Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Bowbazar

Bowbazar: ফের ভিটেছাড়া দম্পতি, সন্তানের সঙ্গে বাড়ল দূরত্ব

মেট্রোর কাজের জন্য ২০১৯ সালেও তাঁদের বাড়িতে ফাটল ধরেছিল। সে বার তিন মাস দশ দিন হোটেলে কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তাঁরা।

অসহায়: বাড়ি ভাঙার কথা শুনে ভেঙে পড়েছেন রাজলক্ষ্মী সেন। সোমবার, বৌবাজারে।

অসহায়: বাড়ি ভাঙার কথা শুনে ভেঙে পড়েছেন রাজলক্ষ্মী সেন। সোমবার, বৌবাজারে। নিজস্ব চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২২ ০৬:২৯
Share: Save:

বাড়ি ভেঙে বিপর্যয়ের আশঙ্কায় তিন বছর আগেই একমাত্র ছেলেকে মধ্য কলকাতার বাড়ি থেকে পূর্ব কলকাতায় মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মা-বাবা। নিয়মিত দেখা হয় না। তার জন্য মনখারাপ হলেও তাঁদের সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল, গত বুধবার রাতে তা টের পেয়েছেন ওই দম্পতি।

বৌবাজারের ১৬/১ দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা শুভাশিস দাস ও সুমনা দাস। মেট্রোর কাজের জন্য ২০১৯ সালেও তাঁদের বাড়িতে ফাটল ধরেছিল। সে বার তিন মাস দশ দিন হোটেলে কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, বাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় ১১ বছরের ছেলেকে সুমনা পাঠিয়ে দেন পূর্ব কলকাতায় তাঁর মায়ের কাছে। সোমবার শুভাশিস বললেন, ‘‘আশঙ্কাটা অমূলক ছিল না। বাড়ির জন্য কোনও ফিটনেস শংসাপত্র আমাদের দেয়নি মেট্রো। মৌখিক ভাবে জানিয়েছিল, বাড়ি ঠিক হয়ে গিয়েছে। আমাদের চলে আসতে বলেছিল। গত বুধবার আমি অফিসে ছিলাম। তখনই খবর পাই, ফের বাড়িতে ফাটল ধরেছে। বাড়ি খালি করতে হবে।’’

সুমনার কথায়, ‘‘সপ্তাহে মাত্র দু’দিন ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারি। বাড়ি ভেঙে পড়লে যাতে ছেলেটার ক্ষতি না হয়, তাই ওকে মায়ের কাছে রেখেছিলাম। খুব কমই এই বাড়িতে নিয়ে আসতাম। গত বুধবার হাতের সামনে যা পেয়েছি, নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। বাড়ির আসবাব আজ মেট্রোর তরফে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওদের গুদামে। তিন বছর আগের মতো আবার হোটেল-বাস শুরু হয়েছে।’’

১৬/১ নম্বর বাড়িটি এ দিন থেকেই ভাঙার কাজ শুরু করেছে মেট্রো। আবার কবে নিজেদের ছাদের নীচে ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে উদ্বেগে দাস দম্পতি। এ দিন শুভাশিসের দিদিমা রাজলক্ষ্মী সেনকে দেখা যায় কুলদেবতার ছবি আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ভিটেমাটি ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। বৃদ্ধার কথায়, ‘‘আমার শ্বশুরমশাইয়ের ভিটে। ৬৫ বছরের বাসিন্দা। শ্বশুরমশাই বলেছিলেন, মৃত্যুর আগে যেন তাঁর ভিটে না ছাড়ি। কিন্তু পরিস্থিতি পথে নামাল। কবে ফিরতে পারব, জানি না।’’ আপাতত গোটা পরিবারই রয়েছে এক হোটেলে।

স্থানীয়েরা জানালেন, যাঁদের বাড়ি ভাঙা পড়ছে, সেই সব বাসিন্দার হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে তাঁদের আসবাব-সহ অন্যান্য মালপত্র মেট্রো তাদের গুদামে নিয়ে গিয়ে রাখছে। কিন্তু যে বাড়িগুলিতে ফাটল ধরলেও ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়নি, সেখানকার বাসিন্দাদের সরানো হলেও তাঁদের আসবাব নষ্ট হচ্ছে ঘরে পড়ে থেকে।

শুভাশিসদের বাড়িটির পাশের বাড়ির ঠিকানা ১৯ দুর্গা পিতুরি লেন। সেই বাড়ির দোতলার একটি ঘরে ঢুকে দেখা গেল, বাসিন্দা সন্দীপ সাউ মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ছাদের ফাটল দিয়ে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে পড়ে দামি খাটের পালিশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঘরের মেঝে, দেওয়ালের বিরাট অংশ জুড়ে ফাটল। সন্দীপ বললেন, ‘‘হোটেলে আছি। কিন্তু সেখানে তো এত মালপত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বাড়িতে এসে দেখি, বিছানা থেকে শুরু করে আলমারি, টিভি— সব ভিজে গিয়েছে। ত্রিপল দিয়ে যতটা পারলাম ঢেকে দিলাম। কিন্তু এ ভাবে কত দিন? আশপাশের একাধিক বাড়ির বাসিন্দারা এমন সমস্যার সম্মুখীন।’’

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে-র কথায়, ‘‘এ ভাবে জিনিসপত্র নষ্ট হওয়া সত্যিই খুব সমস্যার। ওই বাড়িগুলি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়, সে দিকে আমরা নজর রাখছি। মেট্রোকেও বলা হয়েছে সমাধান খুঁজতে।’’

অন্য দিকে, ১৫ নম্বর সেকরাপাড়া লেনে গিয়ে দেখা গেল, গত বুধবার ওই বাড়ির একতলার একটি অংশে ফাটল ধরেছে। সেখানকার বাসিন্দাদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে মেট্রোর তরফে। কিন্তু উপরের তলার বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি। মেট্রোর আধিকারিকেরা জানান, এমনটা হওয়ার কথা নয়। তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Bowbazar East West Metro Kolkata Metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy