Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
thief

Thief: ‘গন্ধ লাগে’ চোরের! তাই প্যানে হাত ঢুকিয়ে টাকা, গয়না বের করে আনতে হল পুলিশকেই

ঘটনার সূত্রপাত গত পয়লা জানুয়ারি। মঞ্জু মাইতি নামে রামচন্দ্রপুর থানা এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা হরিদেবপুর থানায় চুরির অভিযোগ দায়ের করেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:২৪
Share: Save:

চুরির সামগ্রী কোথায়? চোরের ভাড়া নেওয়া ঘরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও সে সব না পেয়ে তাকে কড়া ধমক দিয়েছিলেন এক পুলিশকর্মী। আর তাতেই শৌচাগারে নিয়ে গিয়ে পুলিশকর্মীদের প্যানের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দেয় চোর!

ওখানে কী? চোরের উত্তর, ‘‘ওতেই আছে।’’ পুলিশকর্মীরা এ বার বলেন, ‘‘বার করো!’’ এত ক্ষণ শান্ত থাকা চোরের কান্না শুরু হয় এ বার। পুলিশকর্মীরা যতই তাকে চাপ দিতে থাকেন, সে ততই উত্তেজিত ভাবে বলে চলে, ‘‘আমি সব বলে দিয়েছি স্যর! খালি ওখানে হাত ঢোকাতে বলবেন না। আমার গন্ধ লাগে। আমি পারব না!’’ শেষে নিরুপায় হয়ে পুলিশকেই ওই প্যানের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বার করতে হয় চুরির জিনিস, প্লাস্টিকে মোড়া সোনার গয়না ও নগদ এক লক্ষ টাকা! বছরের শুরুতেই হরিদেবপুর থানার এই উদ্ধারকাজ প্রশংসা পেয়েছে লালবাজারের বড় কর্তাদের। এই কাজের জন্য ঘটনার দিন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের পুরস্কৃত করার ভাবনাচিন্তাও হচ্ছে বলে খবর।

ঘটনার সূত্রপাত গত পয়লা জানুয়ারি। মঞ্জু মাইতি নামে রামচন্দ্রপুর থানা এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা হরিদেবপুর থানায় চুরির অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশকে তিনি জানান, গত ২৬ থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে রামচন্দ্রপুরে তাঁদের ফ্ল্যাটে কেউ ছিলেন না। ফিরে এসে তাঁরা দেখেন, আলমারি ভেঙে টাকা, সোনার গয়না সব লুট করে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ লক্ষ টাকার মতো। মামলা রুজু করে দ্রুত তদন্তে নামে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। চোর সন্দেহে শঙ্কর রজবর ওরফে হাজু নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে পুলিশ। গত রবিবার হরিদেবপুরের কবরডাঙা মোড়ের কাছ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘হাজু আগেও বহু বার গ্রেফতার হয়েছে। বাড়িতে ওর বৃদ্ধা মা রয়েছেন। যে কোনও বাড়ির পাইপ বেয়ে উঠে পড়া ওর বাঁ হাতের কাজ। বেশির ভাগ সময়েই নেশা করে থাকে। যে এলাকায়, যে ভাবে চুরি হয়েছে, তাতে প্রথম থেকেই আমাদের ওর উপরে সন্দেহ ছিল। গ্রেফতার হওয়ার পরে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ও চুরির কথা স্বীকার করে নেয়। কিন্তু চুরির সামগ্রী উদ্ধার করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয়েছে আমাদের।’’

ওই পুলিশকর্মী জানান, হাজুর দু’টি ঠিকানায় পরপর তল্লাশি চালানো হয়। প্রথমে কোথাওই কিছু পাওয়া যাচ্ছিল না। অথচ, চোর পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছে, চুরির টাকায় চাল এবং অনেকটা মাখন কিনে রেখেছে সে। মায়ের তো হয়ে যায়-ই, ওই মাখন আর ভাত তারও খুব প্রিয় খাবার। কিন্তু ঘরে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না দেখে ধমক দেওয়া হয়েছিল হাজুকে। তাতেই সে দেখিয়ে দেয়, কোথায় রয়েছে চুরির সামগ্রী।

চুরির সামগ্রী উদ্ধারের সময়ে সেখানে উপস্থিত থাকা এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘হাজু কিছুতেই হাত ঢোকাবে না। শেষে নাকে-মুখে রুমাল বেঁধে আমিই ওই প্যানের মধ্যে হাত ঢোকাই। তাতেই হাতে লাগে একের পর এক প্লাস্টিকের প্যাকেট। সেগুলির মধ্যে সোনার গয়না আর টাকা ভরে গার্ডার দিয়ে পেঁচিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিল হাজু। বার করার পরে গয়নাগুলিকে সাফ করা হয়েছে। কিন্তু টাকাগুলি ভিজে যাওয়ায় শুকোতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০০ টাকার নোটে এক লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে।’’

চুরি যাওয়া সোনা আর টাকা বৃহস্পতিবার ফিরে পাওয়ার পরে অভিযোগকারিণী বলেন, ‘‘আদতে আমাদের বাড়ি মেদিনীপুরে। কিছু দিন আগেই কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনে এসেছি। একটা দোকানও কেনার কথা রয়েছে। কিছুটা টাকা দেওয়া হলেও পাঁচ লক্ষ টাকার মতো বাকি। ওই টাকার কিছুটা বাড়িতে এনে রাখা হয়েছিল। চোর সেটাই সাফ করে দেয়। হরিদেবপুর থানার পুলিশ এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

thief Bizzare
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy