Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Adwitiya

জীবনের ঝড়ঝাপ্টা সয়েও নাচ চালিয়ে যাচ্ছেন ওঁরা

ওই প্রতিযোগিতার কলকাতা অঞ্চলের ফাইনালে ‘নৃত্য’ বিভাগে প্রথম হয়ে তনিমা বলছেন, ‘‘ভাবিনি প্রথম হব। মঞ্চে আমার নাম ঘোষণার সময়েও মনে হচ্ছিল, ঠিক শুনছি তো?’’

ত্রয়ী: ‘অদ্বিতীয়া’র মঞ্চে (বাঁ দিক থেকে) তনিমা মুখোপাধ্যায়, মানসী মিশ্র এবং দেবস্মিতা রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র

ত্রয়ী: ‘অদ্বিতীয়া’র মঞ্চে (বাঁ দিক থেকে) তনিমা মুখোপাধ্যায়, মানসী মিশ্র এবং দেবস্মিতা রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ০১:০৫
Share: Save:

কেউ কঠিন অসুখে আক্রান্ত। স্বামীর মৃত্যুর পরে কেউ আবার একাই মানুষ করছেন সন্তানকে। জীবনের এই অবিরত ওঠাপড়ার মধ্যেও অবশ্য তাঁরা ভুলে যাননি শৈশবের ভালবাসাকে। তা হল নাচ। স্বপ্ন ছিল, এক দিন বড় মঞ্চে নাচ দেখিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দেবেন। মহেশতলার স্কুলশিক্ষিকা তনিমা মুখোপাধ্যায়, বেহালার ব্যাঙ্ককর্মী দেবস্মিতা রায়চৌধুরী, শিমুরালির গৃহবধূ মানসী মিশ্রের সেই স্বপ্নকে সফল করল ‘পি সি চন্দ্র মুগ্ধা নিবেদিত আনন্দবাজার পত্রিকা অদ্বিতীয়া’। ওই প্রতিযোগিতার কলকাতা অঞ্চলের ফাইনালে ‘নৃত্য’ বিভাগে প্রথম হয়ে তনিমা বলছেন, ‘‘ভাবিনি প্রথম হব। মঞ্চে আমার নাম ঘোষণার সময়েও মনে হচ্ছিল, ঠিক শুনছি তো?’’

বছর চল্লিশের ওই স্কুলশিক্ষিকা জানালেন, গত কয়েক বছরে বহু ঝড়ঝাপ্টা বয়ে গিয়েছে তাঁর সংসারে। বছর দশেক আগে চলে গিয়েছেন স্বামী। একমাত্র ছেলেকে তনিমা বড় করেছেন একা হাতে। পাশাপাশি সামলেছেন সংসার। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও ভোলেননি তাঁর ভালবাসার বিষয়কে। যখনই সময় পেয়েছেন, পাড়ার নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু কখনও তেমন বড় মঞ্চে নামেননি। স্বপ্ন যখন ফিকে হওয়ার মুখে, তখনই আসে সুযোগ। ‘নৃত্য’ বিভাগে প্রথম স্থানাধিকারী ওই শিক্ষিকা সরাসরি উঠে গিয়েছেন আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি কলামন্দিরে অনুষ্ঠিতব্য ‘গ্র্যান্ড ফিনালে’তে। তাঁর কথায়, ‘‘ছোট থেকে নাচ ভালবাসলেও তা নিয়ে তেমন উচ্চাশা ছিল না। সেই আশাকেই চাগিয়ে তুলেছে এই প্রতিযোগিতা। ২৯ তারিখের জন্য প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছি।’’

‘নৃত্য’ বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন বেহালার দেবস্মিতা। বেহালাতেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি করেন তিনি। বছর বত্রিশের ওই তরুণী বলেন, ‘‘সকাল ৯টায় অফিসে বেরোই। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ৭টা-৮টা। রোজ অনুশীলন করা সম্ভব নয়। তবু অফিস থেকে ফিরে কোনও কোনও দিন প্র্যাক্টিস করি।’’ দেবস্মিতা জানান, তাঁর মা-ই প্রথম তাঁকে ‘অদ্বিতীয়া’-য় অংশ নেওয়ার কথা বলেন। এক মিনিটের একটি ভিডিয়ো তুলে পাঠিয়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘দ্বিতীয় হয়ে বুঝতে পারলাম, যতই অফিস আর সংসারে চাপ থাক না কেন, নাচটা এখনও ভুলিনি। আমার মধ্যে যেটুকু প্রতিভা এখনও আছে, তাকে ফের সামনে আনার জন্য এই অনুষ্ঠানকে কুর্নিশ না করে পারছি না।’’ চূড়ান্ত পর্বে ওঠার জন্য আর একটি সুযোগ পাবেন দেবস্মিতা। এ বার তার প্রস্তুতি শুরু করবেন বলে জানালেন তিনি।

ছোট থেকেই নাচের তালিম নিচ্ছেন নদিয়ার শিমুরালির বাসিন্দা, প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থানাধিকারী বছর আঠাশের মানসী। এর আগে একটি উৎসবে বিজয়ীর মুকুট উঠেছিল তাঁর মাথায়। নাচ নিয়ে যখন ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছেন, তখনই নেমে আসে বিপর্যয়। মানসী বলেন,
‘‘বছরখানেক আগে কিডনির কঠিন অসুখ ধরা পড়ে। শয্যাশায়ী হয়ে পড়ি। চেন্নাই গিয়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। এখনও পুরো সুস্থ হইনি।’’ অসুখকে সঙ্গী করেই যখন ‘অদ্বিতীয়া’য় নামার কথা ভেবেছিলেন ওই তরুণী, পড়শিরা বলেছিলেন, ‘তুমি পারবে না। এমন অসুস্থ শরীরে নাচ?’

প্রতিবেশীদের সেই প্রশ্নকে অবলীলায় ভুল প্রমাণ করেছেন মানসী। তিনি বলছেন, ‘‘শত প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়েও যে জিততে পারি, তা-ই বলে দিল অদ্বিতীয়ার মঞ্চ। এখানে তৃতীয় হলেও গ্র্যান্ড ফিনালে-তে ওঠার সুযোগ এখনও আছে। এ বার শুরু তার লড়াই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Adwitiya Dance Programme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy