—প্রতীকী চিত্র।
রাজারহাট চৌমাথা থেকে বিষ্ণুপুরের দিকে খানিকটা এগোলেই চোখে পড়বে একাধিক বহুতল আবাসন। সুদৃশ্য বহুতলগুলি দেখলে কে বুঝবে, সেটি গ্রাম, অর্থাৎ পঞ্চায়েত এলাকা। নগরোন্নয়ন চলছে নানা ভাবে। সাধারণ গ্রামবাসীদের হাতে স্মার্টফোন থাকলেও এলাকায় নেই একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি হাসপাতাল।
এ ছবি পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা গ্রামীণ রাজারহাটের। যেখানে এখনও বহু মানুষ চাষবাস করে সংসার চালান। অথবা, খুব বেশি হলে নিউ টাউনের কোনও সংস্থায় সাধারণ কোনও চাকরি করেন। যাঁদের বেসরকারি জায়গায় চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা নেই। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়েছে। তাই রাজারহাটে গ্রামের মানুষের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে খোঁজ করতেই জানা গেল, সেখানকার সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্তঃসারশূন্য পরিস্থিতির কথা।
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, সরকারি ব্যবস্থায় সঙ্কটজনক রোগীর দ্রুত চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামোই নেই রাজারহাটে। পাঁচটি পঞ্চায়েত মিলিয়ে অন্তত চার লক্ষ মানুষের বাস। অথচ, সরকারি ব্যবস্থা বলতে রেকজোয়ানির গ্রামীণ হাসপাতাল, চাঁদপুরের আড়বেলিয়া এবং পাথরঘাটার দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কিছু সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র। যেখানে সঙ্কটজনক রোগী গেলেই শহরে হাসপাতালে ‘রেফার` করা হয়। গ্রামের মানুষের বক্তব্য, রেকজোয়ানির গ্রামীণ হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে বিশেষ ফারাক নেই। ছোট অস্ত্রোপচার করাতেও আর জি কর, এন আর এস বা বারাসত মেডিক্যাল কলেজে ছুটতে হয়। ছানি কাটাতেও ভরসা অন্য হাসপাতাল। সঙ্কটজনক রোগীদের ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। ভরসা ৩০-৪০ কিলোমিটার উজিয়ে কলকাতা, নয়তো বারাসতের সরকারি হাসপাতাল।
গ্রামীণ ওই হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেখানে সর্বাধুনিক ব্যবস্থা বলতে রয়েছে এলাকার বিধায়কের তহবিলের টাকায় বেশ কিছু দিন আগে কেনা একটি ইউএসজি যন্ত্র। যন্ত্রীর অভাবে যেটি এখনও চালু করা যায়নি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বরাহনগর হাসপাতালের রেডিয়োলজিস্টকে দিয়ে ওই যন্ত্র চালু করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা-ও অবশ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে। চাঁদপুর ও পাথরঘাটা পঞ্চায়েত এলাকার দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রসঙ্গে গ্রামবাসীরা জানালেন, সেখানে জ্বর-সর্দি, মাথাব্যথা কিংবা উচ্চ রক্তচাপের মতো কিছু রোগের চিকিৎসাটুকুই হয়। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ মজুত না থাকায় বাইরে থেকে তা কিনে নিতে হয়। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমাদের গ্রামের হাসপাতালও সরকারি প্রোটোকল অনুযায়ী চলে। বরং আমরা কিছুটা উন্নত। কারণ, এখানে ইউএসজি যন্ত্র রয়েছে। তবে, নিউ টাউনে একটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার প্রস্তাব রয়েছে।’’ তিনি জানালেন, পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি, রোগী চাইলে অনলাইনেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। ৩৭টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস, মুখ, বুক ও সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের চিকিৎসা হয়। যা অতীতে ছিল না।
এক সময়ে রাজারহাটেরই বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে তৈরি হয়েছিল উন্নত শহর নিউ টাউন। বর্তমানে রাজারহাটের চাঁদপুর, পাথরঘাটা, রাজারহাট-বিষ্ণুপুর (১ ও ২) এবং জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া— এই পাঁচটি পঞ্চায়েতের অজস্র মানুষ জীবিকার জন্য নিউ টাউনের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু সেখানকার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সঙ্গতি নেই বেশির ভাগেরই। তাই গ্রামবাসীদের অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘গ্রাম ও শহরের ফারাক মেনে কি নগরায়ণ এগিয়েছে? নিউ টাউন তো বটেই, প্রোমোটিংয়ের দৌলতে রাজারহাটের প্রত্যন্ত এলাকাতেও যদি বহুতল গড়ে ওঠে, তবে সরকার কেন পূর্ণাঙ্গ একটি হাসপাতাল তৈরি করবে না?’’ বিজেপি নেতা ভাস্কর রায়ের অভিযোগ, ‘‘ওই গ্রামীণ হাসপাতালের সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোনও তফাত নেই। ওখানে কোনও পরিকাঠামোই নেই। সামান্য অ্যান্টি-ভেনামও সব সময়ে মেলে না।’’ সিপিএম নেতা সপ্তর্ষি দেবের কথায়, ‘‘একটি ট্রমা সেন্টার পর্যন্ত নেই এখানে। রেকজোয়ানি হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নতি করতে বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই দাবি করছি। আমরা চাই, নিউ টাউনে একটি অন্তত সরকারি হাসপাতাল হোক, যেখানে গ্রামের মানুষও সব ধরনের চিকিৎসা পাবেন।’’
যদিও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর করের দাবি, ‘‘পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছি। জেলা পরিষদ বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একটি বাড়ি তৈরি করতে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। আগের তুলনায় রাজারহাটের গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। আরও হবে। বেসরকারি জায়গায় চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy