Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
theatre artist

theatre in crisis : সঙ্কটে নাট্যকর্মীরা, সরকারি হল খোলা নিয়ে ধন্দ

জনসমাগমে রাশ টেনে রেস্তরাঁ, শপিং মল থেকে সিনেমা হল খোলা হচ্ছে। অনেক কিছু ছন্দে ফিরলেও এখনও কোনও দিশা নেই নাট্যকর্মীদের জন্য।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২১ ০৭:৫৪
Share: Save:

ভোটের আগেও অন্য রকম ছিল ছবিটা। পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরে রাজনৈতিক টানাপড়েনের পটভূমিতে সময়ের কথা বলতে মাঠে নেমেছিলেন নাট্যকর্মীরাও।

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আগের মুহূর্তে এপ্রিলেও ‘মেফিস্টো’ দেখতে ভিড় উপচে পড়েছিল গিরিশ মঞ্চে। এ যাত্রায় জীবনের অনেক কিছু ছন্দে ফিরলেও এখনও কোনও দিশা নেই নাট্যকর্মীদের জন্য। জনসমাগমে রাশ টেনে রেস্তরাঁ, শপিং মল থেকে সিনেমা হল খোলা হচ্ছে। সম্প্রতি তপন থিয়েটারে অর্ধেক হল ভর্তি রেখে শামসুল হকের ‘বুকঝিম ভালবাসা মঞ্চস্থ করেছে ‘অনীক কলকাতা’ বলে একটি দল। তাঁদের তরফে টিকিট বিক্রির টাকা হলকর্মীদের সাহায্যে কাজে লাগানোর কথা বলছেন শ্রমণ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে থিয়েটার চালু করার বিষয়টি সেই বিশ বাঁও জলে।

বাংলার নাট্যজগতের অনেক চেনা মুখই এখন রাজনীতির প্রথম সারিতে। তবে সরকারি হল খোলা নিয়ে সদুত্তর নেই কারও কাছে। মন্ত্রী ব্রাত্য বসু সুসময়ের অপেক্ষা করতে বলছেন। রাজ্যসভার সাংসদ অর্পিতা ঘোষ বলছেন, “অর্ধেক
আসন-সহ হল খুলে থিয়েটারে অনুমতির জন্য আমি ইন্দ্রনীলদাকে (তথ্য-সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী) অনুরোধ করব।” ইন্দ্রনীল সেনের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই বিষয়টি ঠিক হবে।”

এই সঙ্কটে কিছু স্টুডিয়োয় ইউটিউব ভিডিয়োর জন্য আলো করছেন থিয়েটারের পরিচিত আলোকশিল্পী সৌমেন দাস। কিংবা তাকিয়ে আছেন বিয়েবাড়ি সাজানোর কাজের দিকে। কসবার এক নাট্যকর্মী গাড়ি ঠেলে ফল বেচছেন। বেলগাছিয়ায় আর এক জনের ভরসা ফোটোকপির দোকান। অতিমারি-পরবর্তী পর্যায়ে থিয়েটারের নতুন ভাষা খোঁজার কথা অনেকেই বলে চলেছেন। চেনা প্রেক্ষাগৃহ বা বাঁধাধরা মঞ্চের বাইরে থিয়েটারকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে নানা জল্পনা। তবে কৌশিক সেনের মতে, “নতুন আঙ্গিকের থিয়েটার চালু করেও অনেক নাট্যকর্মীর জীবনে সুরাহা আনা সম্ভব হবে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলের সিলিংয়ে আলো লাগান বা টিকিট কাউন্টারে কাজ করেন, এমন অনেকেই থিয়েটারকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসলেও ফিরতে পারবেন না।”

বিধানসভা ভোটপর্বেও সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘মেফিস্টো’, কৌশিকের ‘কবির বন্ধুরা’ অনেকের কাছেই সময়ের স্বর হয়ে উঠেছিল। লকডাউনের গুমোট ভেঙে মঞ্চে ফিরতে মুখিয়ে আছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা পৌলমী বসুও। বলছেন, “সিনেমা তো লোকে রিলিজ় করার অনেক পরেও দেখতে পাবে। কিন্তু নতুন নাটক তৈরি করেও শো করতে না-পারার যন্ত্রণা ভুক্তভোগীরাই বোঝেন।”

নাট্যকর্মীদের সঙ্কটে নানা ভাবে তাঁদের পাশে থাকছেন দেবশঙ্কর হালদার, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সৌমিত্র মিত্র, সীমা মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বিমল চক্রবর্তীরা। কিন্তু এ কোনও স্থায়ী মুশকিল-আসান নয়। সঙ্কটে সাময়িক প্রলেপমাত্র, মানছেন সকলেই। কৌশিকের আক্ষেপ, “ক্ষেত্র বিশেষে ডান-বাম সব দলের লোকেরাই ব্যবহার করে থিয়েটারকে। এই বিপদে সেটা আর একটু মাথায় রাখলে ভাল হত।”

তবু এই সঙ্কটকেই শেষ কথা বলতে রাজি নন সোহিনী সেনগুপ্ত। লকডাউন-পর্বে নতুন নাটকের শোয়ের পাশাপাশি তাঁদের নাট্যশিক্ষার ক্লাসে উৎসাহে কোনও ভাটা নেই। তবে শারীরিক দূরত্ব মেনে ছোট ছোট ক্লাসে ভাগ করে শেখানোর পরিশ্রম বেশি! তাই শিক্ষার্থীর সংখ্যায় একটু রাশ টানতে হয়েছে। সোহিনীর চেনা কলাকুশলীরাও কেউ কেউ এখন অন্য কাজ করছেন। তবে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, থিয়েটার চালু হলেই ফিরবেন তাঁরা। “থিয়েটারের লড়াই তো আগেও সোজা ছিল না। অতিমারির ধাক্কায় তা মুছে যাবে, এটা আমি মানি না। সঙ্কট পার হয়ে প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চেই জমিয়ে শো হবে”, আশাবাদী সোহিনী।

অন্য বিষয়গুলি:

Theatre Hall COVID-19 Pandemic theatre artist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy