবণ্য এই জনপদের উৎকৃষ্ট দক্ষতা ও রুচির পরিচয় দেয়। শুভ বলেন, ‘‘কুষাণ যুগের এক রাজপুরুষের ফলক মিলেছে, যিনি হাতিতে বসে রয়েছেন। এক হাতে অঙ্কুশ, অন্য হাতে টাকার থলি জাতীয় কিছু। যা থেকে বোঝা যায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কতটা ছিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

History Clive House
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy