Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Tear Gas

কাঁদানে গ্যাস মেট্রো স্টেশনেও, ভয়ে বেপরোয়া ছুট যাত্রীদের

পাতালপথে এই ঘটনা যখন ঘটছে, উপরে তখন ইন্ডিয়ান সেকুলারফ্রন্টের (আইএসএফ) অবস্থান বিক্ষোভ ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। অবস্থান তুলতে মেট্রো স্টেশনের সামনেই পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে।

সুরক্ষা: কাঁদানে গ্যাসের প্রভাব এড়াতে নাকে-মুখে চাপা দিয়েছেন মেট্রোর যাত্রীরা। শনিবার, এসপ্লানেড স্টেশনে।

সুরক্ষা: কাঁদানে গ্যাসের প্রভাব এড়াতে নাকে-মুখে চাপা দিয়েছেন মেট্রোর যাত্রীরা। শনিবার, এসপ্লানেড স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:০৩
Share: Save:

কেউ এসেছেন কেনাকাটা করতে, কেউ অফিস শেষে বাড়ি ফেরার মেট্রো ধরতে। কিন্তু এসপ্লানেডমেট্রো স্টেশনে তাঁদের ঘিরে থাকা শান্ত পরিবেশটা হঠাৎ করেই বদলে গেল শনিবার বিকেলে। প্রথমে কেউ কেউ কাশতে শুরু করলেন, কেউ আবার চোখ জ্বলছে বলে ব্যস্তহয়ে পড়লেন। এর মধ্যেই কিছুএকটা ঘটেছে বুঝে সিঁড়ির দিকে ছুটতে শুরু করলেন কয়েক জন। সে দিক থেকেও তড়িঘড়ি লোকজন নীচের দিকে নেমে আসছেন দেখে বিভ্রান্তি আরও বাড়ল। বার বার শান্ত থাকার ঘোষণা করেও সামাল দিতে নাজেহাল হলেন মেট্রো স্টেশনে থাকা পুলিশকর্মীরা। তাই এক সময়ে বন্ধই করে দিতে হল মেট্রো স্টেশনের তিনটি গেট। অভিযোগ, তার মধ্যেই তৈরি হল পদপিষ্ট হওয়ার মতো অবস্থা।

পাতালপথে এই ঘটনা যখন ঘটছে, উপরে তখন ইন্ডিয়ান সেকুলারফ্রন্টের (আইএসএফ) অবস্থান বিক্ষোভ ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। অবস্থান তুলতে মেট্রো স্টেশনের সামনেই পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে। তাদের দিকেও পাল্টা উড়ে আসছে ইট-পাথর। বাঁশ, লাঠি নিয়েও পুলিশকে তাড়া করছেন কেউ কেউ। পুলিশও পাল্টা একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে। পুলিশের তাড়া খেয়ে কেউ কেউ মাথা বাঁচাতে ঢুকে পড়ছেন ফুটপাত সংলগ্ন দোকানে। অনেকে আবার ঢোকার চেষ্টা করছেন মেট্রো স্টেশনে। নীচে থাকা লোকজন আবার ভাবছেন, মেট্রোয় কোনও বিপর্যয় ঘটল নাকি? ফলে তাঁরাও ছুটে বেরোনোর চেষ্টা করছেন প্রাণপণ।

এমনই ছুটে বেরোনোর চেষ্টায় থাকা এক ব্যক্তি কিছুটা সামলে নিয়ে বললেন, ‘‘দমদম থেকে মেট্রোয় উঠেছিলাম। রোজইএসপ্লানেডে নেমে অফিস পর্যন্ত হেঁটে যাই। আজ নামতেই কেমন চোখ জ্বলতে শুরু করে। এর পরে স্মার্ট কার্ড পাঞ্চ করে বেরোতেই মারাত্মক গ্যাস ঘিরে ধরে। কাশির সঙ্গে সঙ্গে চোখ জ্বালায় দাঁড়াতে পারছিলাম না। ভয়ে ছুটে বেরোনোর চেষ্টা করতে গিয়ে সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে পড়েও গিয়েছিলাম।’’ তাঁর পাশে দাঁড়ানো আর এক মহিলা বললেন, ‘‘কী হয়েছে, বুঝতে না পেরেছেলের মুখে রুমাল চাপা দিয়েদৌড়তে শুরু করি। গেটের কাছেগিয়ে দেখি, প্রচুর ভিড়। অনেকেই প্রাণপণ উপরের দিকে ঠেলছেন বেরোনোর জন্য। এক দল আবার নীচের দিকে ঠেলছেন ভিতরে আসার জন্য। কিছু পরে এক পুলিশকর্মী আমাকে ধরে ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘শান্ত হোন। বাইরে মিছিল ঘিরে ঝামেলা চলছে। মেট্রোই এই মুহূর্তে নিরাপদ।’ এ কথা শুনে মেট্রোর মধ্যেই ৩০ মিনিট বসে ছিলাম।’’

মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝেএক সময়ে এক, চার এবং পাঁচ নম্বর গেট বন্ধ করে দিতে হয়। পাঁচনম্বর গেটটি ১০ মিনিট বন্ধ রাখারপরে খোলা গেলেও এক এবং চার নম্বর গেট প্রায় ৩০ মিনিট বন্ধ রাখতে হয়েছে। ওই কয়েকটি গেটের কাছে কর্তব্যরত মেট্রোকর্মীরা অসুস্থহয়ে পড়েন। যদিও তাঁদের স্থানীয় ভাবেই সুস্থ করা গিয়েছে। মেট্রোর কর্তাদের দাবি, মেট্রো স্টেশনে এক বিশেষ ধরনের হাওয়াচলাচলের প্রক্রিয়া চলে। বাইরে থেকে হাওয়া টেনে স্টেশনের ভিতরে ঢোকানো হয়। সেই কারণে মেট্রো স্টেশনের গেটে দাঁড়ালে প্রবল হাওয়া লাগে। ভিতরে থাকা হাওয়া বিশেষ পদ্ধতিতে বার করে দেওয়া হয়। কারণ, যাত্রীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জেরে সেই হাওয়ায় অক্সিজেনের মাত্রা একটা সময়ের পরে কমে যায়। এর সঙ্গেই চলে তাপমাত্রা ঠিক রাখার আর একটি আলাদা ব্যবস্থা।

এ দিন এসপ্লানেড স্টেশনে এই দুই ব্যবস্থাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিনমূলত যে জায়গায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে, তার আশপাশেই একাধিক মেট্রোর গেট রয়েছে। ওই পথেই মেট্রোর ভিতরে গ্যাস ঢুকেছে বলে অনুমান।বিষয়টি পুলিশকর্মীরা খেয়ালকরেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ মেনে নিয়েই ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়ানো, কর্তব্যরত এক পদস্থ পুলিশকর্তার মন্তব্য,‘‘এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে, সব দিকে খেয়াল রাখা যায়নি। যেখানে ভিড় দেখা গিয়েছে, সে দিকেই তাক করে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tear Gas Metro Passengers Esplanade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy