প্রতীকী ছবি।
মেয়ের সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা ছেলেটিকে পছন্দ নয়। তাই নিজের মেয়েকে জোর করে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করানোর অভিযোগ উঠেছিল মায়ের বিরুদ্ধে। যাদবপুর বাঘা যতীন পল্লির এই ঘটনায় ওই তরুণীকে খুঁজে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন সেই তরুণ। গত মার্চের এই মামলার পরে চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও লিভ-ইন সঙ্গীর দেখা পাননি সেই যুবক। উল্টে থানা-পুলিশ আর আইনি লড়াই করেই তারিখের পর তারিখ কেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের পুজোর সময়ে। তার কয়েক বছর আগে রঞ্জন নাথ নামে বছর ঊনচল্লিশের ওই যুবকের সঙ্গে জাতীয় গ্রন্থাগারে পরিচয় হয় বছর ঊনত্রিশের ওই তরুণীর। এর পরে দু’জনে নিউ টাউন এলাকায় ফ্ল্যাট নিয়ে লিভ-ইন করতে শুরু করেন। পুজোর সময়ে ওই তরুণী কিছু জরুরি নথি আনতে নিজের বাড়িতে ফেরেন। অভিযোগ, ৭ অক্টোবর বাড়ি ফেরার পরে ৯ অক্টোবর রঞ্জনের সঙ্গে তিনি দেখা করতে বেরিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি ফিরে রঞ্জনের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন। রাত প্রায় ১টা নাগাদ তরুণী ফোনে জানান, কেউ কলিং বেল বাজাচ্ছে, তাই ফোন রেখে দরজা খুলতে যাচ্ছেন তিনি। তার পর থেকেই আর খোঁজ নেই তরুণীর। তাঁর ফোনও বন্ধ ছিল এর পর থেকে।
রঞ্জনের অভিযোগ, তরুণীর বাড়িতে গেলে তাঁকে প্রথমে বলা হয়, মেয়ে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। তবে অনেক খোঁজাখুঁজির পরে জানতে পারেন, ওই তরুণীকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এর পরে সেখানে গিয়ে অনেক চেষ্টা করেও তরুণীর সঙ্গে দেখা করতে না পেরে রঞ্জন হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
গত মার্চের এই মামলা শুনে হাই কোর্ট একাধিক নির্দেশ দিয়েছিল। কেন ওই তরুণীকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে, তা জানতে চেয়ে ওই কেন্দ্র সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। কেন্দ্রটি বৈধ ভাবে চলছে কি না, সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না— তা-ও খতিয়ে দেখতে বলা হয়। ওই কেন্দ্রে অতর্কিতে হানা দিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নির্দেশও দেওয়া হয় পুলিশকে। পরবর্তী শুনানির দিন নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিককে কোর্টে হাজিরার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি, ওই তরুণীকে কোনও সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বারুইপুরের পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে বন্ধ খামে রিপোর্ট দিতে বলে আদালত। এর পরে এই সংক্রান্ত আরও একটি শুনানিতে আদালত তরুণীর গোপন জবানবন্দি জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেয় পুলিশকে।
রঞ্জনের দাবি, পুলিশ সেই রিপোর্ট জমা দেয়। তাতে তরুণী দাবি করেন, তিনি রঞ্জনের কাছে ফিরতে চান না। কিন্তু এই দাবি চাপের মুখে করানো হয়েছে বলে রঞ্জনের অভিযোগ। তাঁর পক্ষের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন দাবি কতটা সজ্ঞানে করা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কোনও ভাবেই কোনও প্রাপ্তবয়স্ককে এ ভাবে আটকে রাখা যায় না। মেয়েটির লিভ-ইন সঙ্গীর ওঁর সম্পর্কে জানার অধিকার রয়েছে। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প রয়েছে, কোনও পুনর্বাসন কেন্দ্রেই পাঁচ মাসের বেশি কাউকে রাখা যায় না। তরুণী লিভ-ইন সম্পর্কে থাকতে না চাইলে সেটা কোর্টের কাছে সরাসরি বলবেন।’’ এ নিয়ে সওয়াল-জবাব শুনে ৭ জুলাই আদালত নতুন নির্দেশে বলেছে, জেলা বিচারক তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের অফিসের চেয়ারম্যান ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলবেন এবং রিপোর্ট দেবেন। ২৭ জুলাই পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা।
তবে তরুণীর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘অকারণ দোষারোপ করা হচ্ছে। মেয়ে কী চায়, সে জানিয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া সে কোনও সম্পর্কে থাকবে, কি থাকবে না, তার চেয়েও বেশি জরুরি ওর চিকিৎসা হওয়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy