—প্রতীকী চিত্র।
কখনও বাড়ির লোহার গ্রিল কেটে নিয়ে, কখনও রাস্তার ধারে লাগানো লোহার কল খুলে নিয়ে, কখনও আবার গাড়ির যন্ত্রাংশ বা টায়ার উধাও করে দিয়ে চলতে থাকে ‘রাতের কারবার’! শুক্রবার এক কিশোরকে খুনের ঘটনার পরে ট্যাংরার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের এই কারবারই আপাতত পুলিশের নজরে। তাদের অনুমান, এই কারবারের সঙ্গে যুক্তদের হাতেই খুন হয়ে থাকতে পারে ওই কিশোর! এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও পুলিশের তরফে রবিবার রাত পর্যন্ত কোনও গ্রেফতারির খবর জানানো হয়নি।
শুক্রবার শেষ রাতে দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় মহম্মদ সোনু নামে বছর ষোলোর এক কিশোরকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই রাস্তার কাছেই একাধিক বাড়ির গায়ে রক্তের দাগ দেখতে পায়। উদ্ধার হয় রক্তমাখা ভাঙা টালিও। পুলিশের অনুমান, ওই টালি দিয়েই কুপিয়ে খুন করা হয়ে থাকতে পারে সোনুকে। ঘটনাস্থলের কাছেই একটি বাড়ি থেকে পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করে। তাতে দেখা যায়, রাত ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ ওই পাড়ার গলি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সেই কিশোর। এক মিনিটের মধ্যেই দেখা যায়, সে ছুটে পালিয়ে আসছে। তার ডান হাত গলার কাছে চেপে ধরা। তাকে ধাওয়া করেছে বেশ কয়েক জন।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের ওই পাড়ায় সম্ভ্রান্ত লোকজনেরই বাস। পাশেই ট্যাংরা ডাকঘর। রাস্তায় বিশেষ জটলার ব্যাপার নেই। খুনের ঘটনাটি ঘটার পর থেকে এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে। স্বাধীনতা দিবস পালনেরও কোনও উদ্যোগ দেখা গেল না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বললেন, “আমার বাড়ির দেওয়ালেই সব চেয়ে বেশি রক্তের ছোপ মিলেছে। রাতে কী হয়েছে, জানি না। সে ভাবে কোনও চিৎকার শুনতে পাইনি। কিন্তু সকালে উঠে দেখে মনে হল, আমাদের বাড়ির দেওয়ালেই কাউকে ঠেসে ধরে কোপানো হয়েছে।” ওই বাড়ির উল্টো দিকের একটি বহুতলের বাসিন্দার কথায়, “আমরাই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দিয়েছি। তবে এ পাড়ায় রাতে এমন দৃশ্য নতুন নয়। দল বেঁধে ছেলেরা সব ঘুরতে থাকে। প্রায়ই কারও বাড়ির লোহার কল, তো কারও বাড়ির গ্রিল কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে শোনা যায়। এই চুরি-চক্রের লোকজনই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।”
যে গলির ঘটনা, তার উল্টো দিকেই রয়েছে কলকাতা পুরসভার একটি পাম্পিং স্টেশন। সেখানকার গাড়িচালক নীলকমল ঘোষ বললেন, “কাছেই কয়েকটি এলাকার ছেলেরা রাতে এই তল্লাটে দাপিয়ে বেড়ায়। আমাদের গাড়ি রাখা যায় না। গাড়ির যন্ত্রাংশ, টায়ার সব চুরি করে নিয়ে বিক্রি করে দেয়।”
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাতে যাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ওই এলাকায় রাতে ঘুরে বেড়াত। কারওরই পাকাপাকি কোনও কাজ নেই। এদের বিরুদ্ধে অতীতে চুরির অভিযোগ রয়েছে কি না, দেখা হচ্ছে। তবে এ দিনও রাতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশের কোনও মন্তব্য শোনা যায়নি। দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের ওই এলাকায় রাতে নিরাপত্তার তেমন কোনও বন্দোবস্ত থাকে না কেন, সে প্রসঙ্গেও পুলিশের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। খুনের রাতে ওই পাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শুভম গুপ্ত বললেন, “স্বাধীনতা দিবসের ছুটি কাটাতে এসেছিলাম। এখন দেখছি, গোটা পাড়া ভয়ে বাড়িতে ঢুকে আছে। পাড়ার সকলের সঙ্গে আলোচনা করব ঠিক করেছি। আরও বেশি সংখ্যক বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে।”
এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর স্বপন সমাদ্দার বললেন, “নিরাপত্তার আরও ভাল বন্দোবস্ত কী করে করা যায়, সেটা দেখা হচ্ছে। এই খুনের ঘটনার ক্ষেত্রে যে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া গিয়েছে, সেটাই বড় কথা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy