Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

দিনে চার ঘণ্টা দু’চাকায় যাত্রা তিন প্রৌঢ় পুলিশকর্মীর

একে লকডাউন। তার উপরে শহরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা-সংক্রমণ।

সাইকেলে সওয়ার সিঁথি থানার ওই তিন পুলিশকর্মী। নিজস্ব চিত্র

সাইকেলে সওয়ার সিঁথি থানার ওই তিন পুলিশকর্মী। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৩:১৪
Share: Save:

বয়স বাধা হতে পারেনি সামাজিক দায়িত্বের সামনে। তিন জনের বয়স ষাট ছুঁইছুঁই। প্রত্যেকেরই বাড়ি অনেক দূরে। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন দু’ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে সময় মতো পৌঁছে কাজে যোগ দিচ্ছেন সিঁথি থানার তিন কনস্টেবল। আবার কাজ সেরে বাড়ি ফিরছেন দু’ঘণ্টা সাইকেল চালিয়েই। তাঁদের দেখে উৎসাহিত থানার অন্য পুলিশকর্মীরাও।

একে লকডাউন। তার উপরে শহরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা-সংক্রমণ। এই কঠিন সময়ে শহরে লকডাউন পরিস্থিতি সামলানো থেকে শুরু করে দুঃস্থদের হাতে খাবার তুলে দেওয়া, যাবতীয় কাজের দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা পুলিশ। ফলে দিনরাত এক করে কাজ করতে হচ্ছে প্রতিটি থানার প্রত্যেক পুলিশকর্মীকেই।

শুধুমাত্র বয়সের কারণে অন্যদের তুলনায় কোনও ভাবেই তাই পিছিয়ে থাকতে রাজি নন উত্তর কলকাতার সিঁথি থানার ওই তিন কনস্টেবল। প্রতিদিন হাড়ভাঙা খাটনির মধ্যেও কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য চার ঘণ্টা করে সাইকেল চালাতে হচ্ছে তিন জনকেই। নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হচ্ছে তিনটি শিফটে যখন-তখন কাজ করার জন্য। ওঁরা হলেন মন্টু রায়, সত্যেন সমাদ্দার এবং নারায়ণচন্দ্র দে। মন্টুবাবুর বাড়ি নিউ ব্যারাকপুর স্টেশন থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে পশ্চিম মাসুন্দা গ্রামে।

সত্যেনবাবু থাকেন বারাসতের হৃদয়পুর। নারায়ণবাবু সোদপুর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মিলনগড় গ্রামের বাসিন্দা। মন্টুবাবু বলেন, ‘‘আগে থানায় পৌঁছতে বাড়ি থেকে অটোয় চেপে নিউ ব্যারাকপুর স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরতাম। এখন পরিস্থিতির চাপে সাইকেলে যাচ্ছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বয়স বেড়েছে। হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ খেতে হয়। একটানা সাইকেল চালাতে পারি না। রাস্তায় মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নিয়ে সাইকেল চালাই। যার জন্য বাড়ি থেকে অফিস আসতে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লাগে।’’

একই কথা শোনা গেল সত্যেন ও নারায়ণবাবুর মুখেও। সত্যেনবাবুর কথায়, ‘‘আগে কখনও এ ভাবে সাইকেল নিয়ে এতটা পথ পেরিয়ে কাজে যেতে হয়নি। হার্ট ও সাইনাসের জন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। এই জরুরি পরিস্থিতিতে এখন তো ডিউটি করতেই হবে।’’ নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘আগে অটো ও বাসে চেপে অফিস আসতাম। এখন ওই দু’টি পরিবহণ ব্যবস্থাই বন্ধ। বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিন বাড়ির কোণে পড়ে থাকা সাইকেলটিই এখন আমার একমাত্র ভরসা।’’

নিয়ম মতো সমস্ত পুলিশকর্মীর থাকার জন্য থানার ব্যারাক রয়েছে। তবে ওই তিন কনস্টেবল জানিয়েছেন, তাঁদের এখানে প্রত্যেককে হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ডিউটি করতে হয়। সংক্রমণ এড়ানোর জন্য কষ্ট হলেও তাই তাঁরা সাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরে যান।

ওই তিন কনস্টেবলের সামাজিক দায়িত্বের প্রশংসা করে সিঁথি থানার ওসি সৈকত নিয়োগী বলেন, ‘‘বয়সের বাধা অতিক্রম করে তিন কনস্টেবল যে ভাবে বহু দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে আসছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাঁদের এই পরিশ্রম সবাইকে উৎসাহ দিচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: অনেক এলাকাতেই ফিরল বিদ্যুৎ, তবে পুরো ছন্দে ফেরেনি কলকাতা

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy