—প্রতীকী চিত্র।
চেনা চেনা মুখের সারি, তবু মুখ চেনা নয়।
প্রতিটি ভোটের মতোই অচেনা মুখের সারির চেনা ছবিটা শনিবার পঞ্চায়েত ভোটের দিনে দেখা গেল নিউ টাউনের শহর ও গ্রামে। এ বারও তাঁদের কেউ ভোটারদের বুথে যেতে বারণ করেছেন, কেউ বুথে ঢুকে ভোটের গতি কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, কেউ নেতাদের নির্দেশ মতো বুথে বুথে গিয়ে নির্দেশিত চিহ্নে একাধিক ভোট দিয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের পরিচালনা করেছেন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় ক্যাডারেরা। যাঁরা গণতান্ত্রিকঅধিকার ক্ষুণ্ণ করার মূল ভূমিকাটি নিয়ে থাকেন, এমন দিন আনা দিন খাওয়া লোকজনকে ব্যবহারের মাধ্যমে। যাঁরা ওই সব লোকজনকে বেআইনি কাজ করলেও আইনি সমস্যায় জড়াতে না দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন।
নিউ টাউনের এ পি জে আব্দুল কালাম কলেজ হোক কিংবা পার্শ্ববর্তী একেবারে পিছিয়ে থাকা পঞ্চায়েত এলাকা— ওই সব যুবকের জটলা কিংবা বাইকে চেপে এ দিক-সে দিকে ছোটার ছবি দেখা গেল সর্বত্রই।
তারই ফাঁকে কয়েক জনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সংবাদমাধ্যমে মুখ দেখা গেলে বদনাম, পুলিশ ধরলে জামিন পাওয়ার ঝামেলা— এত ভয় সত্ত্বেও কিসের টানে প্রতি বার ছুটে আসা?
বাগুইআটি থেকে আসা, পেশায় স্কুলগাড়ির খালাসি এক যুবক স্পষ্ট জানালেন, ঝুঁকি নিয়েও এ সব করতে হয়। কারণ, তাতে সারা বছর রোজগারের নিশ্চয়তা থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘বড় নেতা আমাদের চেনেন না। আমাদের চেনেন পাড়ার স্থানীয় নেতারা। ভোটে কাজ না করলে, জমায়েতে যোগ না দিলে রোজগার হারাব।’’
এক জায়গায় ভোটের দিনে অন্য জায়গা থেকে লোক এনে ভোটকে প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগ প্রসঙ্গে এক দাপুটে বামপন্থী নেতা (বর্তমানে প্রয়াত) বহু বছর আগে বলেছিলেন, ‘‘ভোট হলগণতন্ত্রের উৎসব। তাতে মানুষ শামিল হতে আসবেনই।’’ সেই ঐতিহ্য আরও বেড়েছে রাজ্যে পালাবদলের পরে।
পঞ্চায়েত ভোটের দিন নিউ টাউনের বাইরের দমদম কিংবা বিধাননগর এলাকার শাসকদলের কয়েক জন দাপুটে নেতাকেগাড়িতে, বাইকে চেপে সর্বত্র ঘুরতে দেখা গিয়েছে। যাঁদের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন ভোট কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হওয়া নিম্নবিত্ত পরিবারের বহু যুবক। তাঁদের কেউ আনাজ বিক্রি করেন, কেউটোটো বা অটো চালান, কেউ বাসের কন্ডাক্টর।
জ্যাংড়া অঞ্চলের একটি ভোট কেন্দ্রের অদূরে থাকা, নাগেরবাজারের বাসিন্দা এক দোকানমালিক যুবক বললেন, ‘‘দক্ষিণ দমদমের এক নেতার জন্য আমরা অনেকেই দোকান বন্ধ করে এসেছি। নির্দেশ না মানলে দোকান খুলতে পারব না।’’
পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে প্রায় সর্বত্র মারামারি, রক্ত ঝরার একাধিক ঘটনার পিছনে দলীয় প্রতীককে ভালবাসার চেয়েও নিজের রোজগার নিশ্চিত করার দায় যে বেশি, তা জানালেন ওই যুবকদের অনেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গণতন্ত্রের উৎসবে দলে দলে যুবকদের যোগদান বাধ্যতামূলক করার ফলে দমদম, বাগুইআটি, জ্যাংড়া, হাতিয়াড়া, নিউ টাউনের মতো এলাকায় শনিবার উল্লেখযোগ্য ভাবে কম ছিল অটো, টোটো, রিকশা। অনেক জায়গাতেই বাজারগুলিতে আনাজ ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি ছিল অন্য দিনের তুলনায় কম।
ভোট করতে আসা ওই সব যুবকেরা জানালেন, এ বার প্রাতরাশে ভাল প্যাকেট জুটেছে। দুপুরে জুটেছে মাটন কিংবা চিকেন বিরিয়ানি। কেউ কেউ জানালেন, তাঁদের পরিবারে দুপুরে লুচি-তরকারির সঙ্গে সেদ্ধ ডিমও দেওয়া হয়েছে।
বুথ দখলের চেষ্টা, ভোটারদের ভয় দেখানো, ছাপ্পা ভোট দেওয়া—পরিবারের লোকজন জানেন? ছেলেমেয়েরা জানতে পারলে খারাপ ভাববে না? গৌরাঙ্গনগরের বাসিন্দা এক টোটোচালকের কথায়, ‘‘এ সব না করলে রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া হবে না। আমার কাঁধে গোটা সংসার। অত কিছু ভাবতে চাই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy