সিঁড়ি ভেঙে পড়ার মুহূর্তের বর্ণনা দিচ্ছে সোহম দাস। নিজস্ব চিত্র।
দশম শ্রেণির ছাত্রের জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িতে চলছিল পায়েস, মাংস রান্নার তোড়জোড়। দুপুরে স্নান করার জন্য সেই ছাত্র তেতলা থেকে দোতলায় নামার সময়ে অকস্মাৎ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল সিঁড়ি। জন্মদিনে অল্পের জন্য বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেলেও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা আটকে রইল সে। শেষ পর্যন্ত দমকল এসে তাকে উদ্ধার করে। তবে জন্মদিন পালন আর করা হয়নি টাকি বয়েজ় স্কুলের ছাত্র সোহম দাসের। এমনকি, সারা দিন খাওয়াটুকুও জোটেনি তার।
মধ্য কলকাতার ৩৬ নম্বর মহাত্মা গান্ধী রোডে সোমবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ একটি তেতলা বাড়ির সিঁড়ির বেশির ভাগ অংশ ভেঙে পড়ে। খবর পেয়ে দমকল এসে মই দিয়ে তেতলা থেকে বাড়ির বাসিন্দাদের উদ্ধার করে। নামিয়ে আনা হয় একটি পোষ্য কুকুরকেও। কলকাতা পুরসভা ও পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৬ সালে ওই বাড়িটিকে বিপজ্জনক ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু শহরের আরও বহু বিপজ্জনক বাড়ির মতো সেখানেও বিপদ মাথায় নিয়ে বসবাস করছিলেন লোকজন। এ দিন ঘটনাস্থলে এসে মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, কলকাতা পুরসভা বাড়িটির অবস্থা পরীক্ষা করে দেখবে। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত ওই বাড়ির বাসিন্দাদের বিকল্প আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
ঘটনাস্থলে এসে কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘ছ’জন ধ্বংসস্তূপে আটকে ছিলেন। পুলিশ ও দমকল দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করেছে। কারও কোনও ক্ষতি হয়নি।’’
বাড়িটির বাসিন্দারা জানান, তেতলার বাসিন্দা সোহমের চোখের সামনেই ধসে পড়ে সিঁড়ির অংশ। ঘটনার মুহূর্তটি মনে করে আতঙ্কিত, সোহমের মা ডালিয়া বলেন, ‘‘যে জায়গায় ছেলে আটকে ছিল, সেখান থেকে সোজা একতলায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। আজ ছেলের জন্মদিন। কপালজোরে রক্ষা পেয়েছে।’’ দশম শ্রেণির ছাত্র সোহম বলে, ‘‘স্নান করতে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়েই দেখি, ঝুরঝুর করে বালি ঝরছে। তখন আমি সবেমাত্র দোতলার দিকের সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করেছি। আচমকাই চোখের সামনে আড়াই তলা থেকে সিঁড়িটা ভেঙে পড়ল। ভয়ে চুপ করে ওই জায়গাতেই অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম।’’
ওই বাড়ির একতলার বাসিন্দা, সোহমদেরই আত্মীয় আয়ুস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। দুর্ঘটনার পরে পুরসভার তরফে বাড়িটি খালি করিয়ে দেওয়ায় সব কিছু ঘরে রেখেই বেরিয়ে আসতে হয়েছে তাকেও।
দুর্ঘটনার পরে আয়ুস্মিতা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘‘সামনে পরীক্ষা। ভিতরে বইপত্র-নোট সব রয়ে গিয়েছে। এ সময়ে এক দিনও লেখাপড়া বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। সেখানে কত দিনে আবার পড়তে বসতে পারব, জানি না।’’
সোহমের মা বাড়ির বাইরের ফুটপাতে রুটির দোকান চালান। আয়ুস্মিতার বাবা সিভিক ভলান্টিয়ার। মোটামুটি নিম্নবিত্তপরিবারের বসবাস ওই বিপজ্জনক বাড়িতে। তাঁদের অভিযোগ, পাশেই একটি সিনেমা হল ভেঙে বাণিজ্যিক বহুতল তৈরি করার কারণে পাইলিংয়ের কাজের জন্য বাড়িটি কাঁপত। যদিও সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে নির্মাণকারী সংস্থার দাবি, কলকাতা পুরসভার নিরাপত্তার সব নিয়ম মেনেই নির্মাণকাজ হচ্ছে।
বাড়িটির বাসিন্দারা জানান, তাঁরা রেন্ট কন্ট্রোলে ভাড়া দেন। মালিকপক্ষ বাড়ি সারাই করতে কোনও উৎসাহ দেখান না। কিন্তু কেন এ ভাবে বিপজ্জনক বাড়িতে বসবাস বন্ধ করায় উদ্যোগী হবে না পুরসভা?
স্থানীয় ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘একাধিক বার নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও ওখান থেকে বাসিন্দাদের সরানো যায়নি। আমপানের সময়েও তাঁরা সরেননি। আমরা তো কাউকে বাড়ি থেকে বার করে দিতে পারি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy