Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
drainage system

Drainage System: বরাদ্দ বেড়েছে ১০০ কোটি, তবু শহরে দ্রুত জল নামে কই?

‘নিকাশি কাঠামো গড়ে তোলার নিরিখে উন্নত শহরের একটি আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠেছে কলকাতা।’—২০১৯-’২০ সালের বাজেটে এমনই দাবি করেছিলেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ।

থইথই: শেষ বার বৃষ্টি হয়েছে বৃহস্পতিবার। জমা জল নামেনি দু’দিন পরেও। শনিবার, বাইপাসের ধারে শহিদ স্মৃতি কলোনিতে।

থইথই: শেষ বার বৃষ্টি হয়েছে বৃহস্পতিবার। জমা জল নামেনি দু’দিন পরেও। শনিবার, বাইপাসের ধারে শহিদ স্মৃতি কলোনিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২১ ০৬:৪৫
Share: Save:

‘নিকাশি কাঠামো গড়ে তোলার নিরিখে উন্নত শহরের একটি আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠেছে কলকাতা।’—২০১৯-’২০ সালের বাজেটে এমনই দাবি করেছিলেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ।

সে প্রতি বছর বর্ষায় জল জমা নিয়ে নাগরিকদের যতই অভিযোগ থাক না কেন! কয়েক দিন আগের বৃষ্টির জেরে শহরের একাধিক জায়গা এখনও জলমগ্ন থাক না কেন! পরিসংখ্যান বলছে, নিকাশি খাতে পুরসভার বরাদ্দকৃত অর্থ ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে। ২০১১-’১২ সালে নিকাশি খাতে যেখানে বরাদ্দ ছিল ১৮৪.১২ কোটি টাকা, সেখানে ২০২০-’২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮০.৩২ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, ১০ বছরে নিকাশি খাতে বরাদ্দ প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেড়েছে।

কিন্তু তার পরেও জল-যন্ত্রণা থেকে কেন মুক্তি মেলেনি?

কারণ ব্যাখ্যা করে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, শহরে কংক্রিটের রাজত্ব বৃদ্ধির কারণে বৃষ্টির জল মাটিতে প্রবেশ করতে পারছে না। এ বিষয়ে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস’-এর (আইআইএসসি) একটি সমীক্ষার প্রসঙ্গ উল্লেখ করছেন তাঁরা। ওই সমীক্ষা জানাচ্ছে, ১৯৯০ সালে কলকাতায় ‘আর্বান বিল্ট আপ এরিয়া’, অর্থাৎ আবাসিক ও শিল্পক্ষেত্রের শতকরা পরিমাণ ছিল ২.২ শতাংশ। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮.৬ শতাংশে। এই হারে নির্মাণ হতে থাকলে ২০৩০ সালে কংক্রিটের রাজত্বের সম্ভাব্য হার বৃদ্ধি হবে ৫১ শতাংশ! ইউনিসেফের প্রাক্তন পরামর্শদাতা তথা ভূ-বিজ্ঞানী তাপসকুমার ঘটক বলছেন, ‘‘২০০০-’২০ সালের মধ্যে শহরে অপরিকল্পিত ভাবে বাড়ি, রাস্তাঘাট, উড়ালপুল নির্মাণের কারণে বৃষ্টির জল মাটিতে পৌঁছতে পারছে না।’’

নদী-বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার আবার বলছেন, ‘‘এক দিকে শহর জুড়ে খালগুলির নাব্যতা কমেছে। অন্য দিকে, চড়িয়াল খালের মতো একাধিক খাল বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে। যার ফলে শহরের প্রাকৃতিক নিকাশি ব্যবস্থার ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাটমসফেরিক সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক সুব্রতকুমার মিদ্যা জানাচ্ছেন, শহরে ‘হিট আইল্যান্ড’ তৈরি হচ্ছে। ফলে সেখানকার হাওয়া গরম হয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। সেই শূন্যস্থান পূরণে চলে আসছে জলীয় বাষ্পপূর্ণ মেঘ। সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘তার ফলে এলাকা ভিত্তিক মেঘ তৈরি হয়ে সেখানে কম বা বেশি বৃষ্টি হচ্ছে।’’ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এলাকা ভিত্তিক বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সেই অঞ্চলের নিকাশি পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার ছিল। বাস্তবে এখনও তা হয়নি। ফলে জলের পকেটগুলিতে জল জমেই থাকছে। পরিবেশবিজ্ঞানী তপন সাহার বক্তব্য, ‘‘শুধু বর্ষার আগে খালের পলি নিষ্কাশনের কাজ না করে সারা বছর ধরে তা করা প্রয়োজন।’’

পুরসভার নিকাশি দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তারক সিংহের অবশ্য দাবি, সারা বছর ধরেই পলি নিষ্কাশন-সহ নিকাশি পরিকাঠামোর কাজ করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘২০১০-’১৫ সালে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার মেট্রিক টন পলি নিষ্কাশন করা হয়েছিল। আর ২০১৫-’২০ সাল, এই সময়সীমার মধ্যে ৭ লক্ষ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন পলি তোলা হয়েছে। ফলে আগামী বছরে জল জমার সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।’’ এ বিষয়ে রাজ্য সেচ দফতরের সঙ্গে

যোগাযোগ রেখে কাজ করা হচ্ছে বলে পুরসভা জানাচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলছেন, ‘‘চলতি বর্ষায় আপৎকালীন কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। পরের বার বর্ষার আগে খাল সংস্কারের সার্বিক কাজ করা হবে।’’

২০১১-’১২ আর্থিক বর্ষের বাজেট পেশ করে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, ‘‘শহরের নিকাশি ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়নে অভূতপূর্ব গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’ পরিকাঠামো উন্নয়নে কী কী পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে, তার বিস্তারিত বর্ণনাও ছিল সেই বাজেটে। তার পরে বহু সময় গড়িয়েছে। কিন্তু জল জমার প্রসঙ্গ উঠলেই পুরসভা-প্রশাসনের তরফে বরাবর যা বলা হয়, ‘আসছে বছর আর জল জমবে না’, এই আশ্বাসের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি! যেমনটা পাল্টায়নি শহরে জল-জমার চিত্রও।

অন্য বিষয়গুলি:

drainage system Water Lodging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy