Advertisement
E-Paper

তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে ৪৫টি বাজ! সতর্কতাই ভরসা

২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে রাজ্যে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ। গত বছরেও বাংলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ২৮ জনের। ঘিঞ্জি এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কম হলেও বাদ যায়নি কলকাতাও।

বজ্রপাতের হার ক্রমশ বাড়ছে।

বজ্রপাতের হার ক্রমশ বাড়ছে। —ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৪ ০৭:২৮
Share
Save

বজ্রপাতের বিপদ কি আরও বাড়বে এ বছর? গত কয়েক বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান কি ছাপিয়ে যাবে চলতি বছর? সোমবার সন্ধ্যায় তিন ঘণ্টার ঝড়বৃষ্টিতে শুধু কলকাতাতেই ৪৫টি বাজ পড়েছে— আবহাওয়া দফতর এ কথা জানানোর পরেই উঠছে এই প্রশ্ন। যদিও এতে হতাহতের খবর মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মেলেনি। আশঙ্কা বাড়িয়ে পুলিশ জানাচ্ছে, ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে রাজ্যে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা
বেড়েছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ। গত বছরেও বাংলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ২৮ জনের। ঘিঞ্জি এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কম হলেও বাদ যায়নি কলকাতাও।

প্রশ্ন উঠছে, এই পরিস্থিতিতে বজ্রপাতের আশঙ্কার কথা আবহাওয়া দফতর থেকে জানানো সত্ত্বেও কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন? অভিযোগ, বজ্রগর্ভ মেঘের সঙ্গে বৃষ্টিপাতের সময়ে ফাঁকা জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে— এটুকু প্রচার করেই দায় সারা হচ্ছে। এখনও বজ্রপাতের আগাম অনুমান করে সতর্ক করার মতো পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে ‘লাইটনিং সেন্সর’ ব্যবস্থা তৈরি হলেও অনেক সময়ে সেই সূত্রে খবর আসছে বজ্রপাতের মাত্র দশ মিনিট আগে! ফলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যাচ্ছে না। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস যদিও বলেন, ‘‘সোম-মঙ্গলবারে বজ্রগর্ভ মেঘ-সহ ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। বুধ-বৃহস্পতিবার কিছুটা কম হলেও শুক্রবার আবার ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এখন এমনিতেই কালবৈশাখীর সময়। তাই বজ্রপাতের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েই আছে।’’

ফলে এই সময়ে বাড়তি সতর্ক থাকার কথা জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। তারা জানাচ্ছে, এই সময়ে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে উঁচু বাড়ি, বহুতল বা গাছের আশপাশ থেকে সরে আসতে হবে। দ্রুত কোনও পাকা ছাদের নীচে আশ্রয় নিতে হবে। আবহাওয়া দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পাকা ছাদের নীচে থাকলেও ধাতব জিনিসের ব্যবহার ঝড়বৃষ্টির সময়ে এড়িয়ে চলতে হবে। শৌচাগার বা বেসিনের ধাতব কল থেকেও বিপদ হতে পারে। বাড়িতে লোহার জানলা থাকলে তার সামনে থেকেও সরে আসা উচিত। মাটিতে শোয়া চলবে না। দরকারে খাটে শোয়া যেতে পারে। কারণ, খাট বিদ্যুতের কুপরিবাহী।’’

আবহাওয়াবিদেরা বৃষ্টিতে ভেজার নামে বা বৃষ্টির ছবি তুলতে ছাদে উঠে মোবাইল ব্যবহার না করারও পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁদের পরামর্শ, কোনও ফাঁকা জায়গায় থাকলে মাটিতেই হাঁটু মুড়ে বসে পড়তে হবে। যাতে আশপাশের কোনও কিছুর থেকে নিজের উচ্চতা বেশি না হয়। বজ্রাঘাতে আহত কাউকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যাপারেও জোর দিতে বলছে লালবাজার। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট কাউকে ধরতে যে ভয় থাকে, এ ক্ষেত্রে তার কোনও কারণ নেই বলে পুলিশের দাবি। কারণ, বজ্রাঘাতে আহত এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, সময়ে হাসপাতালে নিয়ে এলে হয়তো বজ্রাঘাতে আহতকে চিকিৎসা দেওয়া যেত। কিন্তু নিজেরা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারেন, এই ভেবে ভয়েই কেউ এগোননি।’’

গত সেপ্টেম্বরে ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে মোবাইলে কথা বলতে বলতে ছাদে উঠে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছিল রিজেন্ট পার্কের কৌশিক করের। বছর ২৪-এর ওই যুবকের পরিবার এ দিন জানায়, মোবাইলটা ঝলসে পাশেই পড়েছিল। কৌশিক যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, সেখানকার ছাদও ফুটো হয়ে গিয়েছে। এ ভাবেও যে মৃত্যু হতে পারে, এখনও যেন বিশ্বাসই করে উঠতে পারেনি তাঁর পরিবার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lightning IMD Thunderstorm

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}