যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠক চলাকালীন এক ছাত্র টেবিলে উঠে বসে আছেন। শুক্রবার। ছবি: সংগৃহীত।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে গত বছরের অগস্টে র্যাগিংয়ের জেরে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি কবে কার্যকর হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এর আগের কর্মসমিতির (ইসি) বৈঠকে দোষীদের শাস্তির যে সুপারিশ ‘অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি’ করেছিল, তা গৃহীত হয়। বিষয়টি শুক্রবারের কর্মসমিতির বৈঠকে নিশ্চিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিযুক্ত কয়েক জন ছাত্র-সহ পড়ুয়াদের একাংশ ওই বৈঠকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য-সহ কর্মসমিতির অন্য সদস্যদের ঘেরাও করেন। তাঁদের দাবি, তদন্ত কমিটির সামনে দেওয়া সাক্ষ্যের বিস্তারিত তথ্য ভিডিয়োগ্রাফি-সহ দেখাতে হবে। কেন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তা জানাতে হবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। শেষে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার দাবি মেনে নেওয়া হয়। সাক্ষ্য দানের তথ্য নথি-সহ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। রাত আড়াইটেরও পরে ঘেরাও তুলে নেওয়া হয়।
সূত্রের খবর, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার পরে বিষয়টি ফের অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটির কাছে যাবে। ফলে, অভিযুক্তদের শাস্তি কবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। আপত্তি উঠেছে ঘেরাও সংস্কৃতি নিয়েও। শুক্রবার রাতে দেখা যায়, কর্মসমিতির বৈঠক চলাকালীন এক ছাত্র সেখানে একটি টেবিলে উঠে বসেছেন। শনিবার মৃত ছাত্রটির বাবা বলেন, ‘‘ছেলের মৃত্যুর সুবিচার এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে মেলেনি। উপরন্তু, যারা এই নিধনের কাজে জড়িত ছিল, তাদের শাস্তি থেকে মুক্তি দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যারা ঘেরাও কর্মসূচি চালাচ্ছে, তাদের মধ্যে অনেকে আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী। তবে আইনের প্রতি আস্থা রয়েছে। আদালতে মামলা চলছে।’’
অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত এ দিন বলেন, ‘‘যা হচ্ছে, সবটাই আইন মাফিক হচ্ছে। ছাত্রেরা আত্মপক্ষ সমর্থনের যে দাবি তুলেছিল, তা-ও আইন অনুযায়ী হচ্ছে।’’ তিনি জানান, এর পরে যিনি বা যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের শোকজ় করা হবে। তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। তাঁরা তদন্ত কমিটির কাছে যা বলেছিলেন, তার রেকর্ডিং কর্তৃপক্ষ দিতে বাধ্য। এর পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ভাস্কর বলেন, ‘‘শোকজ়ের সময়সীমা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করা হবে।’’
যাদবপুরের শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় এ দিন বলেন, ‘‘র্যাগিংয়ের ঘটনার প্রায় এক বছর পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কোনও কার্যকর পদক্ষেপ করতে না পেরে থাকলে পরবর্তী প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা আসার আগে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে।’’
কর্মসমিতির সদস্যদের ঘেরাও করা নিয়ে কর্মসমিতিতে উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রতিনিধি এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডল এ দিন বলেন, ‘‘এই ঘৃণ্য অপরাধের বিচার করতে গিয়ে আমরাও প্রায় র্যাগিংয়েরই শিকার হচ্ছি। আরও উদ্বেগের বিষয় হল, যে বা যারা র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত, তাদেরও কেউ কেউ ঘেরাও করতে এসেছিল।’’ কর্মসমিতিতে রাজ্যপালের প্রতিনিধি কাজী মাসুম আখতার বলেন, ‘‘এই ঘেরাও সংস্কৃতি চলতে পারে না। র্যাগিংয়ের মতো ঘৃণ্য কাজে যারা জড়িত, তাদের শাস্তি দেওয়ার
ক্ষেত্রে এত দীর্ঘসূত্রতাও মেনে নেওয়া যায় না।’’
এ দিকে, এ দিনের কর্মসমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পিএইচ ডি-তে ভর্তি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে একটি কমিটি গড়ে তদন্ত করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy