তিনটি মূল্যায়ন একসঙ্গে করে বছরের শেষে চূড়ান্ত মার্কশিট দেওয়া হয়। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
চক-ডাস্টার কেনাই শুধু নয়, পরীক্ষার পরে কী ভাবে পড়ুয়াদের মার্কশিট দেওয়া হবে, সেই চিন্তাতেও কার্যত রাতের ঘুম উড়েছে প্রাথমিকের শিক্ষকদের। শুধু তা-ই নয়, কী ভাবে স্কুলের বিদ্যুতের বিল মেটানো হবে, কোথা থেকেই বা কেনা হবে দৈনন্দিন কাজের ফাইলপত্র, পড়ুয়াদের হাজিরা খাতা— সে সব নিয়েও ঘোর চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
সম্প্রতি উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিকে কম্পোজ়িট গ্রান্ট দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে শিক্ষা দফতর। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলগুলির ক্ষেত্রে সেই খাতে শিকে ছেঁড়েনি। প্রাথমিক শিক্ষকদের মতে, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের থেকেও প্রাথমিক স্কুলেই সব চেয়ে বেশি দরকার ওই টাকা।
কারণ হিসাবে তাঁরা জানাচ্ছেন, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের
থেকে বেতন হিসাবে বছরে ২৪০ টাকা নেওয়া হয়। সংগৃহীত সেই বেতন দিয়ে একটি তহবিল তৈরি করা যায়। যা থেকে স্কুল চালানোর জন্য কিছু জিনিস অন্তত কেনা
যায়। কিন্তু প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পুরো পড়াশোনা হয় বিনামূল্যে। ফলে, প্রাথমিক স্কুলে কম্পোজ়িট গ্রান্ট না এলে স্কুল চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে, বলছেন শিক্ষকেরা।
হাওড়ার আমতা এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পিন্টু পাড়ুই বলেন, ‘‘এখন বছরে তিন বার পড়ুয়াদের মূল্যায়ন হয়। তিনটি মূল্যায়ন একসঙ্গে করে বছরের শেষে চূড়ান্ত মার্কশিট দেওয়া হয়। আমাদের স্কুলের ভাঁড়ার তো শূন্য। তা হলে কী ভাবে পড়ুয়াদের মার্কশিট দেওয়া হবে? শিক্ষকদের নিজের খরচে কিনে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। অথচ, অনেক শিক্ষকই গাঁটের কড়ি খরচ করে তা দিতে চাইবেন না। সব মিলিয়ে বছর শেষে মার্কশিট দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’’
শিক্ষকদের একাংশ আরও জানাচ্ছেন, কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা না আসায় বহু স্কুল ঠিক সময়ে বিদ্যুতের বিল মেটাতে পারছে না। এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি ঠিকই, কিন্তু বিদ্যুৎ দফতর থেকে সাবধান করে যাওয়া হয়েছে। এক প্রাথমিক শিক্ষক তথা শিক্ষক নেতা আনন্দ হান্ডা বলেন, ‘‘নতুন বছরে পড়ুয়াদের হাজিরা খাতা কেনাও সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় ফাইলপত্র কোথা থেকে কেনা হবে?’’
উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক ভাস্কর ঘোষ বলেন, “শিক্ষা দফতর মনীষীদের জন্মদিন পালন করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলগুলি সেই অনুষ্ঠানের টাকা কোথা থেকে পাবে? প্রাথমিক স্কুল তো পুরোটাই অবৈতনিক। শিক্ষকেরা পকেটের পয়সা দিয়ে জন্মদিন পালনের খরচ দিয়েছেন। এমন চললে আগামী বছরে প্রজাতন্ত্র দিবস থেকে শুরু করে সরস্বতী পুজো কী ভাবে করা হবে?”
ভাস্করের মতে, এক জন পড়ুয়ার শিক্ষার ভিত তৈরি হয় প্রাথমিক স্কুলে। তাই তাদেরই আগে কম্পোজ়িট গ্রান্ট দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।’’ শিক্ষক নেতা তথা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘পড়ুয়ার সংখ্যা অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলি কম্পোজ়িট গ্রান্ট পেয়েছে। বহু প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কিন্তু হাতে গোনা। ওই স্কুলগুলির জন্য কম্পোজ়িট গ্রান্টের বরাদ্দও খুব বেশি লাগত না। সেটুকুও কি দিতে পারে না শিক্ষা দফতর?“
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য বলছেন, ‘‘কম্পোজ়িট গ্রান্ট রাজ্য ও কেন্দ্র যৌথ ভাবে দেয়। রাজ্য তাদের ভাগের কম্পোজ়িট গ্রান্টের আংশিক দিয়েছে। কেন্দ্র কিছুই দেয়নি। রাজ্য তাদের ভাগের বাকি অংশ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy