Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Dead Body Missing

কার ‘ভুলে’ মর্গ থেকে হঠাৎ উধাও বন্দির দেহ? তরজা এসএসকেএম বনাম পুলিশের

মর্গ থেকে কী ভাবে এক জনের দেহ ‘উধাও’ হয়ে গেল, তা নিয়ে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, উভয়ের ভূমিকাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছেন।

representational image

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:২২
Share: Save:

পুলিশের তরফে মৃতের পরিজনদের জানানো হয়েছিল, ময়না তদন্তের পরে তাঁদের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে। সেই মতো এসএসকেএমের মর্গের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। কিন্তু প্রায় সারা দিন কেটে যাওয়ার পরে তাঁদের জানানো হয়, দেহ বদল হয়ে গিয়েছে! তাই দেওয়া সম্ভব নয়!

মর্গ থেকে কী ভাবে এক জনের দেহ ‘উধাও’ হয়ে গেল, তা নিয়ে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, উভয়ের ভূমিকাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছেন। ফরেন্সিক মেডিসিন (যে বিভাগের দায়িত্বে থাকে ময়না তদন্ত) বাদ দিয়ে অন্য বিভাগের তিন জন সিনিয়র চিকিৎসক, হাসপাতালের এক জন প্রশাসনিক আধিকারিক এবং পিজির একটি অ্যানেক্স হাসপাতালের সুপারকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তদন্ত করতে বলা হয়েছে পুলিশকেও।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত নবমীর দিন, অর্থাৎ, ২৩ অক্টোবর। ওই দিন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি বাবলু পোল্লের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের সুরতহাল হওয়ার কথা ছিল। সেই কারণে ওই বন্দির পরিবারের সদস্যদের এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে আসার জন্য বলা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের ওই সুরতহাল করার কথা ছিল কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ ডিভিশনের এক সহকারী নগরপালের। জানা যাচ্ছে, মর্গে অপেক্ষা করেও বাবলুর দেহ দেখতে না পেয়ে ওই পুলিশ আধিকারিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তা বিস্তারিত ভাবে জানান। এর পরেই হাসপাতালের তরফে বিষয়টি জানানো হয় ভবানীপুর থানার পুলিশকে।

কী ভাবে মর্গ থেকে মৃতদেহ উধাও হল, তা নিয়ে শুরু হয় চাপান-উতোর। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, মর্গ-সহ হাসপাতালের কর্মীদের ভুলেই ওই ঘটনা ঘটেছে। এক জনের দেহ অন্য জনের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে কোনও রকম শনাক্তকরণ ছাড়াই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবার পাল্টা দাবি, শুধু ময়না তদন্ত করার দায়িত্ব ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকের। কিন্তু, দেহ ঠিক মতো শনাক্তকরণ করে হস্তান্তর করার দায়িত্ব পুলিশের। সেই কাজে ভুল থেকেই এমন কাণ্ড ঘটেছে।

সূত্রের খবর, বাড়িওয়ালাকে খুনের ঘটনায় সাজা পেয়ে গত ১১ বছর ধরে জেলে ছিল আমতার বাসিন্দা বাবলু। প্রথমে হাওড়া জেলে থাকলেও পরে তাকে প্রেসিডেন্সি জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। জানা যাচ্ছে, শারীরিক অসুস্থতার জন্য বেশ কয়েক দিন জেল হাসপাতালে ভর্তি ছিল বাবলু। গত ২০ অক্টোবর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসার পরে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিয়ম অনুযায়ী, বাবলুর দেহ মর্গে পাঠানো হয়।

সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, মর্গের রেজিস্টারে বাবলুর নাম রয়েছে। পাশাপাশি, ২০ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ওই মর্গে যতগুলি দেহ এসেছে বা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে কিংবা এখনও রয়ে গিয়েছে, তার সঙ্গে রেজিস্টারের সংখ্যার মিল রয়েছে। জানা গিয়েছে, ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ওই মর্গ থেকে প্রায় ১৪টি দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।

সূত্রের খবর, পুলিশের তরফে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে বলা হয়, তাদের মৃত সদস্যের ছবি পাঠানোর জন্য। সবাই তা পাঠালে দেখা যায়, এক জনের পাঠানো ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে মর্গে থাকা মহেশতলার বাসিন্দা অভিজিৎ মজুমদারের। তা থেকে পুলিশের অনুমান, অভিজিতের সঙ্গেই বাবলুর দেহ বদল হয়েছে। লালবাজার জানিয়েছে, রহস্য কাটাতে অভিজিতের সঙ্গে তারই পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হতে পারে। তা হলেই বোঝা যাবে, ওই পরিবারের হাতে ভুল করে বাবলুর দেহ দেওয়া হয়েছে কি না।

অন্য দিকে, ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মর্গে ডিউটিতে কারা ছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশ। পাশাপাশি বাবলুকে জরুরি বিভাগে আনা থেকে মর্গে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সব কিছুর সিসি ক্যামেরার ফুটেজও পরীক্ষা করা হচ্ছে। বুধবার বাবলুর স্ত্রী ভবানীপুর থানায় একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। যদিও সেটির ভিত্তিতে এখনও কোনও মামলা রুজু করা হয়নি। বাবলুর ভাগ্নি মিতালি হাজরা জানান, তাঁর মামা কোথায় রয়েছেন, কী অবস্থায় রয়েছেন, সে সব খুঁজে বার করার জন্য পুলিশ-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, পুলিশ এবং প্রশাসন প্রকৃত ঘটনা চাপা দিতে চাইছে।

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy