অভিযোগ, অনেক বাস বেসরকারি ব্যবস্থায় বর্ধিত ভাড়ায় চলে। নয়তো সম্পূর্ণ রুটে চালানো হয় না। —প্রতীকী চিত্র।
যা ছিল, তা গিয়েছে। এখন যা নেই, দৌড় শুরু হয়েছে তার পিছনে।
এক কথায় সরকারি বাসের হাল এখন এই রকমই। সরকার তথা পরিবহণ দফতরের কাছে বাস যথেষ্টই ছিল। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে সেই সব বাস দেওয়া হয়েছিল বেসরকারি মালিকদের। অভিযোগ, এখন সেই সব বাস বেসরকারি ব্যবস্থায় বর্ধিত ভাড়ায় চলে। নয়তো সম্পূর্ণ রুটে চালানো হয় না। এর জেরে যাত্রীরা হেনস্থার মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে সমাজমাধ্যমেও সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিশেষত সরকারি বাস পিপিপি মডেলে বিএফও (বাস ফ্রান্চাইজ়ি অপারেটর)-দের দেওয়ার পরে অনেকেই মনে করছেন, পুরনো বাসগুলি তবু সম্পূর্ণ রুটে চলাচল করত। যা এখন চলছে না।
বিএফও প্রসঙ্গে সমাজমাধ্যমে কেউ লিখেছেন, কামালগাজিতে দাঁড়িয়ে বারুইপুরগামী সি-২৬ রুটের বাস জানিয়ে দিয়েছে, সেখানেই নামতে হবে। আবার টালিগঞ্জ-বারাসতগামী ডি-১এ রুটে অর্ধেক রাস্তা গিয়ে কন্ডাক্টর জানিয়ে দিয়েছেন, বাসটি বারাসত যাবে না। সি-৮ রুটের বাসটি বিএফও-দের হাতে গিয়ে কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, গত বছর জুন-জুলাই মাসে সি-২৬ রুটের ১৪টি বাস বিএফও-কে দিয়ে দেওয়া হয়। হাওড়া থেকে বারুইপুরের মধ্যে চলা ওই রুটটি লাভজনক ছিল বলেই আধিকারিকদের দাবি। আবার টালিগঞ্জ-বারাসতের মধ্যে চলাচলকারী ডি-১এ রুটের ১২টি বাস বিএফও-কে দেওয়া হয়। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বাসমালিকেরা লাভজনক রুট নিয়েও পরিষেবা দিতে পারছেন না। কাটা রুটে বাস চলছে। দফতরের হাতে যখন ছিল, তখন এক ডিপো থেকে বেরিয়ে নির্ধারিত ডিপো পর্যন্ত বাসগুলি চলত। আমরা যত দূর জানি, দু’টি রুটেই সরকারি ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু দু’টি রুটেই বাস সম্পূর্ণ দূরত্ব চলে না বলে অভিযোগ এসেছে।’’
লাভজনক রুট পিপিপি মডেলে পাঠিয়ে আখেরে যে যাত্রীদের সমস্যা দূর হয়নি, তা মানছেন অনেকেই। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, অজ্ঞাত কারণে জোকা-বারাসতের মধ্যে চলাচলকারী সি-৮ রুটের বাস বিএফও ফিরিয়ে দিয়েছে পরিবহণ দফতরকে। ১৮টি বাস ওই রুটে ছেড়েছিল পরিবহণ দফতর। আবার এসপ্লানেড-আমতা রুটে বিএফওকে দেওয়া ১২টি বাসও ফিরে এসেছে পরিবহণ দফতরে।
সামগ্রিক এই ঘটনায় দফতরের কর্মী-আধিকারিকদের অনেকেই মনে করেন, এক দিকে যেমন প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে, তেমনই বহু বাস কার্যত অকারণে দফতর থেকে বেরিয়ে গিয়ে সরকারি পরিষেবাকে দুর্বল করেছে। যদিও বিএফও-কে বাস দেওয়ার সিদ্ধান্তের পিছনে সরকারি বাসকর্মীদের একাংশের কর্তব্যে গাফিলতিও অন্যতম কারণ বলেও মনে করে পরিবহণ দফতর।
বিএফও-র বাসমালিকদের আবার দাবি, যে সব গাড়ি তাঁদের দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি পুরনো প্রযুক্তির। অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হত। যে কারণে অনেক বাস পথে নামানো যায়নি। অনেক বাস ফেরত পাঠাতে হয়েছে। পরিবহণ দফতরই ওই সব বাসের উপযুক্ত সংস্কার করেনি। বিএফওর তরফে টিটু সাহার দাবি, ‘‘গণপরিবহণে বিএফও ভবিষ্যৎ হতে পারে যদি উন্নত প্রযুক্তির বাস পাওয়া যায়। ছয় সিলিন্ডারের যে বাস দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিতে জ্বালানির খরচ বিপুল। আয়-ব্যয়ের বিরাট ফারাক হচ্ছিল। চার সিলিন্ডারের বাস পেলে বিএফও ভাল কাজ করতে পারবে।’’
যদিও পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর দাবি, বিএফও কেন্দ্রের প্রকল্পের আওতায় তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘যাত্রীর অভাবে, জ্বালানির অতিরিক্ত খরচের কারণে ওই প্রকল্প ঠিক মতো চলছে না। এ বার রাজ্য নতুন প্রকল্প তৈরি করবে। কেন্দ্রের প্রকল্প নেওয়া হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy